ঘুম আল্লাহ তায়ালার অশেষ নিয়ামতের একটি ।ঘুম আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে বিছানায় শুইয়ে আমরা আরাম বোধ করি। আর সেই ঘুম থেকে আমাদের শরীরের শক্তি ফিরে পাই,সাথে সতেজতাও ফিরে পাই । এখন এই ঘুম কম হলে যেমন সমস্যা তেমন ঘুম অতিরিক্ত হলেও সমস্যা। একটা কথা আছে যে, যেকোনো কিছু অতিরিক্ত হলে ক্ষতি হয় । একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমাইলে যথেষ্ট। আর এর বেশি হলে ক্ষতিকর ।
![]() |
বেশি ঘুম শরীরের জন্য যেমন ক্ষতিকর হতে পারে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে। |
অনেকেই মনে করেন বেশি ঘুম মানেই শরীরের জন্য ভালো, কিন্তু গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত ঘুমের ফলে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রথমে আমরা অতিরিক্ত ঘুম কি সেটা জেনে আসি ।
অতিরিক্ত ঘুম কি ?
প্রশ্ন শুনে অনেকেই চমকে উঠতে পারেন । এটা আবার কেমন প্রশ্ন ? হ্যাঁ, এরকম প্রশ্ন হতেই পারে । যদিও উত্তর সকলেই জানি । জানার ব্যবধান একেক জনের একেক রকম। কিন্তু ঘুমের মাত্রা কতটুকু হলে সেটাকে অতিরিক্ত ধরা হয় ? সেই উত্তর কি জানি । আসুন তা জেনে নেই ।
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিক্ষণ ধরে ঘুমানো কে অতিরিক্ত ঘুম হিসেবে ধরা হয় । প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট।যেটা প্রথমেই বলেছি। এর কম ঘুম যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমকেও বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত ঘুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এটি বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং কাজের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। নিয়মিত ৯-১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে তা ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই বিষয়টা জানার প্রয়োজন যে, অন্যান্য দিনের তুলনায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রতি ঘন্টা অতিরিক্ত ঘুম হার্টের অসুখের আশংকা বেড়ে যায় ১১ শতাংশ। শুধু হার্টের সমস্যা নয় ,ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।এবার আসুন জেনে নেই কি কি ক্ষতি হতে পারে ।
অতিরিক্ত ঘুম শরীরের কী ক্ষতি করে ?
এই বিষয়ে কিছু বিশেষ বিবরণ তুলে ধরা হল :
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস
অতিরিক্ত ঘুম মস্তিষ্কে ধোঁয়াশার মতো অবস্থা তৈরি করে। এতে মনোযোগ কমে যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় বাধা আসে। অনেকে বেশি ঘুমের পর ক্লান্তি অনুভব করেন, যা কর্মক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
স্থূলতা ও ওজন বৃদ্ধি
বেশি ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব এর মধ্যে অন্যতম হলো স্থূলতা। অতিরিক্ত ঘুমালে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়, ক্যালোরি কম খরচ হয়, ফলে শরীরে চর্বি জমতে শুরু করে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে ওজন বেড়ে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
গবেষণা অনুযায়ী, যারা নিয়মিত অতিরিক্ত ঘুমান, তাদের শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
মানসিক সমস্যা
অতিরিক্ত ঘুম ও স্বাস্থ্য এর সম্পর্ক নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, বেশি ঘুমালে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। বেশি ঘুমের কারণে শরীরে রক্তপ্রবাহের গতি কমে গিয়ে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। মানসিক সমস্যাও হতে পারে । ডিপ্রেশনে ভোগা কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দীর্ঘসময় ঘুমালে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনসহ কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলেই মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়ে।
হজমের সমস্যা
অতিরিক্ত ঘুম শরীরের কী ক্ষতি করে তা বোঝা যায় যখন দেখা যায় যে হজম প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব পড়ে। দীর্ঘসময় বিছানায় শুয়ে থাকলে হজমের গতি ধীর হয়ে যায় এবং বদহজম, গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দেখা দেয়।
আয়ু কমে যাওয়া
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা নিয়মিত অতিরিক্ত ঘুমায়, তাদের আয়ু স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় কম হয়। কারণ, এর ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগ শরীরে বাসা বাঁধে, যার বিবরণ ইতোমধ্যে দিয়েছি ।
কাজের ক্ষমতা
অতিরিক্ত ঘুমের জন্য কাজের সময় নষ্ট হয় এবং কাজের ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
সুরক্ষা ঝুঁকি
অতিরিক্ত ঘুমে গাড়ি চালানো, যানবাহন নির্দেশনা অনুসরণ করা, এবং যেসব কাজে সতর্কতা প্রয়োজন তা থেকে মনোযোগ কমে যেতে পারে।
যা করবেন:
ঘুমের পরিবেশ
প্রথমেই ঘুমের পরিবেশ ঠিক করুন । যা আপনার ঘুমের প্রশান্তি এনে দেবে
ঘুমের গুণগত মান
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কতক্ষন ঘুমের প্রয়োজন তা আগেই বলেছি।ঘুমানোর আগে মোবাইল ব্যবহার বা টিভি দেখা বন্ধ করুন।
মাদক পরিহার
ধুমপান,মদ, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল সহ সল মাদক পরিহার করুন।
ব্যায়াম
হালকা ব্যায়াম করুন, এতে শরীর সক্রিয় থাকবে। তাছাড়া প্রতিদিন ভোরে উঠার চেষ্টা করুন ।
মানসিক চাপ কমান
মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন বা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
গুরুত্বপূর্ণ FAQ
১.অতিরিক্ত ঘুমের কুফল কি স্থায়ী?
👉 সাধারণত স্থায়ী হয় না । দীর্ঘদিন অভ্যাসে পরিণত হলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে।
২.অতিরিক্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে?
👉 এতে হতাশা, উদ্বেগ ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. বেশি ঘুম কি আয়ু কমাতে পারে?
👉 হ্যাঁ, গবেষণায় দেখা গেছে বেশি ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব এর মধ্যে আয়ু কমে যাওয়া অন্যতম।
শেষ কথা
অতিরিক্ত ঘুম কখনোই ভালো নয়। বরং এটি শরীরের জন্য নীরব ঘাতকের মতো কাজ করে। অতিরিক্ত ঘুম ও স্বাস্থ্য এর সম্পর্ক স্পষ্টভাবে দেখায় যে বেশি ঘুমলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মাথাব্যথা ও মানসিক সমস্যা বাড়তে পারে। তাই অতিরিক্ত ঘুমের কুফল এড়াতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ঘুমের সময় ঠিক রাখা জরুরি। মনে রাখতে হবে, ঘুম যতটা প্রয়োজন ততটাই উপকারী, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম শরীরের ক্ষতি ডেকে আনে।