কোমর ব্যথা একটা অন্যতম শারীরিক সমস্যা । যা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ভুল ভঙ্গিতে কাজ করা, ভারী বস্তু তোলা কিংবা নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব—এই সবকিছু কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। এই ব্লগপোষ্টে কোমড় ব্যথার কারণ সংক্রান্ত আলোচনা করেছি । চাইলে সেটা দেখে আসতে পারেন। কোমর ব্যথা কমানোর একটা ফলদায়ক পদ্ধতি হচ্ছে ব্যায়াম ।সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে আরাম পাওয়া সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে সেই ব্যায়াম করবেন ।
![]() |
নিয়মিত ব্যায়াম করলে কোমর ব্যথা অনেকটাই কমে যায় |
কোমর ব্যথা কমানোর উপায় কি ?
কোমর ব্যথা কমানোর অনেক উপায় আছে । আপনাকে যা করতে হবে :-
প্রথমে আপনি সমতল নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে থাকুন। এবার হাঁটু ভাঁজ না করে যত দূর সম্ভব এক পা উপরে তুলুন । আর এক পা বিছানায় থাকবে । এভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড রাখতে হবে । একইভাবে অপর পায়ের ক্ষেত্রেও করুন । এক্ষেত্রে কোমরে যদি টানও লাগে করুন । থামবেন না । কেননা টান না লাগলে সেটা কোন ব্যয়াম হবে না । আর এই টানই আপনার ব্যথাকে প্রশমিত করবে । অনেকে এমন দেখবেন যে এই টানের কারণে আরামবোধ করছেন । এই আরামবোধের কারণে আপনার ব্যায়াম হচ্ছে। আর আরামবোধ না হলেও চালিয়ে যাবেন।
এরপর এক পা করে উঠানোর পর আপনি দুই পাই একসঙ্গে উপরে তুলুন এবং এক্ষেত্রেও সময় নিন ।
এরপর এক পা ভাঁজ অর্থাৎ হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন এবং কিছুক্ষণ সময় দিন । এরপর অপর পায়ের ক্ষেত্রে এভাবেই করুন ।
Lower back pain exercises
কোল হাঁপানি স্ট্রেচ (Knee-to-Chest Stretch)
পদ্ধতি: এবার দুই পা একসাথে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন এবং কিছুক্ষণ সময় দিন মানে২০–৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে নামিয়ে আনুন।
এক পা করে ২–৩ বার করুন।
এবার দুই পা পায়ের পাতার দিকে কিছুক্ষণ টান করে থাকুন ।
উপকারিতা
এই স্ট্রেচ কোমরের নিচের অংশে রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং পেশির চাপ কমায়।
ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ (Cat-Cow Stretch)
পদ্ধতি
হাঁটু ও হাতের ওপর ভর দিয়ে ‘টেবিল’ ভঙ্গিতে বসুন।
নিশ্বাস নিতে নিতে পিঠ নিচু করে দিন এবং মাথা সামনের দিকে তুলুন (Cow Pose)।
নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিঠ উঁচু করে দিন এবং থুতনি বুকের দিকে আনুন (Cat Pose)।
এইভাবে ১০–১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
উপকারিতা
এই ব্যায়ামটি মেরুদণ্ড নমনীয় করে এবং কোমরের পেশির ওপর চাপ কমায়।
কোর স্ট্রেংথিং এক্সারসাইজ – ব্রিজ পোজ (Bridge Pose)
পদ্ধতি
চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন, হাঁটু ভাঁজ করুন এবং পা মাটিতে রাখুন।
হাত দুটি শরীরের পাশে রাখুন।
ধীরে ধীরে কোমর ও পিঠ উঠিয়ে ব্রীজ আকৃতি তৈরি করুন।
কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে নামুন।
এটি ১০ বার করুন।
উপকারিতা
ব্রিজ পোজ পেট ও পিঠের পেশি শক্তিশালী করে, যা কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
চাইল্ড পোজ (Child’s Pose)
পদ্ধতি
হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসুন এবং পা গুটিয়ে নিন।
শরীর সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে কপাল মাটিতে রাখুন।
দুই হাত সামনে প্রসারিত করুন।
৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ধরে রাখুন।
উপকারিতা
এই ব্যায়ামটি কোমর ও মেরুদণ্ডে টান দিয়ে ব্যথা উপশম করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
পেলভিক টিল্ট (Pelvic Tilt)
পদ্ধতি
চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন এবং হাঁটু ভাঁজ করুন।
পিঠ মাটিতে রেখে কোমর সামান্য উপরে তোলার চেষ্টা করুন।
পেটের পেশি সংকুচিত করুন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
এইভাবে ১০–১৫ বার করুন।
উপকারিতা
পেলভিক টিল্ট কোমরের পেশি সক্রিয় রাখে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
নিডল থ্রু দ্য থ্রেড (Thread the Needle)
পদ্ধতি
হাঁটু ও হাতের ওপর ভর দিয়ে বসুন।
ডান হাত নিচ দিয়ে বাম পাশে প্রসারিত করুন এবং শরীরকে ঘুরিয়ে কাঁধ মাটিতে রাখুন।
কিছুক্ষণ ধরে রেখে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
একইভাবে অন্য হাত দিয়ে করুন।
উপকারিতা
এই ব্যায়ামটি মেরুদণ্ডের নিচের অংশে স্ট্রেচ দেয়, যা কোমর ব্যথা কমাতে কার্যকর।
পিরিফর্মিস স্ট্রেচ (Piriformis Stretch)
পদ্ধতি
চিত হয়ে শুয়ে এক পায়ের গোড়ালি অন্য হাঁটুর ওপর রাখুন।
নিচের পা বুকের দিকে টেনে আনুন এবং উভয় হাত দিয়ে ধরে রাখুন।
২০ সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে ছাড়ুন।
উপকারিতা
পিরিফর্মিস পেশির টান কমায়, যা অনেক সময় কোমর ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ওয়াল সিট (Wall Sit)
পদ্ধতি
পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দাঁড়ান।
হাঁটু ভাঁজ করে এমনভাবে বসুন যেন আপনি কুরসিতে বসেছেন।
১০–১৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
উপকারিতা
এটি কোমর ও পায়ের পেশি শক্তিশালী করে এবং কোমরের ভারসাম্য রক্ষা করে।
সুপারম্যান এক্সারসাইজ (Superman Pose)
পদ্ধতি
পেটে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন।
হাত ও পা সামনের দিকে প্রসারিত করুন।
একসাথে হাত ও পা কিছুটা উপর দিকে তুলুন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
ধীরে ধীরে নিচে নামান।
উপকারিতা
পিঠের পেশি শক্ত করে এবং মেরুদণ্ড সোজা রাখতে সহায়তা করে।
হাঁটাহাঁটি (Walking)
পদ্ধতি
প্রতিদিন নিয়মিত ২০–৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।
উপকারিতা
নিয়মিত হাঁটা রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কোমর পেশিকে সক্রিয় রাখে, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো, বিশেষ করে যদি ব্যথা তীব্র হয়।
ধীরে ধীরে ব্যায়াম করুন এবং ব্যথা অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করুন।
ব্যায়ামের সময় সঠিক ভঙ্গি মেনে চলুন।
কোদাল দিয়ে কাজ
এছাড়াও প্রতিদিন ভোরে ২ঘন্টা করে কোদাল দিয়ে মাটি নাড়াচাড়া করতে পারেন যেভাবে আলু রোপনের সময় কৃষক আলু রোপন ও উঠানোর ক্ষেত্রে কাজটি করেন । আর এটা হচ্ছে সবথেকে ভালো উপায়।
উপসংহার:
কোমর ব্যথা যতটা বিরক্তিকর, সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে তা ততটাই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। উপরের ব্যায়ামগুলো নিয়মিত এবং ধৈর্যসহকারে চর্চা করলে আপনি কোমরের ব্যথা থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পেতে পারেন। সবসময় মনে রাখতে হবে—সচল থাকাই হলো কোমর ব্যথা প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ।