দাঁত ব্যথা দূর করার উপায় কি ?

 আমরা অনেকেই মাঝে মধ্যে দাঁত ব্যথায় ভুগে থাকি । কিন্তু আমরা কি জানি কেন হয় দাঁত ব্যথা ? আর এই ব্যথা টাকে তুচ্ছ মনে করে হয়তোবা অনেকেই এড়িয়ে যায় । কিন্তু দাঁত ব্যথা কি এড়িয়ে যাওয়ার কোন বিষয় ? অসহ্য একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় । দেখা গেছে দাঁত ব্যথা যখন হয় তখন দাঁত সহ এর আশপাশের এলাকা জুড়ে ব্যথা অনুভূত হয় । আর এই ব্যথা কেইবা সহ্য করতে পারে ? হঠাৎ দাঁতে ব্যথা শুরু হলে খাওয়া, কথা বলা এমনকি স্বাভাবিক জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়ে। 

Teeth ache,দাঁত ব্যথায় ভুগছেন এমন একজন মানুষ মুখে হাত দিচ্ছেন, ব্যথা কমানোর উপায় খুঁজছেন
দাঁত ব্যথায় ভুগছেন এমন একজন মানুষ



                           

দাঁত ব্যথা কেন হয় ? 



দাঁত ব্যথার কারণ


১. দাঁতের ক্ষয় (Cavity)


খাবারের কণা ও জীবাণুর কারণে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়। এতে দাঁতের ভেতরের ডেন্টিন ও স্নায়ু উন্মুক্ত হয়ে ব্যথা শুরু হয়।


২. মাড়ির প্রদাহ (Gingivitis/Periodontitis)

মাড়িতে প্রদাহ বা সংক্রমণ হলে দাঁতের গোড়ায় ব্যথা হতে পারে।


৩. দাঁতে ইনফেকশন

দাঁতের ভেতরে বা রুটে পুঁজ জমে গেলে তা অসহনীয় ব্যথা তৈরি করে।


৪. ভাঙা দাঁত বা দাঁতে আঘাত

দাঁত ভেঙে গেলে বা চিড় ধরলে স্নায়ু বেরিয়ে আসে এবং ব্যথা হয়।


৫. সাইনাস ইনফেকশন

অনেক সময় সাইনাসে প্রদাহ হলে তা উপরের দাঁতে ব্যথা হিসেবে অনুভূত হয়।




দাঁত ব্যথার কোন লক্ষণ আছে কি ? 


দাঁতের ব্যথার কিছু লক্ষণ হল:


ধকধকে ব্যথা – দাঁতের ভেতর বা গোড়ায় নিয়মিত বা মাঝে মাঝে ব্যথা অনুভূত হয়।


গরম-ঠান্ডায় সংবেদনশীলতা – চা, কফি বা ঠান্ডা পানি খেলে দাঁতে তীব্র ব্যথা হয়।


খাবার চিবানোর সময় ব্যথা – বিশেষ করে শক্ত খাবার খাওয়ার সময় দাঁত ব্যথা বেড়ে যায়।


মাড়ি ফুলে যাওয়া – দাঁতের আশেপাশে মাড়ি ফোলা বা লালচে হতে পারে।


দাঁতে ফাটল বা ক্ষয় – দাঁতের গায়ে কালচে দাগ, ফাটল বা গর্ত দেখা যায়।


মুখে দুর্গন্ধ – দীর্ঘস্থায়ী দাঁত ব্যথার সঙ্গে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।


জ্বর বা মাথাব্যথা – সংক্রমণ বেশি হলে জ্বর বা মাথাব্যথা দেখা দেয়।


পুঁজ বের হওয়া – দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে ছোট ফোড়া (abscess) হয়ে পুঁজ বের হতে পারে।


চোয়ালে চাপ বা অস্বস্তি – দাঁতের ব্যথা চোয়াল বা কানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।



দাঁত ব্যথায় করণীয় কি ?  



১.লবণ 


দাঁত ব্যথা কমানোর জন্য আপনি লবণকে বেছে নিতে পারেন। বিশেষত দাঁত ব্যথা সারাতে খুবই কার্যকরী।




একগ্লাস কুসুম গরম পানি নিন। তাতে লবণ মিশিয়ে নিন তারপর এই লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে কুলি করুন। দিনে অন্তত ৩/৪ বার কুলি করলে দাঁত ব্যথা উপশম হবে । কুলি করার সময় আপনি আরাম পাবেন। 






২. শরিষার তেল 

দাঁত ব্যথা যুক্ত স্থানে লবণ মিশ্রিত শরিষার তেল লাগালে ব্যথা কমে যায় । 






৩. বরফ

ব্যথাযুক্ত দাঁতে বরফ কুচি কাপড়ে পেঁচিয়ে ধরে রাখতে পারেন , আর এতে আপনি আরাম পাবেন । 




৪. পেঁয়াজ 

পেঁয়াজে অ্যান্টিসেপটিক বিদ্যমান, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রবিয়াল উপাদান দাঁতের ব্যথাসহ জীবাণু সব কিছু সেরে তুলতে কার্যকর । পেঁয়াজের একটু কোয়া নিয়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগিয়ে নিন । 




৫.রসুন

রসুন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। একটি রসুন কোয়া পিষে সামান্য লবণ মিশিয়ে দাঁতের ব্যথার স্থানে লাগালে সংক্রমণ কমে এবং ব্যথা প্রশমিত হয়।



৬.লবঙ্গ ব্যবহার

লবঙ্গে ইউজেনল নামক উপাদান রয়েছে যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক। একটি লবঙ্গ চিবিয়ে রাখা বা ১ বা২ ফোঁটা লবঙ্গ তেল নিয়ে ব্যথার স্থানে লাগালে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।



৭.পিপারমিন্ট চা

পিপারমিন্টে শীতল উপাদান থাকে । ব্যবহারের পদ্ধতি হল ফুটানো ঠান্ডা পানি নিতে হবে । মানে ফুটানো পানি নিন , ঠান্ডা করুন । তারপর উক্ত পানিতে পিপারমিন্ট পাতা বা টি-ব্যাগ ভিজিয়ে ঠাণ্ডা হলে সেই পানি দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা প্রশমিত হয়।



দাঁত ব্যথার চিকিৎসা

ঘরোয়া উপায়ে সাময়িক আরাম পেলেও যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই দন্ত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন । 




দাঁত ব্যথা প্রতিরোধের উপায় কি ?

নিচে কিছু উপায় দেওয়া হল 


দাঁত ব্রাশ 

প্রতিদিন অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করুন। রাতে ও সকালে খাওয়ার পর । এতে পনার দাঁত সতেজ থাকবে । 


ফ্লস ব্যবহার 


দাঁত ব্যথা প্রতিরোধের আর একটা পদ্ধতি হল ফ্লস ব্যবহার । এতে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের কণা দূর করে ।



খ্যাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন 

অতিরিক্ত মিষ্টি‌ ও ফাস্টফুড পরিহার করুন । স্বাস্থ্যকর খাবার খান ।পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।



চেকআপ

যদি মনে হয় কোন সমস্যা হচ্ছে তবে দন্ত চিকিৎসকের কাছে চেকআপ করুন। তবে দাঁত খারাপ হওয়ার আগেই চেকআপ করা ভালো । 




অন্যান্য ক্ষেত্রে 


দাঁত দিয়ে শক্ত জিনিস ভাঙা বা খোলা এড়িয়ে চলুন।



দাঁত ব্যথা অবহেলা করার মতো বিষয় নয়। সাময়িকভাবে ঘরোয়া উপায়ে আরাম পেলেও মূল কারণের চিকিৎসা করানো জরুরি। দাঁতের সঠিক যত্ন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই পারে আপনাকে দীর্ঘ সময় দাঁত ব্যথা থেকে রক্ষা করতে। 



FAQ(গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর)


প্রশ্ন ১: দাঁত ব্যথা কি শুধু দাঁতের রোগের জন্য হয়?

👉 না। সাইনাস সমস্যার কারণেও দাঁতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।


প্রশ্ন ২: রাতে দাঁত ব্যথা বেশি কেন হয়?

👉 শোবার সময় রক্তপ্রবাহ দাঁত ও মাথায় বেড়ে যায়, ফলে চাপ বেশি পড়ে এবং ব্যথা তীব্র হয়।


প্রশ্ন ৩: দাঁত ব্যথার সময় কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়?

👉 অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা খাবার, টক,মিষ্টি এবং শক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।


প্রশ্ন ৪: ঘরোয়া উপায় কি স্থায়ী সমাধান দেয়?

👉 না, ঘরোয়া উপায় সাময়িক আরাম দেয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।


প্রশ্ন ৫: দাঁতের ব্যথা কি হার্টের রোগের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে?

👉 হ্যাঁ, দাঁতের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ অনেক সময় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়।


প্রশ্ন ৬: শিশুদের দাঁত ব্যথা হলে কী করবেন?

👉 শিশুদের দাঁতে ব্যথা হলে ঘরোয়া উপায় না মেনে সরাসরি শিশুদের দন্ত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াই উত্তম।


প্রশ্ন ৭:দাঁত ব্যথার সময় অ্যান্টিবায়োটিক নিজে থেকে খাওয়া ঠিক কি?

👉 না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম