ক্যান্সার এর সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত । অনেক ধরনের ক্যান্সারই আছে । এই রোগে যে আক্রান্ত হয়েছে তাকে না জানি কতই না ভুগতে হয়েছে । বলা চলে একটা ভয়ংকর রোগ । তাহলে প্রথম ক্যান্সার এর সংঙ্গা জেনে আসি ।
ক্যান্সার কি ?
ক্যান্সার হলো একটি গুরুতর রোগ, যা শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের কারণে ঘটে। সাধারণত, শরীরের কোষগুলো নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৃদ্ধি ও বিভাজন ঘটে। কিন্তু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে কোষগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তনের ক্যান্সার, রক্তের ক্যান্সার (লিউকেমিয়া), এবং মস্তিষ্কের ক্যান্সার। এর চিকিৎসা প্রক্রিয়া সাধারণত ক্যান্সারের ধরন ও অবস্থার ওপর নির্ভর করে, এবং সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ সম্পর্কে একটু পরেই আসছি ।
ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলো কি কি ?
ক্যান্সারের লক্ষণগুলো এর ধরন, অবস্থান এবং রোগের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে:
অস্বাভাবিক গিঁট বা ফোলা: শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক গিঁট বা ফোলা হতে পারে, যা সাধারণত ব্যথাহীন হয়। অথবা বলা যায় অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড ।
অনিয়ন্ত্রিত ওজন হ্রাস: অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে, যা সাধারণত ক্যান্সারের একটি বড় লক্ষণ।
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি: কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা।
ত্বকের পরিবর্তন: ত্বকের রঙ পরিবর্তন, ঘা তৈরি হওয়া, তিল বা আঁচিলের আকৃতি বা রঙের পরিবর্তন।
অতিরিক্ত রক্তপাত বা ক্ষত সারতে সময় লাগা: আঘাত বা ক্ষত সারতে অনেক সময় নেওয়া বা কোনো কারণে রক্তপাত হওয়া।
দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ব্যথা: বিশেষত ফুসফুস বা গলার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলার সমস্যা হতে পারে।
হজম সমস্যা বা গলার মধ্যে খাবার আটকে যাওয়া: গলা, পাকস্থলী বা অন্ত্রের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
মল বা প্রস্রাবের সময় পরিবর্তন: দীর্ঘদিন ধরে মল বা প্রস্রাবে কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।সেটা ঘন ঘন হতে পারে ।
খাদ্য গিলতে সমস্যা: বিশেষ করে গলার বা খাদ্যনালির ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গায়ে বা হাড়ে ব্যথা: হাড়ের ক্যান্সার বা ক্যান্সারের মেটাস্টেসিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে।
জ্বর: আমরা কোন না কোনভাবে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি । তবে যদি ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে ঘন ঘন জ্বরের দেখা মিলবে । এটা সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার এর ক্ষেত্রে দেখা যায় ।
এগুলো ছাড়াও ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যদি কারও মধ্যে এমন লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারণ : ক্যান্সার এর কারণ কি ? আপনি নিজেই জানেনা আপনার শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধলো কি করে । কোন কারণই ধরতে পারছে না । আবার আপনার শরীরে ক্যান্সার কি না সেটাও কিন্তু জানেন না বা বুঝতে পারছেনা না । অনেকেই বুঝতে পারে না । এই কারণে ক্যান্সার এর কারণ কি তা এই লেখায় দিচ্ছি না ।এ সম্পর্কে পরবর্তী পর্যায়ে একটা লেখা আসবে ।
ক্যান্সার এর প্রতিকার গুলো কি কি ?
ক্যান্সারের প্রতিকার নির্ভর করে এর ধরন, অবস্থান, এবং রোগের অগ্রগতি বা পর্যায়ের ওপর। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ক্যান্সার কোষগুলোর বৃদ্ধি থামানো বা ধ্বংস করা এবং রোগীর জীবন মান উন্নত করা। প্রধানত ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়:
১. সার্জারি (অস্ত্রোপচার):
ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত টিউমার বা ক্যান্সারযুক্ত অংশটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে বাদ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি সাধারণত তখন ব্যবহৃত হয়, যখন ক্যান্সার শরীরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে।
২. কেমোথেরাপি:
কেমোথেরাপি হলো ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার একটি পদ্ধতি। এই ওষুধগুলো ক্যান্সারের কোষগুলোর দ্রুত বিভাজন ও বৃদ্ধি বন্ধ করে। এটি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধেও কার্যকর হতে পারে। তবে কেমোথেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যেমন বমি, ক্লান্তি, চুল পড়া ইত্যাদি।
৩. রেডিয়েশন থেরাপি (তেজস্ক্রিয় থেরাপি):
রেডিয়েশন থেরাপি হল উচ্চ শক্তির তেজস্ক্রিয় রশ্মির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা। এটি ক্যান্সারের কোষগুলোকে সরাসরি আঘাত করে এবং কোষের বিভাজন প্রক্রিয়া থামায়।
৪. ইমিউনোথেরাপি:
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৈরি করা হয়। এটি ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে।
৫. হরমোন থেরাপি:
কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে (যেমন স্তন বা প্রস্টেট ক্যান্সার) হরমোনগুলো ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হরমোন থেরাপি হরমোনের প্রভাব বন্ধ করে বা কমিয়ে ক্যান্সারের বৃদ্ধি ধীর করতে সাহায্য করে।
৬. লক্ষন-ভিত্তিক চিকিৎসা:
ক্যান্সারের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে এই থেরাপি দেওয়া হয়, যেমন ক্যান্সারের কোষের নির্দিষ্ট প্রোটিন বা জিনকে লক্ষ্য করে ওষুধ দেওয়া।
৭. স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট:
স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে শরীরে নতুন এবং সুস্থ কোষ সঞ্চার করা হয়, বিশেষত লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা জাতীয় রক্তের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হতে পারে।
৮. প্যালিয়েটিভ কেয়ার (সহানুভূতিশীল যত্ন):
যখন ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব না হয়, তখন প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মাধ্যমে রোগীর ব্যথা ও উপসর্গগুলোর চিকিৎসা করা হয়। এর মাধ্যমে রোগীর জীবন মান উন্নত করার চেষ্টা করা হয়।
৯. ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল:
কিছু ক্যান্সারের জন্য নতুন ধরনের চিকিৎসা বা ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়, যা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নামে পরিচিত। রোগীরা তাদের সম্মতিতে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন এবং নতুন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যেমন:
তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করা।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
সূর্যালোক থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখা।
প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ করা
সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করলে অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব, তবে এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ও নিয়মিত চেকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।