মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়।

মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে ? প্রাণখুলে হাসতে পারছেন না । বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারছেন না ? লজ্জায় নিজেকে দূরে রাখছেন ? সমাধান জেনে নিন । মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন খাদ্য পদার্থের কারণে হতে পারে, মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থাকতে পারে, মুখের পরিস্থিতি বা স্বাস্থ্যের অব্যবস্থা হতে পারে। মাংস, প্রাণীর পদার্থ, পানির দুর্গন্ধ মুখে প্রভাব করতে পারে। অন্যভাবে, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হতে পারে যেমন খাবারের গন্ধ উচ্চ হওয়ার কারণে হতে পারে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় – Brushing teeth to remove bad breath
নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিন (Brush daily) – মুখের দুর্গন্ধ দূর রাখতে সাহায্য করে।




মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার সমস্যা থাকলে, সেটির পিছনের কারণ বিশেষভাবে চিন্তা করে স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।



মুখে দুর্গন্ধের কারণ কি ? 

মুখে দুর্গন্ধ দূর করার আগে এর মূল কারণগুলো জানা জরুরি। সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলো মুখে দুর্গন্ধের জন্য দায়ী:



অপরিষ্কার মুখগহ্বর

 দাঁতের মধ্যে জমে থাকা খাবারের কণা এবং প্লাক থেকে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিয়ে দুর্গন্ধ তৈরি করে।




শুষ্ক মুখ

 লালা মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু পর্যাপ্ত লালা না হলে দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।




খাবার

রসুন, পেঁয়াজ, কফি, মশলাদার খাবার প্রভৃতি খাওয়ার পর হতে পারে।




ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য

 এগুলো মুখের ত্বক ও দাঁতের উপর প্রভাব ফেলে এবং দুর্গন্ধ তৈরি করে।




চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা

গ্যাস্ট্রিক, টনসিলের ইনফেকশন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি শারীরিক জটিলতাও এর কারণ হতে পারে।



মুখের দুর্গন্ধ এড়াতে কি কি করা দরকার ? 



মুখের দুর্গন্ধ এড়াতে যা করবেন: 



প্রাকৃতিক উপায়ে দুর্গন্ধ দূর করা নিরাপদ এবং বেশ কার্যকর। আপনি দুইভাবে করতে পারেন একটি হল ঘরোয়া উপায় আর একটি হল চিকিৎসা পদ্ধতিতে । 


নিচে কিছু ঘরোয়া সমাধান দেওয়া হলো:




সঠিকভাবে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করুন 


প্রতিদিন অন্তত দুবার ব্রাশ করা এবং দিনে একবার ফ্লস ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। জিহ্বাও ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে, কারণ জিহ্বার ওপর জমে থাকা জীবাণুই অনেক সময় মুখে দুর্গন্ধের মূল কারণ।




লবণ-পানির গার্গল

প্রতিদিন সকালে এবং রাতে লবণ মিশ্রিত কুসুম গরম পানি দিয়ে গার্গল করলে মুখের জীবাণু ধ্বংস হয় এবং দুর্গন্ধ দূর হয়।




তুলসী পাতা ও পুদিনা পাতা চিবানো

 এগুলো দুর্গন্ধ হ্রাস করে এবং মুখে সজীবতা এনে দেয়।




লেবু ও পানি

 লেবুর রস মিশিয়ে গরম পানি পান করলে শরীর ডিটক্স হয় এবং মুখে দুর্গন্ধ কমে।




পর্যাপ্ত পানি পান 

পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুখে লালার প্রবাহ বাড়ে, যা মুখ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।






চিকিৎসা ভিত্তিক সমাধান


যদি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে না কমে, তাহলে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।




ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন

 দাঁতের ক্যাভিটি, ইনফেকশন বা পেরিওডন্টাল রোগ দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে। একজন ডেন্টিস্ট আপনার মুখ পরীক্ষা করে যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারবেন।




মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন

 জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখে দুর্গন্ধ হ্রাস করে। তবে এটি অস্থায়ী সমাধান, মূল কারণ দূর করতে হবে।




টনসিল পরীক্ষা করান

যদি এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং গলায় অস্বস্তি থাকে, তাহলে টনসিল সংক্রান্ত কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা পরীক্ষা করা দরকার।




গ্যাস্ট্রিক বা হজমজনিত সমস্যা

 অনেক সময় পেটের গ্যাস বা হজমের সমস্যা থেকেও হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।






খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকা

কিছু খাবার মুখের দুর্গন্ধ বাড়াতে পারে, যেমন পালং শাক, পেঁপে, বাঁধাকপি ইত্যাদি, তবে পুষ্টির দিক বিবেচনায় এগুলো পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত , একেবারে বাদ দেওয়া উচিত না।




লবঙ্গ

 লবঙ্গ যা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এবং মাড়ি ফোলা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমায় এবং অন্যান্য দাঁতের সমস্যা যেমন রক্তপাত এবং দাঁতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি কমায়। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি কয়েক টুকরো লবঙ্গ মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন।




খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন


খাদ্যাভ্যাসেও কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন যাতে মুখে দুর্গন্ধ দূরে থাকে:



পিঁয়াজ, রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে 



ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।



বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল খান।



চিনিযুক্ত ও অত্যধিক প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।


খাবারের পর কাঁচা গাজর, শসা বা আপেল চিবিয়ে খাওয়া মুখ পরিষ্কারে সাহায্য করে।


দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয় কিনা তা লক্ষ্য করুন। কারো কারো ক্ষেত্রে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।



নিয়মিত চেকআপ ও সচেতনতা


নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ এবং মুখের যত্নে সচেতনতা মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়ক। বছরে অন্তত দুইবার দাঁতের ডাক্তার দেখানো উচিত। পাশাপাশি মুখ পরিষ্কারে ব্যবহৃত ব্রাশ ও অন্যান্য সামগ্রী সময়মতো পরিবর্তন করা দরকার।




এই অস্বস্তিকর হলেও এর সহজ সমাধান রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিজের মুখগহ্বরের যত্ন নিন, খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা আনুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন — তাহলেই মুখে দুর্গন্ধ থাকবে না।




FAQ



১. মুখে দুর্গন্ধ কি কোনো রোগের লক্ষণ?


হ্যাঁ, অনেক সময় ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, টনসিল ইনফেকশন বা লিভারের জটিলতার ইঙ্গিত হতে পারে।




২. সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া কি স্বাভাবিক?


হ্যাঁ, ঘুমের সময় লালার প্রবাহ কমে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয় এবং সকালে দুর্গন্ধ হতে পারে, যা মুখ ধোয়ার পর কমে যায়।




৩. মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে কোন মাউথওয়াশ ভালো?


ক্লোরহেক্সিডিন, সিটিলপাইরিডিনিয়াম ক্লোরাইড, অথবা জিংকযুক্ত মাউথওয়াশ এই সমস্যা কমাতে কার্যকর। তবে নিয়মিত ব্যবহারের আগে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো।





৪.মুখে দুর্গন্ধ কি কেবল মুখগহ্বরের সমস্যার জন্য হয়?


না, মুখের বাইরের কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক, টনসিল বা কিডনির সমস্যা থেকেও হতে পারে।




৫. মুখে দুর্গন্ধ চিরতরে দূর করা সম্ভব কি?


সম্ভব, যদি নিয়মিত মুখের যত্ন নেওয়া হয়, খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম