আঁচিল আমরা সকলেই চিনি । ছোট থেকে বড় এমন কেউ নেই যে আমরা তা না চিনি । এক প্রকার ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। এটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে উঠতে দেখা যায়।দেখতে কিছুটা ফোস্কার মত। অনেকের হয় কালো বর্ণ ধারণ করে । আবার অনেকের কিছুটা কম কালো । তবে যাই হোক এটি শরীরের সৌন্দর্যের বারোটা বাজায় । তবে অবহেলা করলে চলবে না । এতে কিন্তু ক্যানসারের ভাইরাস লুকায়িত থাকে। এই আঁচিলকে কিভাবে দূর করে শরীরের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনবেন তাই নিয়ে আজকের পোষ্ট । প্রথমত আমরা কারণ জানব ।
আঁচিল কেন হয় ?
এটা মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) দ্বারা সৃষ্ট হয়। ১০০-এরও বেশি প্রজাতির HPV রয়েছে, যার কয়েকটি সরাসরি আঁচিলের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসটি ত্বকের কাটা, ফাটল বা চামড়া ক্ষতস্থানে প্রবেশ করে এবং সেখানে কোষ বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে সৃষ্টি করে।
আঁচিল কি বিপজ্জনক?
আঁচিল সাধারণত তেমন বিপদজনক নয়, এটি ত্বকের উপর ছোট এবং রুক্ষ বৃদ্ধি।
তবে হঠাৎ রঙ, আকার বা গঠন পরিবর্তন হলে এটি মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
যা করতে পারেন:
১.কলার খোসা: কলা খেয়ে খোসাটা ফেলবেন না। খোসার উৎসেচক ত্বককে রক্ষা করে। রোজ কলার খোসা আঁচিলের উপর ঘষলে ফল পাবেন।
২.অ্যালোভেরা জেল : অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। আঁচিলের উপর কিছু পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ম্যাসেজ করুন। ত্বকে জেল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। দিনে তিনবার ব্যবহার করতে হবে ।
৩.আলু: কাঁচা গোল আলু আঁচিল দূর করার দারুণ এক প্রাকৃতিক উপাদান। সতেজ একটি কাঁচা আলু গোল গোল করে কাটুন। সেটি দিয়ে দিনে কয়েকবার আঁচিলের ওপর ঘষুন। ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।
৪.রসুন : রসুনের মাধ্যমেও সহজে দূর করার একটা অনবদ্য উপায় । কয়েকটি রসুনের কোয়া কুচি করে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্টটি ত্বকের আঁচিলের উপর লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে বেশিক্ষণ রাখবেন না, ক্ষতি হতে পারে।
৫. বেকিং পাউডার: ক্যাস্টর অয়েল এবং বেকিং পাউডারের একটি মিশ্রণ তৈরি করে মিশ্রণটা আঁচিলের উপর ভালো করে লাগিয়ে বেঁধে রাখুন । আর সারারাত এভাবে রাখুন। দু-তিন দিন পর থেকেই ফল পেতে শুরু করবেন। ক্রমশ এটা অদৃশ্য হয়ে যাবে।
আঁচিল একটি সাধারণ এবং অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর নয় এমন সমস্যা হলেও, এটি ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে হওয়ায় প্রতিরোধ ও সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অন্যের ব্যক্তিগত জিনিস ব্যবহারে সচেতন থাকলে আঁচিলের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। তবে যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে, আকারে বা রঙে পরিবর্তন আসে বা ব্যথা দিতে শুরু করে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
১. ভিটামিনের অভাবে কি আঁচিল হয়?
না, এটা সরাসরি ভিটামিনের অভাবে হয় না। তবে দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (যেটা ভিটামিনের অভাবে হতে পারে) থাকলে শরীর ভাইরাস প্রতিরোধে অক্ষম হয় এবং এটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষ করে ভিটামিন A, C, এবং E রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
২. আঁচিল কি ছোঁয়াচে?
হ্যাঁ, ছোঁয়াচে হতে পারে। এটি সরাসরি ত্বক-ত্বক সংস্পর্শে বা পরোক্ষভাবে (যেমনঃ তোয়ালে, জুতা, জিমের যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মাধ্যমে) একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে।
৩. আঁচিল কি চুলকায়?
সব চুলকায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই চুলকানির অনুভূতি হতে পারে, বিশেষ করে যখন এটা শুকাতে থাকে বা আক্রান্ত স্থানে ঘর্ষণ হয়।
৪. আঁচিল কি ব্যথা হয়?
সাধারণত ব্যথাহীন, কিন্তু পায়ের তলায় বা ঘর্ষণযুক্ত স্থানে হলে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া যদি ইনফেকশন হয় বা খুঁটে ফেলা হয়, তাহলে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
৫. আঁচিল কি ভালো হয়?
হ্যাঁ, অধিকাংশই নিজে থেকেই ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে সেরে যায়। তবে দীর্ঘস্থায়ী হলে বা বেশি ছড়ালে চিকিৎসা জরুরি হয়ে ওঠে।
৬. আঁচিল কি ক্যান্সারের লক্ষণ?
সাধারণ এটা ক্যান্সার নয়। তবে কিছু প্রজাতির HPV (বিশেষ করে যৌনাঙ্গের আঁচিল) দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের মাধ্যমে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে, যেমনঃ সার্ভিকাল ক্যান্সার। তাই সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৭. আঁচিল কত দিনে সারে?
প্রাকৃতিকভাবে অনেক আঁচিল ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
৮. আঁচিল কাটলে কি সমস্যা হয়?
হ্যাঁ, এটা কাটা বা খোঁচানো ঠিক না। এতে রক্তপাত, সংক্রমণ এবং ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া অন্যত্র নতুন আঁচিলও হতে পারে।
৯. আঁচিল কি বংশগত হতে পারে?
না, বংশগত নয়। এটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণজনিত, তবে পরিবারে একজন থাকলে কাছাকাছি থাকায় অন্যদেরও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
১০. গৃহস্থালি উপায়ে আঁচিলের চিকিৎসা করা যায় কি?
হ্যাঁ, কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যেমন – অ্যাপল সিডার ভিনেগার, লেবুর রস, রসুন ব্যবহার করা হয়। তবে এগুলোর কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে পুরোপুরি প্রমাণিত নয় এবং ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি।
১১. শিশুদের আঁচিল হলে কী করণীয়?
শিশুদের ইমিউন সিস্টেম তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় তারা সহজে আক্রান্ত হয়। ঘরোয়া উপায়ে না গিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১২. আঁচিল আবার ফিরে আসতে পারে কি?
হ্যাঁ, পুরোপুরি সেরে যাওয়ার পরেও HPV ভাইরাস শরীরে সক্রিয় থাকলে আবারও হতে পারে। তাই চিকিৎসা শেষ হলেও সতর্কতা জরুরি।
১৩. আঁচিলের জন্য কোন ডাক্তার দেখানো উচিত?
ডার্মাটোলজিস্ট বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াই শ্রেয়। প্রয়োজনে তিনি সার্জন বা অনকোলজিস্টের পরামর্শও দিতে পারেন।
১৪. আঁচিলের গায়ে কালো দাগ বা রক্ত দেখা গেলে কী করব?
এটি অস্বাভাবিক লক্ষণ হতে পারে। এটা যদি রঙ পরিবর্তন করে, রক্ত পড়ে বা দ্রুত বেড়ে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত – কারণ এটি ক্যান্সার বা প্রি-ক্যান্সারাস অবস্থার ইঙ্গিতও হতে
পারে।
১৫. কত ধরনের আঁচিলের জন্য চিকিৎসা নিতে হয়?
যদি এটা ব্যথা দেয়, ছড়ায়, রঙ বা আকার পরিবর্তন করে, দীর্ঘদিন থেকে যায় বা সৌন্দর্যগতভাবে সমস্যা তৈরি করে, তাহলে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।