গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার উপায় ।

বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাপনে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা একটি সাধারণ ও জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই প্রতিদিন গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণায় ভোগেন। এটি শুধু অস্বস্তিকরই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে অজীর্ণতা, আলসার এমনকি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের কারণও হতে পারে। তবে নিয়মিত জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।



Gastric causes and treatment


 গ্যাস্ট্রিক কি ?



গ্যাস্ট্রিক কি আমরা সকলেই জানি । তবে এটার একটা সঙ্গায়নের প্রয়োজন। সেটি হলো পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, ঢেঁকুর উঠা ইত্যাদি যাবতীয় লক্ষণের যে যোগসূত্র তাই হল গ্যাস্ট্রিক। আর তা হলে যে পেটে কতই না অসহ্যকর যন্ত্রণা হয় । তবে এটা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যখন পেট ব্যথা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। তবে সচরাচর যে পেট ব্যথা হয় তা আবার গ্যাস্ট্রিক নয় ।



Gastric causes and problem




গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ গুলো কি কি ?



লক্ষণ: যে লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝা যাবে এটা গ্যাস্ট্রিক । তার এইগুলো অন্যতম।





পেট ব্যথা: গ্যাস্ট্রিকে অন্যতম লক্ষণ পেট ব্যথা তার কথা আগেই উল্লেখ করেছি । তবে শুধু পেট ব্যথা হলেই যে সেটা গ্যাস্ট্রিক তা তো নয় । এই ব্যথা বিশেষত খালি পেটে অনুভূত হয় । 




জ্বালাপোড়া: গ্যাস্ট্রিকের আরও লক্ষণ হল পেট জ্বালাপোড়া করা । আপনার মনে হবে এত ঝাল খেয়েছি যে এত জ্বালাপোড়া করতেছে ।




ক্ষুধামন্দা: ক্ষুধা মন্দাও একটি লক্ষণ । অন্যতম লক্ষণের সাথে এটা হলে তখন বুঝবেন এটা গ্যাস্ট্রিক।




বদহজম : বদহজম কি তা তো সকলেই জানেন । এটাও একটা লক্ষণ।





পেট ফাঁপা: আপনি যদি এখন কিছু খান তবে ঘন্টা ৩-৪ পর মনে হবে পেট এখনও ভরা। মানে আপনার পেট ফোলা বা ফোলাভাব থাকবে ।




বমি: অন্য সকল লক্ষণ ছাড়াও বমি বমি ভাব দেখা যেতে পারে । অথবা বমিও হতে পারে,অথবা দুটোই হতে পারে ‌।





পেটে গ্যাস: পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে ‌। এই গ্যাস বিরক্তকর ‌ ।




এছাড়াও আরও অন্যান্য লক্ষণ তো আছেই।




 গ্যাস্ট্রিক কি কি কারণে হতে পারে ?



গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে একাধিক কারণের জন্য। কিছু মৌলিক কারণ হতে পারে:



নষ্ট খাদ্য : অতিরিক্ত বা নষ্ট খাদ্য করলে পেটে গ্যাস হতে পারে।




পাচন সমস্যা: পাচনের সমস্যা হলে খাদ্যটি ঠিকভাবে পচন হয়না এবং গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে।




অতিরিক্ত কফি বা চা পান: অতিরিক্ত কফি বা চা পানে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে। তা যদি খালি পেটে পান করা হয় তবে এতে পাকস্থলির দেয়ালে অ্যাসিড জমা হয়।





ধূমপান: ধূমপানের ফলে পেটে গ্যাস গঠন হতে পারে। সেই সাথে অ্যালকোহল । 




তেল-ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার: এগুলো হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়। এরা তার এর অন্যতম উৎস ।





অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া: সময়মতো না খেলে পাকস্থলিতে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে গ্যাস্ট্রিক হয়।





পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া: শরীরের হজমপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে।



গ্যাস্ট্রিকের ফলে কি ক্যান্সার হতে পারে ?


সাধারণভাবে, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে ক্যান্সার হওয়া একটি দূরাদৃষ্টি প্রস্তুতি নেই। তবে, একটি মাত্র এই সমস্যার বিশেষ ধরণ, যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার বা স্টোমাক ক্যান্সার হয়ে উঠতে পারে, তাও আছে।





গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার উপায়


গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার উপায় তো আছে , তা সাধারণ ভাবে আপনাদের জন্য প্রয়োজন।





স্বাস্থ্যকর খাবার: অতিরিক্ত ও অশুদ্ধ খাদ্য থেকে সমস্যা হতে পারে। স্বাস্থ্যকর ও সঠিক খাবার নিতে চেষ্টা করুন।খাবার গ্রহণে নিয়ম মেনে চলা


প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়া করুন।




অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন।




সকালে ভারী নাস্তা, দুপুরে মাঝারি পরিমাণে খাবার এবং রাতে হালকা খাবার গ্রহণ করুন।




দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন।



খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন:


ঝাল, ভাজা, ফাস্ট ফুড, প্রসেসড খাবার পরিহার করুন।




আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল বেশি খান।




দই, ছাতু, নারকেল পানি ইত্যাদি হজমে সহায়ক।




পানি পূর্বক খাওয়া: ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য খাওয়ার সময়ে পানি গ্রহণ করা সাহায্যকারী হতে পারে। তাছাড়াও দৈনিক ৭-৮ গ্লাস পানি পান করা।





খাওয়ার পরে হাঁটবার জন্য: ভালোভাবে খাওয়ার পরে হাঁটবার জন্য চেষ্টা করুন, এটি পাচনে সাহায্য করতে পারে। হালকা হাঁটা, যোগ ব্যায়াম বা প্রাণায়াম হজম শক্তি বাড়ায়।




প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে হজমে সহায়তা হয় ও গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে থাকে।




ধূমপান এবং অতিরিক্ত কফি সীমাবদ্ধ করুন: ধূমপান এবং অতিরিক্ত কফি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার লক্ষণ বাড়াতে পারে, এইগুলি সীমাবদ্ধ করা উচিত ।





প্রোবায়োটিক খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট নিন: প্রোবায়োটিক খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া এই সমস্যা উপশমে সাহায্যকারী হতে পারে।



যা বাদ দেয়া: 


দুধ আপাতত বাদ রাখুন। ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন। সফট ড্রিংকস পান করা পরিহার করা উচিত।





এখন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার উপায় আরও কি আছে ?




হ্যা,আছে । তা নিম্নরুপ ।




পুদিনা: পুদিনা পাতা নিয়মিত খেলে পেট ফাঁপা সংক্রান্ত সমস্যা দূরীভূত হয়। পেটে গ্যাস জমতে বাধা দেয়। তাই এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই।





তুলসীপাতা: তুলসী পাতা চেনেন না এমন কেউ নেই। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে আপনি তুলসী পাতার নির্যাস থেকে উপকার পেতে পারেন।





আদা: আদা অনেক রোগের উপসমে ব্যবহৃত হয়। তারমধ্যে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একটি । বদহজম,বমি বমি ভাব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদার রস ও মধু মিশ্রিত করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। অথবা আদার কুচি গরম পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে কিছু মধু মিশ্রিত করে সেবন করতে পারেন। আবার লবণ মিশিয়ে আদা খেতে পারেন ।



কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন?


এটা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় এবং নিচের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:




প্রতিদিন বুকে জ্বালাপোড়া




খাবার খাওয়ার পর বমি হওয়া




ওজন কমে যাওয়া




পেটে ধারাবাহিক ব্যথা




কালো রঙের পায়খানা




ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সতর্কতা




অনেকে গ্যাস্ট্রিক হলেই নিজে থেকেই ওষুধ খান, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত অ্যান্টাসিড গ্রহণের ফলে হজমে সমস্যা বা কিডনির উপর প্রভাব পড়তে পারে।




গ্যাস্ট্রিক একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করলে জটিল রোগে রূপ নিতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক উপায়ে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে আপনি গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সমস্যা গুরুতর হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম