কাঁকরোল খাওয়ার উপকারিতা কি ?

 আমরা প্রতিনিয়ত কতই না সবজি খাই । সবজি ছাড়া আমাদের একটি দিনও চলে না । আমরা যে সকল সবজি খাই তাই কিছু না কিছু উপকারে আসে । ঠিক এমনই এক সবজি নিয়ে আলোচনা করব আজকে । আর সেটি হল কাঁকরোল। কে না চেনে এই সবজিকে ? 


Spiny gourd




কাঁকরোল (Trichosanthes dioica), যাকে অনেক স্থানে ছোটো উচ্ছে বা স্পাইনি গার্ডও বলা হয় ।গ্রামবাংলার অনেক পরিবারের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় একটি পরিচিত নাম।





বর্ষা মৌসুমের এই রঙিন সবজিটিতে অনেক পুষ্টি বিদ্যমান। খেতেও সুস্বাদু। কাঁকরোল ভাজা হলে তো কোন কথাই নাই । আমার কাছে খুবই প্রিয় । আর এই সবজিটিতে আছে অনেক স্বাস্থ্যগত উপকার । আপনি কি পছন্দ করেন ? জানেন কি এতে কি কি গুণ রয়েছে ? না জানলে জেনে নিন 'কাঁকরোল খাওয়ার উপকারিতা '। যদি রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে খাদ্য তালিকায় রাখুন। 



কাঁকরোল খাওয়ার উপকারিতা কি কি ? 




আসুন এবার তা জেনে নিই ।





কাঁকরোল একটি পুষ্টিকর খাবার যা বিভিন্ন উপকারিতা দিতে পারে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো:





ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ: কাঁকরোল ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ও ফোলিক এসিডে ধারণ করা থাকে, যা শরীরের সামান্য পরিমাণে দরকারী।




প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম উৎপাদনে সাহায্য: কাঁকরোলে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম থাকায়, এটি হাড়-মাংসপেশিতে সুস্থ ও বলিষ্ঠ হাড় তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধিতে এবং বয়স্কদের হাড় শক্ত রাখতে কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ অনেক কার্যকর। 





এনটিআকসিড ও এন্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণ: কাঁকরোলে বিভিন্ন প্রকারের এনটিআকসিড এবং এন্টিইনফ্ল্যামেটরি উপস্থিত থাকায়, এটি পেটের সমস্যা দূর করতে এবং শরীরের অসুস্থ অবস্থা দূর করতে সাহায্য করতে পারে ।




অ্যানিমিয়া দূর করে : আগে বলেছি কাঁকরোল ভিটামিন সি ও ফোলিক এসিড বিদ্যমান। আর এরা কি করে জানেন ? এরা শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় । আর এজন্য যদি কাঁকরোল খান তাহলে অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পেতে পারবেন । 






এনটিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: এই সবজিতে বিভিন্ন এনটিঅক্সিডেন্ট থাকায়, এটি শরীরের ক্যান্সার রোগ ও অন্যান্য অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এটা ত্বকের যত্নে উপকারী


এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের কোষগুলোকে সজীব রাখে এবং অকালে বয়সের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং ব্রণ বা অন্যান্য সমস্যা কমে।






কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্যকারী: কাঁকরোল এর আরও একটি উপকারিতা হল এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।


এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।





প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধক:


কাঁকরোলে ভিটামিন এ, সি, এবং জিঙ্কের মতো উপাদান আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) বাড়াতে সহায়তা করে। এটি শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।




 যকৃতের জন্য উপকারী:


কাঁকরোল লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি হেপাটাইটিস বা লিভার সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।





মেদ কমায় : আপনারা যারা মেদ সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য রয়েছে কাঁকরোল । মেদ কমানোর এটি একটি খাদ্য । আর আগে বলেছি এতে ভিটামিন সি রয়েছে । আর এই ভিটামিন সি মেদ কমাতে সাহায্য করে। তাই মেদ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অন্য সকল কিছু করার পাশাপাশি কাঁকরোল খাওয়ার অভ্যাস করুন । 



দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্যকারী: কাঁকরোলে পটাসিয়াম থাকায়, এটি দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।




ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:


কাঁকরোল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এটি গ্লাইসেমিক ইনডেক্সেও কম, ফলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ করে বেড়ে যায় না।





 রক্ত পরিশোধনে সহায়ক:কাঁকরোল শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে এবং রক্তকে পরিষ্কার রাখে, যা ত্বক ও দেহের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।




এছাড়াও, এটি মডিফাইড ফুড হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং পুষ্টিকর মানের জন্য উপযুক্ত হয়। তবে, সবসময় মনে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ যে, একটি সুস্থ ও ব্যালান্সড খাবার প্রণালীতে এটি একক উপাদান হয় এবং এটি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সাথে মিলতে পারে।




কাঁকরোল আমাদের অতি পরিচিত হলেও এর উপকারিতা অনেকেই জানেন না। এটি শুধুমাত্র একটি সবজি নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক ওষুধও বলা চলে। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকে এবং দেহের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া বা অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম