সাবধান ! মিনি হার্ট অ্যাটাককে অবহেলা নয় ।‌

হার্ট অ্যাটাক কি তা আমরা সকলেই জানি । তবে মিনি হার্ট অ্যাটাক কি, সেটা কি জানি ? সেটা শরীরের উপর কতটা প্রভাব ফেলে তা কি আমরা জানি ? না জানলে জেনে নিন । মিনি হার্ট অ্যাটাকের ফলে কি হতে‌ পারে । তবে ভাবছি শুধু হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে লেখা লিখব । 


 

মিনি হার্ট অ্যাটাক,Mini heart attack symptoms and treatment illustration
মিনি হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে জানা জরুরি।

  


                  

মিনি হার্ট অ্যাটাক কি ? 


মিনি হার্ট অ্যাটাক, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় NSTEMI (Non-ST Elevation Myocardial Infarction) বা কখনও হার্টের ছোট ইনফার্কশন বলা হয়, এটি সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের তুলনায় কম মারাত্মক ।




এটি এমন একটি অসুখ যেটার কারণে একটু দেরি হলে বা কোনরকমে অবহেলা করলে আপনার পুর্ণ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% বেড়ে যায় ,এখানে মেজর হার্ট অ্যাটাক হতে পারে । আর একবার যদি হয়েই যায় তাহলে তো জানেনই শরীরের অবস্থা কি হয় । সেটা না হয় নাই বললাম। মিনি হার্ট অ্যাটাক দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুততার সাথে হাসপাতালে নিতে হবে । তবে এখানে ইমারজেন্সিতে ভর্তি করানো উচিত। না হলে বিপদ আছে । 




মিনি হার্ট অ্যাটাক মূলত তখন হয় যখন হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে আংশিক ব্লকেজ হয়, কিন্তু সম্পূর্ণ রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় না। ফলে হৃদপেশীর কিছু অংশ অক্সিজেনের ঘাটতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের তুলনায় উপসর্গ হালকা হতে পারে, তবে এটি হৃদরোগের বড় সতর্ক সংকেত।





'এনসিবিআই ' এর একটি গবেষণা থেকে জানা যায় " এই মিনি হার্ট অ্যাটাকের স্থায়িত্ব কাল ১০ মিনিটের জন্য হতে পারে । ভেবে কি দেখেছেন অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে যেটা হতে পারে সেটা হল ,হাত ,ঘাড়, বুক ইত্যাদি জায়গায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। 




মিনি হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ কি কি ?

মিনি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সবসময় স্পষ্ট হয় না, তবে সাধারণত নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা যায়:


বুকে চাপ বা অস্বস্তি


শ্বাসকষ্ট


ঘাম হওয়া


হাত, পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা


মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা


অস্বাভাবিক ক্লান্তি




মিনি হার্ট অ্যাটাকের কারণ কি ?


মিনি হার্ট অ্যাটাক সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে হতে পারে:


করোনারি আর্টারি ব্লকেজ – রক্তনালীর ভেতরে চর্বি বা প্লাক জমে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।


উচ্চ রক্তচাপ – দীর্ঘমেয়াদে হার্টের উপর চাপ তৈরি করে।


উচ্চ কোলেস্টেরল – প্লাক তৈরির সম্ভাবনা বাড়ায়।


ডায়াবেটিস – রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে।


স্ট্রেস ও অতিরিক্ত কাজের চাপ – হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে।


ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন – রক্তনালী সংকুচিত করে।



মিনি হার্ট অ্যাটাক ও বড় হার্ট অ্যাটাকের পার্থক্য


 মিনি হার্ট অ্যাটাক


কারণ হতে পারে আংশিক রক্তপ্রবাহ বন্ধ 

ক্ষতির মাত্রা সীমিত

উপসর্গ অনেক সময় হালকা

চিকিৎসা ‌শুধু ওষুধ ও জীবনযাপন পরিবর্তন



 বড় হার্ট অ্যাটাক

কারণ হতে পারে সম্পূর্ণ রক্তপ্রবাহ বন্ধ

 ক্ষতির মাত্রা বেশি

উপসর্গ গুরুতর ও তীব্র

 তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ও সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে



মিনি হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় কি ?

করণীয়:


অবিলম্বে ডাক্তারকে জানান – বিলম্ব হলে বিপজ্জনক হতে পারে। যেটা আগেই বলেছি 


ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষা করুন – হৃদপিণ্ডের ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য জরুরি।


প্রেসক্রিপশন মেনে ওষুধ সেবন করুন – ডাক্তার প্রদত্ত ।


জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন – স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ব্যায়াম, ধূমপান বন্ধ।


স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট – মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম।


 তবে এক্ষেত্রে কি পরীক্ষা করতে হবে সেটা ঠিক করবেন ডাক্তার। নিজ থেকে কোন ডাক্তারি করতে যাবেন না । এককথায় পন্ডিতি করবেন না। 




ঝুঁকিতে যারা আছে : 

এ কথা শুনে হঠাৎ চোখ কপালে উঠতে পারে । "আমরা সুস্থ, আমাদের কি হবে ?" -এমন ধারণা হতে পারে । ওহ্ আগেতো বলে নেই কারা ঝুঁকিতে রয়েছে।‌ 




       ১. ধূমপায়ী 




       ২.স্থুলকায় ব্যক্তি




       ৩. ডায়বেটিস রোগীদের 




      ৪. জিনগত কারণে অর্থাৎ পরিবারের        কারো থাকলে 




      ৫. যারা অলস জীবন যাপন করেন, কায়িক পরিশ্রম করেন না, এককথায় আলসে । 





তবে উচ্চরক্তচাপের ক্ষেত্রে ঝুঁকিও থাকে । এখন বলি ,যদি দেখেন ঝুঁকি আছে অতিসত্বর দেরি না করে ব্যবস্থা নিন ,এতে করে সুস্থ থাকতে পারবেন । তেমন কোন জটিলতা হওয়ার আশংকা থাকবেনা । 



মিনি হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায় কি ?

প্রতিরোধ:


কম লবণ ও কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া


নিয়মিত ব্যায়াম করা যা আগেই বলেছি


অ্যালকোহল পরিহার


রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা


পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো





FAQ: মিনি হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১: মিনি হার্ট অ্যাটাক কি বিপজ্জনক?

উত্তর: হ্যাঁ, এটি অবহেলা করলে বড় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে, তাই দ্রুত চিকিৎসা জরুরি।


প্রশ্ন ২: মিনি হার্ট অ্যাটাকের পর কি সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব?

উত্তর: যথাযথ চিকিৎসা ও জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব, তবে ঝুঁকি থেকে যায়।



প্রশ্ন ৩: মিনি হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ কি সবসময় স্পষ্ট হয়?

উত্তর: না, অনেক সময় উপসর্গ খুব হালকা হয়, যা মানুষ উপেক্ষা করে।



প্রশ্ন ৪: মিনি হার্ট অ্যাটাকের পরে কি সার্জারি প্রয়োজন হয়?

উত্তর: সব ক্ষেত্রে নয়, তবে ব্লকেজ গুরুতর হলে এঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি লাগতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম