দিনে কতটুকু লবণ খাবেন ?

লবণ একটি দৈনন্দিন খাবারের অন্যতম অপরিহার্য খাদ্য উপাদান। এই লবণ ছাড়া আমাদের একটা দিনও চলে না ‌। তাই লবণের গুরুত্ব অনেক । এমন কেউ আছেন কি যারা লবণ খান না ? কমবেশি সবাই খাই । পান্তা ভাত খেতে লবণের প্রয়োজন হয় । তরকারি রান্না করার সময়ও প্রয়োজন হয় । লবণ ছাড়া যেমন পান্তা ভাত বলেন ,কিংবা তরকারিই বলেন কোনোটারই স্বাদ থাকেনা । আর যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হয় তাহলে পুরো স্বাদটাই নষ্ট হয়ে যায় । 


    

Salt,দিনে কতটুকু লবণ খাওয়া উচিত তার সঠিক পরিমাণ ও স্বাস্থ্য পরামর্শ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী দিনে কতটুকু লবণ খাওয়া উচিত জেনে নিন।

         

লবণের গুরুত্ব

শরীরের সঠিক কার্যক্রমে লবণের অবদান অসীম। এর মধ্যে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড রয়েছে, যা কোষের ভেতরে-বাইরে তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, নার্ভ সিগন্যাল পরিবহনে সাহায্য করে এবং মাংসপেশীর কাজ সঠিকভাবে চালায়। কিন্তু এই উপকারিতা পেতে হলে লবণের পরিমাণ অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে।




লবণের স্বাস্থ্য উপকারিতা কি কি ? 




লবণের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা নিম্নলিখিত হতে পারে:




ইলেকট্রোলাইট সম্পন্নতা

লবণ মাধ্যমে আমরা শরীরের ইলেকট্রোলাইট স্তর বজায় রাখে, যা শারীরিক কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ।




রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

লবণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।




মাংসপেশী কাজকর্ম

লবণ মাধ্যমে মাংসপেশী কাজকর্ম সাহায্য করে, যা শারীরিক স্থিতি উন্নত করে।




এখন যত উপকারিতাই থাকুক না কেন কোন খাদ্যই আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে পারবেন না। লবণের কথাই ধরি । অনেকে খাওয়ার সময় থালে কিছু লবণ নিয়ে নেন । এটি ছাড়া যেমন তাদের হয়ই না ‌ । এভাবে আলাদা নেয়া ছাড়া সারা দিনে আমরা যা খাই তাতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কতটুকু খেতে খেতে পারবেন ? 



দিনে কতটুকু লবণ খাবেন?



অনেকেই জানেন না যে শরীরের আসল প্রয়োজন সোডিয়াম, লবণ নয়। সাধারণত সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা দিনে ২০০০ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। যেহেতু ১ গ্রাম লবণে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে, তাই সহজ হিসাব অনুযায়ী দিনে সর্বোচ্চ ৫ গ্রামের মতো লবণ খাওয়া নিরাপদ।


অর্থাৎ, এক চা-চামচ লবণের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এর চেয়ে বেশি হলে দৈনিক লবণ গ্রহণ অতিরিক্ত হয়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।



এর উত্তর একটু ভেঙ্গে বলা দরকার। 






বয়স অনুযায়ী লবণ গ্রহণের ভিন্নতা রয়েছে।

তাই তার একটা তালিকা নিচে দেয়া হল 




১১ বছর ও তদূর্ধ্ব ৬ গ্রাম 


৭ থেকে ১০ বছর ৫ গ্রাম 


৪ থেকে ৬ বছর ৩ গ্রাম 


১ থেকে ৩ বছর ২ গ্রাম 




আর বিশেষ ভাবে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের সারাদিনে ১ গ্রামের চেয়েও কম লবণ খাওয়ানো উচিত।



বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লবণ নির্দেশিকা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লবণ নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৫ গ্রাম বা তার কম লবণ খাওয়া উচিত। এ নির্দেশিকায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা ২ গ্রাম বা ২০০০ মিলিগ্রামের বেশি হলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।


শিশুদের জন্যও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লবণ নির্দেশিকা ভিন্নভাবে প্রযোজ্য। তাদের বয়স ও ওজন অনুযায়ী লবণের চাহিদা কম। তাই শিশুদের খাবারে অতিরিক্ত লবণ মেশানো একেবারেই উচিত নয়।


লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

অনেকেই রান্নায় অভ্যাসবশত বেশি লবণ ব্যবহার করেন। আবার বাজারে পাওয়া প্রসেসড খাবার, যেমন—চিপস, ফাস্ট ফুড, সস, আচার, এগুলোতেও প্রচুর লবণ থাকে। তাই শুধু রান্নার সময় লবণ কম দিলেই হবে না, বরং খাবারের উৎস থেকে দৈনিক লবণ গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।



লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার আরোও কিছু উপায় হলো:



প্রসেসড খাবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া।


খাদ্যপণ্যের লেবেলে সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা দেখে কেনা।


টেবিলে অতিরিক্ত লবণ না রাখা।


বিকল্প হিসেবে লেবুর রস, মশলা বা হার্বস ব্যবহার করা।




অতিরিক্ত লবণের ক্ষতি

যদি দৈনিক লবণ গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে শরীরে নানা সমস্যা তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি লবণ খাওয়া হলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ থেকেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া অস্থি ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) এবং পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।


লবণের পরিমাণ বেশি হলে শরীরে পানি জমে যায়। ফলে ফোলা ভাব, ওজন বৃদ্ধি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই প্রতিদিনই সচেতনভাবে ঠিক করতে হবে দিনে কতটুকু লবণ খাবেন।



সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা বনাম লবণের পরিমাণ

অনেকে মনে করেন লবণ আর সোডিয়াম একই জিনিস। আসলে লবণে সোডিয়াম থাকে, কিন্তু দুটো এক নয়। আমাদের শরীরের প্রয়োজন সোডিয়াম, যা লবণ থেকে পাওয়া যায়। তাই সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা নিয়ে সচেতন হলে সহজেই বোঝা যায় লবণের পরিমাণ কতটা হওয়া উচিত।



বিশেষ কিছু অবস্থায় লবণ গ্রহণ


উচ্চ রক্তচাপের রোগী


তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লবণ নির্দেশিকা মেনে দিনে ৫ গ্রামেরও কম লবণ খাওয়া উচিত।


ডায়াবেটিস রোগী

অতিরিক্ত লবণ তাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।


কিডনি রোগী

শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হলে কিডনি দ্রুত খারাপ হয়।


শিশু ও কিশোর

বয়সভেদে তাদের জন্য আলাদা নির্দেশিকা আছে, তবে বেশি লবণ একেবারেই ক্ষতিকর। উপরে এ সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে ।


মোট কথা সারা দিনে সব মিলিয়ে এক চা চামচের বেশি লবণ না খাওয়াই স্বাস্থ্যকর । এটা শুধুমাত্র বড়দের যাদের তালিকা দেয়া আছে । শিশুদের জন্য নয় । তারা কি পরিমাণ খেতে পারবে সেটাও বলে দেয়া আছে । প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 


সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)



১.বাচ্চাদের লবণ খাওয়া উচিত কি?

শিশুদের জন্য লবণ খুব সীমিত পরিমাণে দেওয়া উচিত। মায়ের দুধ বা প্রাকৃতিক খাবার থেকেই শিশু প্রয়োজনীয় সোডিয়াম পায়। আলাদা করে খাবারে লবণ মেশানো উচিত নয়।



২.খাবারের লবণ কি পুরোপুরি বাদ দেওয়া উচিত?

না। শরীরের জন্য কিছুটা সোডিয়াম প্রয়োজন। তাই লবণ পুরোপুরি বাদ দেওয়া উচিত নয়। তবে লবণের পরিমাণ অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লবণ নির্দেশিকা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম