পা কামড়ায় কেন?

পা কামড়ানোর সাথে আমরা সকলেই পরিচিত । অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই আছে । আপনার কি পা কামড়ায় ? আপনি এখন‌ বলতে পারেন পা আবার কামড়ায় ? এখানে পা কামড়ানো মানে পা চাবানোর কথা বলছি । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে মাসল ক্র্যাম্প । কিন্তু কেন হয় মাসল ক্র্যাম্প । যখন হয় তখন ইচ্ছে করে এই স্থানটিকে বেধে রাখি । বাধ দেওয়ার পর কিছুটা হলেও আরামবোধ লাগে । আমরা কখন টের পাই ? বিশেষ করে রাতে শোবার সময় বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরে হঠাৎ করে পায়ে কামড়ানো বা চাবানোর মতো অনুভূতি হয়। অনেকেই একে গুরুত্ব দেন না, আবার কেউ কেউ ভয় পেয়ে যান। আসলে এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আজকের এই পোস্টে জানাবো মাসল ক্র্যাম্প কেন হয় ? 


Muscle cramp,পা কামড়ানো বা চাবানোর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত তথ্যচিত্র
পা কামড়ায় কেন ? 




১. রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা

পায়ে রক্ত সঠিকভাবে না পৌঁছালে বা দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে ঝিঁঝি ধরা, কামড়ানো মতো অস্বস্তি হতে পারে। অন্যভাবে বললে মাংসপেশীতে রক্তের প্রবাহ যদি কমে যায় তাহলে এই সমস্যা দেখা দেবে ।‌



২. স্নায়ুর সমস্যা

ডায়াবেটিস, স্নায়ুর প্রদাহ (Neuropathy) বা স্নায়ুতে চাপ পড়লে অনেক সময় পায়ে অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়, যাকে অনেকে কামড়ানো বা চাবানোর মতো বর্ণনা করেন।




৩. ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব

বিশেষ করে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে ঝিঁঝি, কামড়ানো বা জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি হতে পারে।আপনার শরীরে যদি পুষ্টির অভাব দেখা দেয় তাহলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

      

          

৪.মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

চাপ, টেনশন বা দুশ্চিন্তায় অনেক সময় শরীরের স্নায়ু অতিসংবেদনশীল হয়ে ওঠে। অর্থাৎ মানসিক চাপ আপনাকে মাসল ক্র্যাম্পের দিকে ঠেলে দিবে । তাই সাবধান ।‌




৫.রক্তশূন্যতা (Anemia)

 আপনার রক্তে যদি প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের অভাব হয় তাহলে মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প হতে পারে, যা পা চাবানোর মতো অনুভূতি হয়। 



৬.দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় থাকা

দীর্ঘ সময় ধরে বসে আছেন বা দাঁড়িয়ে আছেন অথবা অতিরিক্ত ব্যায়াম করছেন ফলে পেশী ক্লান্ত হয়ে পরে, আর এতেই ব্যথা হতে পারে। 




৭.ডিহাইড্রেশন

শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে বা পানিশূন্যতা হলে পেশী ক্র্যাম্প হতে পারে। মানে আপনি যদি নিয়মিত পানি পান‌‌ না করেন তবে ধরে নিন আপনার মাসল ক্র্যাম্প হবে 




বাত, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হবে ।



রক্তে লবনের অভাব দেখা দিলে হবে ।





কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি ?


 কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে—


পায়ে বারবার তীব্র কামড়ানো বা ঝিঁঝি ধরা অনুভূত হলে


হাঁটতে সমস্যা হলে বা ভারসাম্য হারালে


পায়ে ঘা বা ক্ষত তৈরি হলে


ডায়াবেটিস বা স্নায়ুর রোগ থাকলে




পা কামড়ানো প্রতিকার গুলো কি কি? 




প্রতিকার : যেহেতু এটা সাময়িক । তাই ঔষধের কোন প্রয়োজন নেই।‌





১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন – শরীর আর্দ্র রাখলে ত্বক ও স্নায়ু ভালো থাকে।




২. দুঃশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন




৩. বিশ্রাম নিতে হবে



৪.সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন – অনেকক্ষণ একইভাবে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না।



৫. মাসল ক্র্যাম্প যুক্ত স্থানে কিছু ক্ষনের জন্য বেঁধে রাখতে পারেন । অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বেশিক্ষণ নয় । তা না হলে রক্ত চলাচল বন্ধ হতে পারে । তাই সাবধান ।‌ 



গুরুত্বপূর্ণ FAQ


প্রশ্ন ১: পা কামড়ানো কি ডায়াবেটিসের লক্ষণ?

উত্তর: না, সরাসরি লক্ষণ নয় ।


প্রশ্ন ২: রাতে বেশি পা কামড়ায় কেন?

উত্তর: রাতে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, শরীর বিশ্রামে থাকে এবং স্নায়ু বেশি সংবেদনশীল হয়। তাই অনেকের কাছে তখন কামড়ানো বা ঝিঁঝি ধরা বেশি মনে হয়।


প্রশ্ন ৩: পা কামড়ানো কি শুধুই ত্বকের সমস্যা?

উত্তর: সবসময় নয়। কখনো এটি স্নায়ু বা রক্ত সঞ্চালনের সমস্যার কারণে হতে পারে। তবে অনেক সময় ত্বকের শুষ্কতা বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের কারণেও হয়।


প্রশ্ন ৪: বাড়িতে কীভাবে সামলানো যায়?

উত্তর: পা পরিষ্কার রাখা, হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা এবং ব্যায়াম করার মাধ্যমে উপশম পাওয়া যায়।



প্রশ্ন ৫: এটি কি বিপজ্জনক?

উত্তর: সাধারণ ক্ষেত্রে এটি তেমন বিপজ্জনক নয়। তবে যদি বারবার হয়, তীব্র হয় বা অন্য উপসর্গের সাথে দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।



সারসংক্ষেপ:

পা কামড়ানো বা চাবানোর মতো অনুভূতি সাধারণত রক্ত সঞ্চালন, স্নায়ু সমস্যা, ভিটামিনের অভাব বা ত্বকের কারণে হয়ে থাকে। এটি সাময়িক হলে ভয়ের কিছু নেই। তবে যদি ঘন ঘন হয়, তীব্র হয় বা অন্য উপসর্গ থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম