কোমর ব্যথায় ভুগছেন ? ব্যথায় দিশেহারা ?

কোমর ব্যথা (Back Pain) কি ? 




কোমর ব্যথা একটি অতি পরিচিত সমস্যার নাম । যে কারই হতে পারে । অল্প বয়ষ্ক হতে বয়োঃবৃদ্ধ পর্যন্ত ।‌এর আগে "কোমর ব্যথার কারণ কি ?" শিরোনামে একটা লেখা লিখেছি ‌ চাইলে সেটি দেখে আসতে পারেন । এটি পুরুষ, মহিলা, শিশু এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের মাঝেও দেখা যায়। কেউ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোমর ব্যথায় কষ্ট পান, আবার অনেকের রাতে শোয়ার সময় কোমরে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, এমন কি শুয়ে থাকার সময়ও অনুভত হয়। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর কোমর ব্যথা হওয়া আরও এক বড় কারণ। এ সমস্যার সঠিক সমাধান না করলে তা দীর্ঘদিন কোমর ব্যথা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই কোমর ব্যথা কেন হয়, কোমর ব্যথা হলে কি করা উচিত, কোমর ব্যথার চিকিৎসা এবং কোমর ব্যথার ব্যায়াম সম্পর্কে জানা জরুরি। 



Back pain,কোমর ব্যথায় ভুগছেন এমন একজন ব্যক্তির ছবি, যেখানে ব্যথার স্থান নির্দেশ করা হয়েছে।
কোমর ব্যথার প্রধান কারণ ও সহজ প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা দিতে এই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।




বিস্তারিত জানার আগে আসুন জেনে নেই কোমর ব্যথার কারণ কি ?




কোমর ব্যথার কারণ কি‌ ? (Why Back Pain Happens ?)





অনেকে জানতে চান কোমর ব্যথার কারণ কি । কারণ তো আছে বৈকি ।মূলত জীবনযাপন পদ্ধতি এবং শারীরিক ভঙ্গিমাই এর জন্য দায়ী। তবে যে বিষয়গুলো আপনার জানা প্রয়োজন তা হল : 




বড় কোনো আঘাতের ইতিহাস থাকলে । আপনি যদি কখনো কোন‌ কারণে কোমরে আঘাত পান তাহলে সেটা একটা কারণ ।‌




ক্যান্সার, অস্টিওপোরোসিস, এইডস, দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে তা অন্যতম ‌একটি‌‌ কারণ ।‌



শিশুদের কোমর ব্যথা সাধারণত স্কুল ব্যাগ ও খেলার আঘাতজনিত কারণে।




অল্পবয়সীদের কোমর ব্যথা হয় ভারী ব্যাগ, খেলার আঘাত বা দীর্ঘ সময় বসে পড়াশোনা করার কারণে।




পুরুষদের কোমর ব্যথা সাধারণত অতিরিক্ত কাজ, ভারী কিছু বহন বা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফল।




মহিলাদের কোমর ব্যথা হতে পারে গৃহস্থালি কাজ, হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে।



গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথা খুব স্বাভাবিক কারণ ওজন বৃদ্ধি ও শরীরের পরিবর্তন।




পিএলআইডি একটা অন্যতম সমস্যা ।‌এটি কোমর ব্যথার একটি অন্যতম কারণ।সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে।এটি যদি কোন‌ কারণে বের হয়ে যায় তার ফলে মেরুদন্ডের স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে। এটা সরে যেতে পারে বা ছিঁড়ে জেল বের হয়ে যেতে পারে যা হার্নিয়েটেড ডিস্ক নামে পরিচিত। এর ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।




অধিকাংশ মানুষ সকালে ঘুম ভাঙার পর কোমরে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। আবার রাতে দীর্ঘ সময় শোয়ার পরও ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।




দীর্ঘদিন কোমর ব্যথা হওয়ার কারণ কি  ? (Chronic Back Pain Causes)


দীর্ঘদিন কোমর ব্যথা হওয়ার কারণ কখনো সাধারণ নয়, বরং জটিল হতে পারে। যেমন—


ডিস্ক প্রলাপ্স বা ডিস্ক সরে যাওয়া যা আগেই বলেছি।


মেরুদণ্ডে টিউমার।


স্নায়ুর চাপ।


কিডনির সমস্যা।


হাড়ের প্রদাহ।



যদি দীর্ঘদিন কোমর ব্যথা থাকে, তবে অবহেলা না করে সরাসরি অর্থোপেডিক হাসপাতাল (Orthopedic Hospital) বা ফিজিওথেরাপি সেন্টার (Physiotherapy Center) এ যেতে হবে। সেখানে পরীক্ষা (X-ray, MRI) করে প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব।





কোমর ব্যথা হলে কি করা উচিত? (What To Do for Back Pain)


যদি হঠাৎ কোমরে তীব্র ব্যথা হয়, তবে ভয় না পেয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমেই বিশ্রাম নিতে হবে, দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। বিশেষ করে রাতে ব্যথা বেড়ে গেলে কিংবা সকালে স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে না পারলে দেরি করা উচিত নয়। নিচে কিছু লিখে দেই । 



ভারী কাজ ও ওজন তোলা বন্ধ করুন।


দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর কোমর ব্যথা হলে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটুন।


দিনে অন্তত ১৫-২০ মিনিট কোমর ব্যথার ব্যায়াম করুন।এতে করে আপনি আরাম পাবেন যা ব্যথা সারাতে সাহায্য করতে পারে।



প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করা কোমড় ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। 


ঘরে বসে সহজ কোমর ব্যথার ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করুন।


প্রয়োজনে অর্থোপেডিক হাসপাতাল এ যান।


ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে থেরাপি নিন।




প্রেস্ক্রাইবড ওষুধ

ব্যথার কারণে ডাক্তারকে দেখানো দরকার এবং তিনি প্রয়োজনে আপনাকে প্রেস্ক্রাইবড ওষুধ দেবেন ।





ঠান্ডা বা গরম উপায়

ব্যথা সামান্য হলে ঠান্ডা বা গরম কমসূচী বা গরম প্যাড ব্যবহার করা বা শারীরিক উষ্ণতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। মানে এক কথায় গরম পানির ছেক অথবা বরফ চেপে ধরা । 




এগুলো করলে পুরুষ, মহিলা, শিশু ও গর্ভবতী—সবাই উপকৃত হবেন।



কোমরে তীব্র ব্যথা: কখন ডাক্তার দেখাবেন?


যদি হঠাৎ কোমরে তীব্র ব্যথা হয় এবং তা কয়েকদিন ধরে না কমে, কিংবা রাতে ও সকালে ব্যথা বেড়ে যায়, তবে অবহেলা করা উচিত নয়। বিশেষ করে পুরুষ, মহিলা, শিশু এবং গর্ভবতী—সবাইকে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।




কোমর ব্যথার চিকিৎসা‌‌ কি (Treatment of Back Pain) ? 


কোমর ব্যথার চিকিৎসা (Treatment for Back Pain) বিভিন্নভাবে করা যায়।




ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপি সেন্টার এ গিয়ে থেরাপিস্টের অধীনে করা যা আগেই বলেছি।


ব্যায়াম

নির্দিষ্ট কোমর ব্যথার ব্যায়াম পরবর্তীতে এ সম্পর্কে একটা লেখা লিখব ।



এখানে পুরুষদের চিকিৎসা একরকম, মহিলাদের চিকিৎসা অন্যরকম, আবার গর্ভবতী বা শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়।




কোমর ব্যথার ঘরোয়া উপায় কি (Home Remedies for Back Pain) ?


কোমর ব্যথার ঘরোয়া উপায় খুব কার্যকর। যেমন—


গরম পানিতে সেঁক যা আগেই বলেছি।


আদা, রসুন বা মেথি দিয়ে ভেষজ পানীয়।


হালকা মালিশ।


রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়া।


সকালে হালকা ব্যায়াম।


এগুলো করলে কোমরে তীব্র ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।


FAQ (সচরাচর জিজ্ঞাসা)



১.হঠাৎ কোমরে ব্যথা হওয়ার কারণ কি হতে পারে?

হঠাৎ কোমরে ব্যথা হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:


পেশি টান বা মচকানো – ভারী কিছু তোলা বা হঠাৎ ভুলভাবে নড়াচড়ার কারণে।


ডিস্ক সমস্যা (Slip Disc, Herniated Disc) – মেরুদণ্ডের ডিস্ক চাপে গেলে হঠাৎ তীব্র ব্যথা হতে পারে।


সায়াটিকা নার্ভে চাপ – কোমর থেকে পায়ে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া।


আঘাত – হঠাৎ পড়ে যাওয়া বা আঘাত পাওয়া।


অতিরিক্ত বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা – দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে থাকলে।



২.কোমর ব্যথা কি কিডনি রোগের লক্ষণ ‌?

হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে সাধারণ কোমর ব্যথার সঙ্গে কিডনির ব্যথার পার্থক্য আছে:


কিডনির ব্যথা সাধারণত কোমরের দুই পাশের নিচে (flank pain) হয়।


প্রস্রাবে জ্বালা, রক্ত, বারবার প্রস্রাবের চাপ, জ্বর ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে কিডনি সমস্যার সম্ভাবনা থাকে।


কিডনিতে পাথর, সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকলেও কোমরে ব্যথা দেখা দেয়।



৩.সিজারের পর কোমর ব্যথা হয় কেন?


সিজার (C-section বা সিজারিয়ান অপারেশন) এর পর কোমর ব্যথার কারণগুলো হতে পারে:


অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেস্থেশিয়া (spinal/epidural) দেওয়া → ইনজেকশন নেওয়া স্থানে কিছুদিন ব্যথা থাকতে পারে।


গর্ভকালীন শারীরিক পরিবর্তন → বাচ্চা বহন করার সময় কোমরের পেশি ও হাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।


অতিরিক্ত বিশ্রাম বা শারীরিক দুর্বলতা → ডেলিভারির পর শরীর দুর্বল থাকলে কোমর ব্যথা হয়।


ক্যালসিয়াম/ভিটামিন ডি ঘাটতি → হাড় ও জয়েন্ট দুর্বল হয়ে ব্যথা বাড়াতে পারে।





৪.কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কি?


কোমরের দুই পাশে (flank area) ব্যথা হলে সম্ভাব্য কারণগুলো হলো:


কিডনির সমস্যা – কিডনিতে পাথর, সংক্রমণ, বা প্রদাহ।


মাংসপেশীর টান – ভারী কাজ, হঠাৎ নড়াচড়া।


স্পাইনাল সমস্যা – ডিস্ক বা হাড়ের সমস্যা।


ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) – মূত্রনালীর সংক্রমণ কোমরের দুই পাশে ব্যথা হতে পারে।


স্ত্রীদের ক্ষেত্রে – ডিম্বাশয় বা জরায়ুর সমস্যার কারণে অনেক সময় কোমরের পাশে ব্যথা হতে পারে।


👉 সতর্কতা:


যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, প্রস্রাবে সমস্যা থাকে, জ্বর আসে, বা ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে যায় → অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম