আমরা হয়তো অনেকেই থ্যালাসেমিয়া নামক রোগটির সাথে পরিচিত। আবার হয়তো অনেক অপরিচিত । পরিচিতি ও অপরিচিত সকলের জন্য এই থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে জানা অত্যাবশ্যক। কেননা এটা মানুষের উপর অনেকটা প্রভাব ফেলে এটা কোন ঐ ক্যান্সার রোগ নয় । তাই আজকের লেখাটি মনোযোগ সহ পড়ুন । এখন প্রথম প্রশ্ন হল থ্যালাসেমিয়া কি ?
থ্যালাসেমিয়া কি ?
থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মজনিত রক্ত রোগ যা রক্তের হেমোগ্লোবিন প্রোটিনের উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই রোগে হেমোগ্লোবিনের নির্মাণে প্রধানত এই সমস্যায় সংক্রান্ত জন্মজনিত বৈশিষ্ট্য থাকে। এই রোগে মৌলিক হেমোগ্লোবিন অনুপস্থিত হয়ে যায় বা অপরিমাণে হেমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকে। এই অবস্থায় রক্তের অধিকাংশ পানি বা প্লাজমার হয়ে থাকে। এর পরিণামে মানব শরীরের সাধারণ কাজকর্মে অসুবিধা হয়।
এই রোগ বংশানুক্রমিক হয়ে থাকে । বাংলাদেশ এর দিক থেকে তাকালে এই সমস্যার একটি গুরুত্ব দেয়া উচিত। যেহেতু এটা বংশগত তাই ধারণা করা হয় বাংলাদেশ প্রতি বছরে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে পৃথিবীতে আসে । অর্থাৎ সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর এই রোগ থাকে । বাবা-মা এ রোগ আক্রান্ত থাকলে সন্তানদের জন্য ঝুঁকি থাকে । তবে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তখনই যখন নিকট আত্মীয় যেমন: চাচাতো-মামাতো- খালাতো-ফুপাতো অনুরূপ আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হলে ।
থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ গুলো কি কি?
থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
অবসাদ,
ফ্যাকাশে চেহারা,
পেটে ব্যথা অথবা ফোলা ভাব
হাড়ের বিকৃতি
শরীরের অস্থিরতা
দুর্বলতা অনুভব
জন্ডিস
অতিরিক্ত আয়রণ
প্রস্রাবের রঙ গাঢ়
শ্বাসকষ্ট,
প্লীহা বড় হওয়া,
খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি ।
এই লক্ষণগুলো সাধারণত থ্যালাসেমিয়ার বিভিন্নতা দেখা যেতে পারে। তবে, এই লক্ষণগুলি অন্যান্য রোগের জন্যও প্রয়োজনীয় হতে পারে, তাই যদি কোন লক্ষণ দেখা যায়, তা নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ কি ?
থ্যালাসেমিয়ার মূল কারণ হলো জন্মজনিত অথবা উত্তেজনাত্মক অবস্থার ফলে হেমোগ্লোবিন প্রোটিনের নির্মাণে সমস্যা হওয়া। এই সমস্যার কারণে হেমোগ্লোবিন সঠিকভাবে উৎপাদন হয় না, যা রক্তের প্রতিষ্ঠার কাজে গুরুত্বপূর্ণ।
থ্যালাসেমিয়া দুটি প্রধান ধরণে বিভক্ত হয়: আলফা থ্যালাসেমিয়া এবং বিটা থ্যালাসেমিয়া। আলফা থ্যালাসেমিয়াতে হেমোগ্লোবিন আলফা সাবইউনিটের প্রতিষ্ঠার সমস্যা থাকে, যেখানে বিটা থ্যালাসেমিয়াতে হেমোগ্লোবিন বিটা সাবইউনিট প্রতিষ্ঠার সমস্যা থাকে।
এই রোগের উৎপাদন সাধারণত উত্তেজনাত্মক বা জন্মজনিত কারণে ঘটে, যা মাতার ও পিতার জন্মগত জীবনকালে থ্যালাসেমিয়ার অবস্থানের পরিমাণ বা ধরন নির্ধারণ করে। অন্যদিকে, সংক্রামক এবং অতিরিক্ত রক্ত হারানো, রোগ প্রতিরোধ বা অন্যান্য কারণে থ্যালাসেমিয়া উত্তেজিত হতে পারে।
থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় কিভাবে করা হবে ?
থ্যালাসেমিয়ার রোগ নির্ণয় করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা হয়:
রক্ত পরীক্ষা: থ্যালাসেমিয়ার নির্ধারণের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে হেমোগ্লোবিনের পরিমাণ এবং অন্যান্য রক্ত উপাদানগুলি মূল্যায়ন করা হয়।
জেনেটিক টেস্টিং: জেনেটিক টেস্টিং একটি অন্যত্র ব্যবহৃত পদ্ধতি যা থ্যালাসেমিয়ার জন্য সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। এই পদ্ধতিতে জেনেটিক পরীক্ষা করে রক্তের প্রতিষ্ঠার সমস্যা শনাক্ত করা হয়।
পরীক্ষা রেকর্ড: ব্যক্তিগত চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুযায়ী থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পরীক্ষা রেকর্ড মেনে রাখা উচিত। এটি চিকিৎসার উন্নতি এবং পরিচর্যা সম্পর্কে মানসিক প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসার পরামর্শ: নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করুন। তারা আপনাকে সঠিক শনাক্তকরণ, চিকিৎসা পর্যায় এবং পরিচর্যা প্ল্যান সরবরাহ করবেন।
অতিরিক্ত পরামর্শের জন্য সর্বদা নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
থ্যালাসেমিয়া হলে করণীয় কি ?
যদি আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ বা শনাক্তকরণ অনুভব করেন, তাহলে কিছু করণীয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন: সঠিক শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
পরীক্ষা করান: থ্যালাসেমিয়ার নির্ধারণের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। বিশেষ করে বিয়ের আগে ।
চিকিৎসা অনুসারে চলুন: চিকিৎসা প্রদানের পর পরামর্শ অনুযায়ী যাতে নিরাপত্তা ও সঠিক পরিচর্যা হয়, তা মেনে চলুন।
সঠিক আহার পরিচর্যা: কিছু থ্যালাসেমিয়ার রোগীর জন্য ফলিক এসিড, ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় ।
সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন: থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদান করুন।
অতিরিক্ত আয়রণ : অতিরিক্ত আয়রণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন ।
নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চিকিৎসা করুন: আপনার রোগের ধরণ এবং আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী চিকিৎসা প্রাপ্ত করুন।
থ্যালাসেমিয়া কি ভালো হয় ?
থ্যালাসেমিয়া কি ভালো হয় ? এ প্রশ্নের উত্তর এভাবে হতে পারে যে যেহেতু এটা বংশগত বৈশিষ্ট্য কারণে হয় । থ্যালাসেমিয়ার সবচেয়ে উপযোগী চিকিৎসা হল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন । এ প্রতিস্থাপন হতে হবে রোগীর যখন ১০-১২ বছর হয় । তবে শর্ত থাকতে হবে যে উক্ত শিশুর শরীরে বেশি আয়রন থাকতে হবে । আর তখন রোগীর সুস্থ বা ভালো হওয়া সম্ভব ।
থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মজনিত রক্ত রোগ যা অনেক লোকের জীবনে কঠিন দুঃখ ও অসুখের কারণ হতে পারে। এটি একটি অবেলা রোগ যা মন্দ জীবনযাত্রার কারণে রোগীর জীবন পরিবর্তন করতে পারে এবং প্রয়াসকে বেশি করে ।
তবে, উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার মারাত্মক দিকগুলি মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রাপ্ত করে এবং নিয়মিতভাবে অনুসরণ করে থ্যালাসেমিয়ার প্রভাবগুলো নিরাপদ করা সম্ভব। অনেক মামলায়, সঠিক চিকিৎসার পরিপূর্ণতা বা বৃদ্ধির সাথে ব্যক্তিগত জীবনের মান পরিবর্তন এবং অসুখ ভালো হতে পারে।
তবে, থ্যালাসেমিয়াকে ভালো বা খারাপ বলা খুব সহজ নয়, কারণ এটি নির্ভর করে ব্যক্তির অবস্থা, রোগের ধরণ, চিকিৎসা এবং সমর্থনের উপলব্ধির উপর। সঠিক চিকিৎসা প্রাপ্ত করা যাবার সাথে সাথে এই রোগের অসুখের প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কি বিয়ের জন্য উপযুক্ত ?
থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হতে পারেন, তবে এটি সাম্প্রতিক চিকিৎসায় অথবা স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে নির্ধারিত হতে পারে। ব্যক্তির সাম্প্রতিক চিকিৎসা অবস্থা, চিকিৎসা পরিচালনা, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পর্যায়ের ভিত্তিতে বিয়ের জন্য অনুমোদিত হতে পারে।
একটি থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ে করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:
চিকিৎসার পরামর্শ: ব্যক্তির চিকিৎসার পরিস্থিতি এবং বিয়ে করার যোগ্যতা পর্যালোচনা করার জন্য নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
সমর্থন ও সাহায্য: ব্যক্তির স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে বিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত এবং যেভাবে সময়ে সাহায্য প্রদান করা যাবে তা বিবেচনা করা উচিত।
সাময়িকভাবে চিকিৎসা: যদি ব্যক্তির অবস্থা ভালো না থাকে বা রোগ প্রভাবিত হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসা এবং সামর্থ্য নিরীক্ষণ করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি চিকিৎসা: চিকিৎসার পরিস্থিতি এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্য অবস্থা বিবেচনা করে বিয়ের পরিকল্পনা করা উচিত।
এই সমস্ত বিষয়গুলোর আলোকে, একটি থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ে পরিকল্পনা করার আগে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত যাতে সঠিক সমর্থন ও চিকিৎসা প্রাপ্ত হতে পারেন।