আপনি কি হাইহিল জুতা পরিধান করেন ? হ্যা, আপু আপনাকেই বলছি। তাছাড়া আপনি কি ফ্যাশন জগতের সাথে যুক্ত ? যদিও হাইহিল ফ্যাশন জগতে জনপ্রিয় । আপনি কি জানেন হাইহিল পরিধানে আপনার নিজেরই ক্ষতি হচ্ছে ?
তবে ফ্যাশন জগতের সাথে যুক্ত থাকলে একটানা অনেক সময় ধরে না পড়াই ভালো।
![]() |
হাইহিল জুতা |
সৌন্দর্যের আড়ালে লুকানো বিপদ : হাইহিল জুতা
অনেক নারীই নিজেদেরকে আরও আকর্ষণীয় ও আত্মবিশ্বাসী দেখাতে হাই হিল জুতা পরেন। ফ্যাশন জগতে আছেন তাদের কথামতো বললামই ।
হাইহিল মানেই হলো জুতার এক পাশ উঁচু আর আরেক পাশ নিচু। আর সমস্যা এখান থেকেই শুরু। কেননা সমতল বিশিষ্ট জুতায় কোন সমস্যা হয় না । এই হাইহিলেই সমস্যা দেখা দেয় । এবার আসুন জেনে নেই কি কি সমস্যা দেখা দেয় ।
পা এবং চলনে অসুবিধা
হাই হিল জুতার ক্ষতিকর দিক এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো পায়ের গঠনে পরিবর্তন ও ব্যথা। যদি জুতাটি সঠিক মাত্রা না হয় বা তা ঠিকমত সাপোর্ট দেয় না, তাহলে পা এবং চলনে অসুবিধা অনুভব করতে পারেন। ভাল সাপোর্ট না দিলে এবং সঠিক আকার না হলে পা ব্যথা হতে পারে।
পেশীগত সমস্যা
যদি জুতার আকার ঠিকমত না হয় বা তা যত্নশীলভাবে তৈরি না হয়, তাহলে পেশীগত সমস্যা হতে পারে, যা ব্যথা এবং অসুবিধা হতে পারে।
হাঁটু ও কোমরের ব্যথা বৃদ্ধি
হাই হিল পরলে শরীরের ভর সামনের দিকে চলে যায়, ফলে হাঁটুর জোড়ায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত অফিসে বা অনুষ্ঠানে হাই হিল ব্যবহার করেন, তাদের হাঁটু ও কোমরে ব্যথা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
হাই হিল জুতার ক্ষতিকর দিক হিসেবে এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এতে অল্প বয়সেই আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথা শুরু হতে পারে।
মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক নষ্ট হয়
হাই হিল পরলে শরীরের ভঙ্গি (posture) পরিবর্তিত হয়। পিঠ সোজা রাখার পরিবর্তে কোমর পেছনে বেঁকে যায়, যা মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট করে দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি “spinal alignment problem” তৈরি করে এবং পিঠে ব্যথা বা সায়াটিকার ঝুঁকি বাড়ায়।
ভারসাম্য হারানো ও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা
উচ্চ হিলের কারণে হাঁটার সময় ভারসাম্য ঠিক রাখা কঠিন হয়। ফলে পড়ে গিয়ে পা মচকানো, গোড়ালি ভাঙা বা হাড়ের চোট লাগার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে সিঁড়ি ওঠানামা বা ভেজা জায়গায় হাঁটার সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য হাই হিল নয়, বরং low heel বা flat shoe ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
রক্তসঞ্চালনে বাধা ও ফোলা
উচ্চ হিলের কারণে পায়ের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে না। ফলে পা ফুলে যায় এবং অনেক সময় “varicose veins” বা শিরা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। নিয়মিত হাই হিল পরলে এ সমস্যাটি আরও তীব্র হতে পারে।
এই কারণে চিকিৎসকরা দীর্ঘ সময় হাই হিল পরা থেকে বিরত থাকতে বলেন।
পায়ের পাতা
এই জুতা পরার সময় পায়ের পাতা নেয় পুরো শরীরের ভার, আর গোড়ালি তখন সহায়ক হয় মাত্র। ফলে ধীরে ধীরে পায়ের পাতা থেকে এই প্যাডের মতো মাংসল অংশটি সরে যায় বা ক্ষয়ে যায়।
গোড়ালির সমস্যা
এতে পায়ের পাতা ও গোড়ালির ভারসাম্য নষ্ট হয়, সেই সঙ্গে গোড়ালির অস্থিসন্ধিতে এসে পড়ে পুরো শরীরের ভার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গোড়ালি মচকে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
কীভাবে হাই হিলের ক্ষতি কমানো যায়?
যারা একেবারে হাই হিল ত্যাগ করতে পারেন না, তারা নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে কিছুটা উপকার পাবেন:
• প্রতিদিন নয়, কেবল বিশেষ অনুষ্ঠানে হাই হিল পরুন।
• ২ ইঞ্চির বেশি উঁচু হিল পরার অভ্যাস এড়িয়ে চলুন।
• হিল পরার আগে ও পরে পায়ের ব্যায়াম করুন।
• নিয়মিত flat shoe বা sneaker ব্যবহার করুন।
• নরম ইনসোল বা প্যাড ব্যবহার করুন যাতে চাপ কম পড়ে।
হাই হিল ফ্যাশন জগতে ব্যবহার করা হলেও , যেন নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ না হয়। হাই হিল জুতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন থাকলে আমরা সহজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারি। সৌন্দর্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপোস করা উচিত নয়। তাই ফ্যাশনের পাশাপাশি আরামের বিষয়টিও অগ্রাধিকার দিন।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: হাই হিল পরলে কি স্থায়ীভাবে পা বিকৃত হয়ে যায়?
👉 হ্যাঁ, দীর্ঘদিন হাই হিল পরলে পায়ের গঠন পরিবর্তন হয়ে “bunion” বা “corn” তৈরি হতে পারে, যা স্থায়ী বিকৃতি সৃষ্টি করতে পারে।
প্রশ্ন ২: হাই হিল পরা কি শরীরের ভঙ্গি নষ্ট করে?
👉 অবশ্যই। এটি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক পরিবর্তন করে, ফলে পিঠ ও কোমরে ব্যথা তৈরি হয়।
প্রশ্ন ৩: সপ্তাহে কতদিন হাই হিল পরা নিরাপদ?
👉 বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে ২–৩ দিন বা শুধুমাত্র বিশেষ অনুষ্ঠানে হাই হিল পরা তুলনামূলক নিরাপদ।