আমার দেশে যত সমস্যা আছে তার মধ্যে মাদক সংক্রান্ত সমস্যা সবথেকে বেশি । এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মাদকের প্রতি আসক্ত হচ্ছে । ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় । কোন মতেই তাদের ফেরানো যাচ্ছে না মাদকাসক্ত থেকে । কিন্তু কেন এই আসক্তি ? আছে কি কোন উত্তর ? এর পিছনে কি মাস্টারমাইন্ড আছে ? এমন অনেক প্রশ্ন জন্ম দেয় মনে ।
মাদকে আসক্তির কারণে সমাজ তথা রাষ্ট্রের অবক্ষয় হচ্ছে । হচ্ছে তরুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট । আজকাল বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়ালে অহরহ মাদকে আসক্ত রয়েছে এমন অনেক রয়েছে । কিছু বুঝে হউক বা না বুঝে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকে। প্রথম যারা শুরু করে তাদের কাছে নাকি মাদক দ্রব্য পৃথিবীর সবচাইতে উত্তম বস্তু কিংবা দামী কিছু ।
প্রথম কিছুতেই ভালো হউক বা খারাপ তা অনেকের কাছে ভালো । মাদকের বেলায় তাই বলা যায় । আর এতেই তরুণ প্রজন্ম জড়িয়ে যাচ্ছে । কিন্তু তারা এই মাদক দ্রব্যের প্রতিক্রিয়াটা বুঝতে পারছে না । মারাত্মক পর্যায়ে গেলে এমন স্বাদের পিছনে সীমাহীন ক্ষতি হয়ে যায় । চাইলেও ফিরে আসা যায় না । বা ঠিক হয় না । এমনকি একটু আধটু হলে না ।
অনেকে বলে মনে আমি তো খাই না । Just enjoy এর জন্য বন্ধু বান্ধবদের সাথে একটু আধটু খাই । আরে ভাই শুরুটা তো এখানে থেকেই হয় । যত নষ্টের মূল তো প্রথম থেকেই । একটু আধটু মানেই আপনি খাওয়া শিখছেন । নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করছেন । বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাদক দ্রব্য ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ালে দেখা যায় কেউ গাঁজা ,কেউ মদ, কেউ ফেন্সিডিল, কেউবা ইয়াবা, আবার কেউবা সবই সেবন করছে ।
মদ,গাঁজা,আফিম,ইয়াবা, তামাক,মরফিন,চরস,কোকেন ইত্যাদি আমাদের দেশে প্রচলিত । আবার নেশা সৃষ্টি করে এমন বস্তুকেও মাদক বলা যায় । তার একটি হল ঘুমের ওষুধ।
মাদক কি ?
মাদক দ্রব্য হলো সাধারণত মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা উৎপন্ন করে এমন পদার্থ বা বস্তুগুলোর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। মাদক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে মানব সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও অসুস্থতার বৃদ্ধি হতে পারে। মাদক দ্রব্যের মধ্যে অ্যালকোহল, মারিজুয়ানা, হেরোইন, কোকেইন, মেথামফেটামিন, এসিড, ইক্সট্যাসি, পাইথন, ইত্যাদি ব্যবহারকারী হতে পারে এর আগে কিছু উল্লেখ করেছি । এই মাদক দ্রব্যের ব্যবহারের ফলে মানবের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পরে ।
মাদক দ্রব্যে আসক্ত হওয়ার কারণ কি ?
এখন কথা হচ্ছে মাদক দ্রব্যে আসক্ত হওয়ার কারণ কি ? মানুষ নতুন কিছু দেখলে তার প্রতি একটু আকর্ষণ অনুভব করে । মানে এটা চিরাচরিত স্বভাব । যে কোন কিছুর প্রতি প্রথমত আসক্তি জাগে । কিন্তু তাই বলে মাদকের প্রতি ? নিশ্চয়ই কিছু না কিছু কারণ আছে , তার জন্য আসক্ত হয় ।
মাদক দ্রব্যে আসক্তির কারণ বিভিন্ন হতে পারে যেমনঃ সামাজিক পরিবেশের প্রভাব,পারিবারিক অবস্থা, মানসিক অবস্থা, সহজলাভ, পুরোপুরি আনন্দ বা মানসিক অবস্থা প্রাপ্তির জন্য মাদক ব্যবহার, হতাশা,পারিবারিক কলহ, কৌতুহল , অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য, বন্ধুদের প্রভাব ইত্যাদি রয়েছে নানা কারণ ।
এছাড়াও, কিছু লোকজন বা এ জাতীয় গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করা হয় যারা মাদক দ্রব্য সেবন করেন এবং তাদের মাধ্যমে অন্যান্যদের প্রভাবিত করেন। এছাড়াও, মাদক ব্যবহার মানুষের মধ্যে ক্রমাগত ব্যবধান সৃষ্টি করতে পারে যা আসলেই মাদক ব্যবহারের পরিণাম হিসাবে প্রকাশ পায়।
মাদকের ব্যবহারে কি কি ক্ষতি হতে পারে ?
মাদক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে,অথবা বলা যেতে পারে মাদক দ্রব্যের কুফল।যেমন:
শারীরিক ক্ষতি: মাদক দ্রব্য ব্যবহার শারীরিক স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ক্ষয়রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সার, মস্তিষ্কের অপূর্ণ বিকাশ ইত্যাদি।
মানসিক ক্ষতি: মাদক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে মানসিক অসুস্থতা হতে পারে, যেমন ডিপ্রেশন, অতিরিক্ত চিন্তা, মনের অস্থিরতা, উদাসীন, এবং মস্তিষ্কের ম্যানিপুলেশন।
সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতি: মাদক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে সামাজিক স্থিতিতে পতন, পরিবারের বিপর্যয়, আর্থিক সমস্যা, বেকারত্ব, অপরাধ, আইনের অধীন পড়া, এবং অন্যান্য আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বিভিন্ন রোগ : কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মাদকের কারণে তাদের HIV, হেপাটাইটিস-বি এর মত রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে ।
এছাড়াও, মাদক ব্যবহার সংক্রান্ত পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারে এবং অন্য লোকদেরকেও আপাতত আক্রান্ত করতে পারে।
মাদক দ্রব্যে আসক্ত হলে করণীয় কি ?
মাদক ব্যবহারের প্রতিরোধ করার জন্য কিছু করণীয় নিম্নরূপঃ
শিক্ষা ও সচেতনতা: সমাজে মাদক দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করা: সমাজে প্রয়োজনে শিশুদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করা প্রয়োজন।
মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধকরণ: সরকার এবং সামাজিক সংগঠনগুলির মাধ্যমে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিষিদ্ধকরণে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
মাদক ব্যবহারকারীদের জন্য সাহায্য ও চিকিৎসা: মাদক ব্যবহারকারীদের জন্য সাহায্যকে উন্নত করা ও মাদক না গ্রহণের জন্য বুঝানো এবং চিকিৎসার সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন।
পরিবারের সমর্থন: মাদক দ্রব্য ব্যবহারকারীদের পরিবারের সমর্থন ও প্রেরণা প্রয়োজন যাতে তারা মাদক দ্রব্য ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে পারেন।
সুস্থ জীবনযাপন: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পর্যাপ্ত খাবার, পর্যাপ্ত সময়, ও নির্দিষ্ট নিয়মিত ব্যায়াম মাদক ব্যবহারের প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।