ঘুম মানুষের জন্য আল্লাহর একটি নেয়ামত । আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক চাহিদা । যদি কারো ঘুম না থকত তাহলে শারীরিক প্রশান্তি কি সেটা বুঝত না । সারাদিন খেটে যখন ক্লান্ত তখন ঘুম আমাদের সেই ক্লান্তি দুর করে । সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ বিছানায় যাওয়ার পর কিছুটা সময় নেয় ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা শোয়ার সাথে সাথে ঘুম আসা অনুভব করেন।কিন্তু আপনি কি জানেন এই ঘুমই কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে ? আর কখন হতে পারে সেটা ? তাহলে জেনে নিন ।
![]() |
শোয়ার সাথে সাথে ঘুম আসা – ক্লান্তি নাকি ঘুমের ব্যাধির সংকেত? |
আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া কতটা স্বাভাবিক, এর পেছনের কারণগুলো কী হতে পারে এবং কোন অবস্থায় এটি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কি শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েন ? নাকি দেরিতে ঘুম আসে ? তো এখন প্রশ্ন করতেই পারেন যে দ্রুত বা দেরিতে ঘুম আসাটা শরীরের ক্ষতির সাথে সংযোগ কি ?
হা ভাই , নিশ্চয়ই বিষয়তো একটা আছে । কিন্তু কি সেটা ? ঘুম বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানী মিশেল ড্র্রেপ (Michelle Drerup) কি বলছেন সেটা দেখি । তিনি বলছেন ," খুব দ্রুত ঘুমই আসা ভালো ঘুমের অভ্যাস নয় , বরং উল্টো ঘুমের সমস্যা "। তার এ কথা থেকে কি বুঝলেন ? ঘুম কি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা ? হা ,এমনটা হতেই পারে । তবে এর মানে এই না যে ,ঘুমই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর । আপনাকে বুঝতে হবে বিষয়টা ।
শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া: স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক?
স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষের ঘুম আসতে ১০ মিনিট বা ২০ মিনিট সময় লাগে। এটিকে ঘুমের স্লিপ লেটেন্সি টাইম বলা হয়। যদি কেউ এর আগেই ঘুমিয়ে পড়ে, তবে তা অনেক ক্ষেত্রে শরীরের অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে হতে পারে। তবে বারবার শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া শরীরে অতিরিক্ত অত্যধিক ঘুম ভাব বা ঘুমের অস্বাভাবিকতা নির্দেশ করতে পারে।
একজন মানুষের দৈনিক কতক্ষন ঘুমানো উচিত ?
কেউ বলবে ৪ঘন্টা ,কেউ বলবে ৫ঘন্টা ,কেউবা ৬ঘন্টা ।
কেন শোয়ার সাথে সাথে ঘুম আসতে পারে?
১. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও কাজের চাপ
দীর্ঘ সময় শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপ থাকলে দ্রুত ঘুম আসতে পারে। এটি সাধারণত স্বাভাবিক।
২. ঘুমের অভাব
প্রতিদিন যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তবে শরীর সেই ঘুমের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করে। ফলে শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া শুরু হয়।
৩. ঘুমের ব্যাধি (Sleep Disorder)
কিছু ঘুমের ব্যাধি যেমন নারকোলেপসি, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ইনসমনিয়া এ ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলোতে রোগীরা দিনের বেলাতেও হঠাৎ দিনের বেলা ঘুম অনুভব করেন।
৪. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
অবসাদ (ডিপ্রেশন), উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি) এবং মানসিক চাপও ঘুমের ধরনে প্রভাব ফেলে। এসব অবস্থায় মানুষ কখনও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে, আবার কখনও ঘুমই আসতে চায় না।
৫. ওষুধ বা অ্যালকোহল সেবন
কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যালকোহল বা মাদক ঘুমকে ত্বরান্বিত করে। ফলে মানুষ শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়তে পারে।
আপনার যদি শোয়ার সাথে সাথে ঘুম এসে যায় এতে আপনার ভালো ও খারাপ দুটোই হতে পারে ? কি চমকে গেলেন ? জাস্ট ওয়েট ।
ভালো খবরটি হল আপনি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে পারেন । আর খারাপটা হল আপনার পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না ।
ডাঃ ড্র্রেপ মনে করেন যে, একজন মানুষের ঘুমাতে পাঁচ থেকে বিশ মিনিট সময় লাগতে পারে । এটি গড় হিসেব হলেও প্রত্যেক মানুষের জন্য আলাদা আলাদা হতে পারে ।
তবে একটি বিষয় না বললেই নয় ,আগেই বলেছিলাম দ্রুত ঘুম আসলে খারাপটা হল পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা ঘুমের ঘাটতি হওয়া ।
কখন এটি অসুখের লক্ষণ হতে পারে?
যখন লক্ষণ হতে পারে , বিষয়গুলো খেয়াল করুন
প্রতিদিন নিয়মিত শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া
দিনের বেলায়ও বারবার ঘুমিয়ে পড়া
স্বাভাবিক কাজে ক্লান্তি ও মনোযোগে সমস্যা
ঘুম থেকে উঠে মাথা ভারী লাগা
এগুলো দেখা দিলে এটি একটি ঘুমের সমস্যা বা অন্য কোনো অসুখের লক্ষণ হতে পারে।
কোন কোন অসুখে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে?
নারকোলেপসি – এটি একটি বিরল স্নায়বিক রোগ যেখানে রোগী হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া – ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘুমের গুণগত মান নষ্ট হয়। ফলে দ্রুত ঘুম চলে আসে।
ডিপ্রেশন বা মানসিক রোগ – দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখ বা হতাশা থাকলে ঘুমের ধরন অস্বাভাবিক হয়।
হাইপারসোমনিয়া – এতে রোগীর সারাদিনই অত্যধিক ঘুম ভাব থাকে।
থাইরয়েড ও মেটাবলিক সমস্যা – শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ঘুমের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
ঘুমের সমস্যা নির্ণয় করার উপায় কি ?
ঘুমের সময়কাল পর্যবেক্ষণ করা
ঘুমের মান কেমন, সকালে উঠে কেমন লাগে তা বোঝা
চিকিৎসকের কাছে ঘুমের ডায়েরি বা স্লিপ স্টাডি টেস্ট করানো
দিনের বেলায় কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করা
তাহলে করণীয় কি ?
দ্রুত ঘুম আসা প্রতিরোধে করণীয়
ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন – প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও জাগ্রত হন।
ঘুমের পরিবেশ ঠিক করুন – শান্ত, অন্ধকার এবং আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমান।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন – এগুলো ঘুমে প্রভাব ফেলে।
দিনের বেলা দীর্ঘ ঘুম কমান – ছোট পাওয়ার ন্যাপ নিন কিন্তু দীর্ঘ ঘুম নেবেন না।
মানসিক চাপ কমান – যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা হালকা বই পড়া কাজে আসতে পারে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন – ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া অনেক সময় স্বাভাবিক হতে পারে, তবে নিয়মিত ঘটলে এটি শরীরের ভেতরের ঘুমের ব্যাধি বা অন্য কোনো অসুখের ইঙ্গিত দিতে পারে। আপনার যদি এই অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে তাহলে অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না । শঙ্কিত না হয়ে আপনি চিকিৎসা নিন । সঠিক সময়ে সমস্যার সমাধান করলে সুস্থ ঘুম নিশ্চিত করা সম্ভব।ধন্যবাদ ।
FAQ
প্রশ্ন ১: শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া কি সবসময় অসুখের লক্ষণ?
সবসময় নয়। এটি অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ঘুমের অভাবে হতে পারে। তবে নিয়মিত হলে এটি ঘুমের ব্যাধির লক্ষণ হতে পারে।
প্রশ্ন ২: দিনে বারবার ঘুম আসা কি বিপজ্জনক?
হ্যাঁ। দিনের বেলা ঘুম অনেক সময় স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নারকোলেপসির মতো গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
প্রশ্ন ৩: অত্যধিক ঘুম ভাব কেন হয়?
শরীরে ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, হরমোন সমস্যা অথবা ঘুমের সমস্যা থাকলে এ সমস্যা হয়।
প্রশ্ন ৪: কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
যদি প্রতিদিন শোয়ার সাথে সাথে ঘুম আসা, অত্যধিক ঘুম ভাব, বা দিনের বেলা ঘুম সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।