মানুষের একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন হল খাবার । প্রতিদিন আমরা কত খাদ্য যে খাই । শরীরের জন্য কোন খাদ্য কেমন প্রভাব ফেলে সেটাও মোটামোটি আমরা জানি । প্রশ্ন হল আমরা কি জানি কোন খাবার গুলো গ্যাস্ট্রিক এর জন্য দায়ী ?
![]() |
তেলেভাজা, ঝাল-মশলাদার খাবার ও সফট ড্রিঙ্কস গ্যাস্ট্রিকের জন্য প্রধান দায়ী খাবার। |
মানুষ সাধারণত যে খাবার খায় ,হতে পারে সেটা ফল বা সবজি জাতীয় । এখন সেগুলো কোন খাবার আমরা কি জানি ? হয়তো অনেক জানি আবার অনেকে জানি না । গ্যাস্ট্রিক আমাদের শরীরে যে প্রভাব ফেলে তা কমবেশি সকলের জানা ।
গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হলে আমরা কি একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাই । আমি আমার এই ওয়েবসাইটে গ্যাস্ট্রিক নিয়ে "গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দূর করার উপায়"এই শিরোনামে একটি লেখা লিখেছি । চাইলে সেটা দেখে আসতে পারেন । যদিও এই লেখাগুলোতে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে ।
যাই হউক মূল কথায় আসি । গ্যাস্ট্রিক কি , কেন বা এ জাতীয় কিছু এখানে আলোচনা করছি না ।আজকের লেখায় আমরা জানব কোন খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের কারণ হয়, কোনগুলো পেট ফাঁপা খাবার, কোনগুলোকে গ্যাসের খাবার বলা হয়, আবার কোনগুলো অ্যাসিডিটির খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। একই সঙ্গে জানব কোনগুলো পেটের গ্যাস কমায় যে খাবার, এবং গ্যাস্ট্রাইটিসের খাবার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।
কোন খাবার গুলো গ্যাস্ট্রিক এর জন্য দায়ী ?
১. কাঁচা সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার
অনেক সময় অতিরিক্ত আঁশযুক্ত বা কাঁচা সবজি পেট ফাঁপা খাবার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রোকলি, শিম জাতীয় খাবার গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়। যদিও আশঁযুক্ত খাবার শরীরের জন্য উপকারী । আমি আমার এই ওয়েবসাইটে "ফাইবারে পরিপূর্ণ সবজি ফল সমূহ" শিরোনামে একটা লেখা লিখেছি । সেখানে ফাইবার বা আঁশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন ।
২. ডাল ও ডালজাতীয় খাবার
রাজমা, কাবুলি ছোলা, মসুর ডাল বা ছোলার ডাল অনেকের জন্য গ্যাসের খাবার। এগুলো হজম হতে সময় লাগে এবং গ্যাস জমে পেট ফাঁপা হয়।
৩. ভাজাপোড়া ও ঝাল খাবার
অতিরিক্ত তেল, মরিচ ও মশলাযুক্ত খাবার হলো গ্যাস্ট্রিক অথবা অ্যাসিডিটির খাবার। এগুলো পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তবে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক এক জিনিস কি না সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার । এ সম্পর্কে পরবর্তীতে একটি লেখা লিখব ।
পাশাপাশি তেলেভাজা খাবার যেমন: পরোটা, পুরি, সামুচা, চিকেন ফ্রাই – এগুলো গ্যাসের খাবার হিসেবে পরিচিত। এগুলো হজম হতে অনেক সময় নেয় এবং পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি করে। ঝাল খাওয়ার পর অনেকেই পেটে জ্বালা অনুভব করেন, যা আসলে অ্যাসিডিটি বেড়ে যাওয়ার ফল।
৪. ফলমূলের কিছু ধরন
কাঁঠাল, কলা, আনারস, কাঁচা আম ইত্যাদি অনেকের জন্য গ্যাস্ট্রিকের জন্য দায়ী খাবার হিসেবে ধরা হয়। এগুলো পেটে সহজে হজম হয় না এবং গ্যাস তৈরি করে।
৫. সফট ড্রিঙ্ক ও কার্বনেটেড বেভারেজ
কোলা, সোডা বা এনার্জি ড্রিঙ্ক হলো প্রচলিত পেট ফাঁপা খাবার। এগুলোতে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড সরাসরি পেটে গ্যাস তৈরি করে।ঢেকুর, পেট ব্যথা ও অস্বস্তি দেখা দেয়। এটি গ্যাস্ট্রাইটিস রোগীদের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর।
৬. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে তাদের জন্য দুধ, চিজ, মাখন হলো গ্যাসের খাবার। এগুলো হজমে সমস্যা তৈরি করে। তবে এ ক্ষেত্রে এই সমস্যা হবার জন্য নয় ।
৭.অতিরিক্ত পেঁয়াজ ও রসুন
যদিও এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, তবে বেশি খেলে এগুলো গ্যাস্ট্রাইটিসের খাবার হয়ে যায়। বিশেষত কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হলে অ্যাসিডিটি বাড়ায়।
কোন খাবারগুলো অ্যাসিডিটি বাড়ায়?
অতিরিক্ত কফি বা চা
ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার
ফাস্টফুড
টমেটো ও টক জাতীয় ফল
এসব অ্যাসিডিটির খাবার হজমের সময় পাকস্থলীতে জ্বালাভাব বাড়িয়ে দেয়।
গ্যাস্ট্রাইটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবার
যাদের গ্যাস্ট্রাইটিস আছে তাদের উপরে বর্ণিত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি ।এগুলো হলো মূলত গ্যাস্ট্রাইটিসের খাবার যা পাকস্থলীর প্রদাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি লবণাক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা উচিত ।
কোন খাবার পেটের গ্যাস কমায়?
সব খাবারই যে ক্ষতিকর তা নয়। অনেক খাবার আছে যেগুলো হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমাতে কার্যকর।
কলা – প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে।
ডাবের পানি – অ্যাসিড কমাতে সহায়ক।
ওটস ও ভাত – হালকা খাবার, যা সহজে হজম হয়।
সবুজ শাকসবজি – এগুলো পেটের গ্যাস কমায়। আমাদের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা উচিত
আদা ও মৌরি – গ্যাস কমাতে দারুণ কার্যকর।
পুদিনা- পুদিনা পেটের গ্যাস এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে ।
দই- দই পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য পারে । এতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হজমশক্তি বাড়ায় ।
এসব হলো পেটের গ্যাস কমানোর খাবার, যা নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
কাঁঠাল, মূলা, কাবুলি ছোলা, রাজমা – এরা কি আসলেই গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়?
হ্যাঁ, হতে পারে ।
কাঁঠাল আঁশযুক্ত হওয়ায় হজমে সময় লাগে, ফলে গ্যাস হতে পারে।
মূলা অনেকের জন্য পেট ফাঁপা খাবার, কারণ এতে সালফার যৌগ থাকে যা গ্যাস তৈরি করে।
কাবুলি ছোলা ও রাজমা হলো পরিচিত গ্যাসের খাবার, এগুলো হজমে সময় লাগে এবং পেট ফাঁপা করে।
তবে সবার ক্ষেত্রে এই প্রভাব সমান নয়। কারও হজম শক্তি ভালো হলে সমস্যা নাও হতে পারে।
বিশেষ করে কাঁচা বা আধা সেদ্ধ খেলে এই সমস্যা হতে পারে ।
গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধের কিছু সহজ নিয়ম
সময়মতো ও অল্প অল্প করে খাওয়া
ঝাল-মশলা কমানো
ফাস্টফুড এড়ানো
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা
বেশি করে পানি পান করা
সারকথা হলো, গ্যাস্ট্রিক মূলত অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু বিশেষ গ্যাস্ট্রিকের জন্য দায়ী খাবার এর কারণে হয়। তেল-ঝাল, ভাজাপোড়া, কোলা, কফি, ডাল ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিলে অনেকাংশে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়। পাশাপাশি নিয়মিত পেটের গ্যাস কমায় যে খাবার খাওয়া উচিত। মনে রাখবেন, আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসই গ্যাস্ট্রিকের সবচেয়ে বড় নিয়ন্ত্রক।
FAQ (ভিন্নধর্মী প্রশ্নোত্তর)
প্রশ্ন ১: সব ধরণের ডাল কি গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়?
না, সব ডাল নয়। মসুর ডাল তুলনামূলকভাবে সহজে হজম হয়। কিন্তু কাবুলি ছোলা, রাজমা ইত্যাদি বেশি গ্যাস তৈরি করে।
প্রশ্ন ২: কাঁঠাল খেলে কি সবারই গ্যাস হয়?
না, সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। কারও হজম ক্ষমতা ভালো হলে কাঁঠাল খেয়ে সমস্যা নাও হতে পারে।
৩.গ্যাস্ট্রিক কি শুধুমাত্র খাবারের কারণে হয়?
উত্তর: না, খাবার ছাড়াও স্ট্রেস, ঘুমের অভাব ও ধূমপানও গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে।
প্রশ্ন ৪: কোন ফল খেলে গ্যাস কমে?
লেবু, পেঁপে, ও আমড়া হলো কিছু ফল যা হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমাতে কার্যকর।
প্রশ্ন ৫: গ্যাস্ট্রাইটিসের রোগী কি ঝাল একেবারেই খাবেন না?
হ্যাঁ, ঝাল এড়ানোই শ্রেয়। কারণ ঝাল খাবার পাকস্থলীর প্রদাহ বাড়ায়।
প্রশ্ন ৬: সফট ড্রিঙ্ক কি সত্যিই ক্ষতিকর?
অবশ্যই। এগুলো হলো সরাসরি অ্যাসিডিটির খাবার এবং পেট ফাঁপার প্রধান কারণ।