স্বপ্নদোষ কি ?
স্বপ্নদোষ হলো এমন একটি শারীরিক ক্রিয়া যেখানে গভীর রাতে বীর্যপাত ঘটে। সাধারণত এটা বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই শুরু হয় । সময় হিসেবে ধরা যায় বয়স ১৩ থেকে । এটা যৌন উত্তেজক অবস্থায় হতে পারে , নাও হতে পারে ।তবে এটা কোন রোগ নয় । এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে এটা যদি কোন রোগই না হয় তাহলে কি ? দেখেন এটা ছেলে অথবা মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই হয় । পুরুষ যখন বীর্য ধরে রাখে তখন বীর্য থলি পুর্ণ হয়ে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। এই অবস্থায় তখন বীর্য পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তখন ঘটনাটি ঘটে যেমন একটা গ্লাসে পানিপূর্ণ হওয়ার পর পানি ঢাললে যা হয় তাই আর কি । এছাড়াও রয়েছে অতিরিক্ত হস্তমৈথুন, লিঙ্গের পেশীর দুর্বলতা ইত্যাদি। এখন যেহেতু এটা কোন রোগ নয় তাই এটার জন্য কোন ঔষধ সেবনও নয় ।
স্বপ্নদোষ বন্ধে যা যা করবেন:
১. প্রথমেই বলব মেয়েদের নিয়ে উত্তেজক কল্পনা বন্ধ করুন। এটা হচ্ছে প্রথম চিকিৎসা।
২. যৌন উত্তেজনা অনুভূত হয় এমন কোন মুভি বা সিরিজ দেখবেন না । ইন্টারনেট ও মোবাইলের যুগে নানা রকম যৌন উদ্দীপক ছবি, ভিডিও বা লেখা সহজলভ্য। এসব কনটেন্ট থেকে নিজেকে দূরে রাখলে মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমবে এবং এটা কমতে শুরু করবে।
৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করুন । রাত্রিকালীন প্রস্রাবের চাপও স্বপ্নদোষের একটি কারণ হতে পারে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করে নিলে চাপ কমে এবং এই সমস্যা কমে যেতে পারে।
৪. এই সমস্যা বন্ধে অশ্বগন্ধার ভূমিকা পালন করে। তাই এটি ব্যবহার করুন
৫.ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে শরীরের রক্তসঞ্চালন ভালো থাকে এবং স্নায়ুব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রিত থাকে। ফলে এই সমস্যা হওয়ার প্রবণতা কমে। বিশেষ করে সকালের হাঁটা বা হালকা দৌড় কার্যকর হতে পারে।
৬. রাতে খাবারের পর সাথে সাথে ঘুমাতে যাবেন না ।
৭.রাত জাগা পরিহার করুন
রাত জাগলে মস্তিষ্কের বিশ্রাম ব্যাহত হয়। এতে স্বপ্নের সময়কাল দীর্ঘ হয় এবং অপ্রত্যাশিতভাবে এটা হতে পারে। নিয়মিত রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল-টিভি বন্ধ রাখা এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৮.দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ কমান
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ শরীরের হরমোনে প্রভাব ফেলে, যা ঘন ঘন স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন, প্রার্থনা, ইয়োগা কিংবা হালকা ব্যায়াম এই দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।
৯. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন:
খাবারের সাথে আমাদের শরীরের নানা ক্রিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত তেল, মসলা ও উত্তেজক খাবার যেমন: কাঁচা মরিচ, লাল মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে উত্তেজনা বাড়ে। তাই এই ধরনের খাবার পরিমাণমতো কমিয়ে দিন। এর পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল এবং সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন।এই সমস্যা বন্ধে লাউ খেতে পারেন ।
১০.সঠিক ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা
ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ একজন মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। নিয়মিত প্রার্থনা, নামাজ, ধ্যান ইত্যাদি মানসিকভাবে স্বচ্ছতা আনে এবং এটা কমে।
১১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি উপরের কোনো উপায় কাজ না করে এবং এটা অতিরিক্ত পরিমাণে হতে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কখনো কখনো হরমোন বা স্নায়ুব্যবস্থার সমস্যাও এর পেছনে দায়ী হতে পারে।
FAQ (প্রশ্নোত্তর):
স্বপ্নদোষ কতদিন পর পর হয়?
এটা সবার জন্য এক রকম নয়। কারো সপ্তাহে একবার, কারো মাসে একবারও হতে পারে। এটি বয়স, মানসিক অবস্থা ও শারীরিক ফিটনেসের ওপর নির্ভর করে।
অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণ কি ?
উত্তেজক কনটেন্ট দেখা, মানসিক চাপ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অনিদ্রা ইত্যাদি অতিরিক্ত স্বপ্নদোষের কারণ হতে পারে।
স্বপ্নদোষ হলে কি শরীরের ক্ষতি হয়?
স্বাভাবিকভাবে এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তবে অতিরিক্ত হলে মানসিক দুশ্চিন্তা ও সাময়িক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
স্বপ্নদোষ কত বছর পর্যন্ত হয়?
সাধারণত কিশোর বয়সে শুরু হয় এবং মধ্যবয়স পর্যন্ত হতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি কমে আসে।
স্বপ্নদোষ হলে শরীর দুর্বল হয় কেন?
প্রতিবার বীর্যপাতের ফলে শরীর কিছু শক্তি হারায়। যদি ঘনঘন হয়, তবে শরীর দুর্বল লাগতে পারে। তবে এটি সাময়িক এবং বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে ঠিক হয়ে যায়।
স্বপ্নদোষ কি খারাপ?
ইহা খারাপ নয় যদি তা স্বাভাবিক পরিমাণে হয়। এটি পুরুষদের শরীরের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ঘটনা।
স্বপ্নদোষ কি কোন রোগ?
না, ইহা কোনো রোগ নয় যা প্রথমেই বলেছি। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় হলে এটি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন।
স্বপ্নদোষ কি প্রতিরোধ করা যায়?
হ্যাঁ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, শরীরচর্চা এবং উত্তেজক কনটেন্ট এড়িয়ে চললে ইহা প্রতিরোধ করা সম্ভব। যা আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন না দেখলেও কি এই সমস্যা হতে পারে?
হ্যাঁ, অনেক সময় আপনি স্বপ্ন মনে না রাখলেও দেহের ভেতরে উত্তেজনা বা স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়ায় ইহা হতে পারে।
অবিবাহিতদের মাঝে স্বপ্নদোষ বেশি হয় কেন?
অবিবাহিত পুরুষদের মাঝে শারীরিক চাহিদা পূরণের কোনো স্বাভাবিক পথ না থাকায় বেশি হতে দেখা যায়। এটি শরীরের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
স্বপ্নদোষ কি বয়ঃসন্ধিকালের একটি লক্ষণ?
হ্যাঁ, অনেক সময় বয়ঃসন্ধিকালের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এটি যৌন পরিপক্বতার অংশ হিসেবে ধরা হয়।
মেয়েদের কি স্বপ্নদোষ হয়?
মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো হয় না যা আগেই বলেছি, তবে তাদেরও যৌন উত্তেজনাসম্পন্ন স্বপ্ন বা রাতে ভেজা অনুভব হতে পারে—যাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
স্বপ্নদোষ কি কামনা বাসনা বেশি থাকলে হয়?
হ্যাঁ, অতিরিক্ত কামনা-বাসনা বা যৌন চিন্তা-ভাবনা করলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয় এবং ঘুমের মধ্যেও হতে পারে।
স্বপ্নদোষ কি বন্ধ করলে শরীরের ক্ষতি হয়?
না,ইহা বন্ধ করলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে।
প্রতিরাতে স্বপ্নদোষ হলে কি করা উচিত?
প্রতিদিন বা খুব ঘন ঘন হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি হরমোন বা স্নায়ু সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।