ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় । এটা মানুষের চিরায়ত স্বভাব । সবকিছু যে তিনি মনে রাখতে পারবেন এমনও নয় । লেখাপড়া করছেন অনেকে মনে মনে রাখতে পারেন না । আবার কেউ একটা কথা বলব তাও অনেকে মনে রাখতে পারে না । এটা হতেই পারে । আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভুলে যাওয়ার বিষয়টা একটু বেশি দেখ যায়। এটাও অস্বাভাবিক কিছু নয় ।
স্মৃতিশক্তি বা মেমোরি মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা প্রতিদিন নানা রকম তথ্য, অভিজ্ঞতা ও ঘটনা মনে রাখার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করি ।
কিন্তু বিপত্তি তখনই ঘটে যখন এটা প্রকট আকার ধারণ করে । মানে চিরায়ত স্বভাব থেকেও বেশি । সেটা যেকোন বয়সেই হতে পারে । তরুণ বয়সে, কিশোর বয়সে,যুবক বয়সে এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও । ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এমন অনেক আছে কিছুক্ষণ হল একটা টপিক পড়ল সেটা তার একটু পড়েই আর বলতে পারবে না । এরকম হলে কেমন লাগে তখন ?
এই যে ভুলে যাওয়া পরিস্থিতি,আর এভাবে চলতে থাকলে জীবন বিপন্ন হয়ে যায় । যত অশান্তি লাগে । তাহলে এই মুহূর্তে কি করা যায় ? কোন উপায় আছে কি ? অবশ্যই আছে । স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা হয় । কিন্তু তার পাশাপাশি আপনাকে খাবার খেতে হবে অর্থাৎ 'স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার' ।
তাহলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার কোনগুলো ?
আসুন এবার তা জেনে নেয়া যাক ।
মাছ: মাছে ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড থাকে, যা মাইন্ডের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।
কালো চাল: ভিটামিন B এবং ফোলেট রোধে কাজ করে, যা মেমোরি এবং কনসেনট্রেশন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ব্রকলি: এটি অ্যান্টিওক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন K এর একটি ভাল উৎস, যা মেমোরি এবং ব্রেইন ফাংশন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ডার্ক চকোলেট: এটি মাইন্ড এবং মোড বাড়ানোর জন্য পজিটিভ প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্লুবেরি: ব্লুবেরির মধ্যে অনেক অ্যান্টিওক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন C থাকে, যা মাইন্ড এবং ব্রেইন হেলথে উপকারী হতে পারে।
ওটসমীল: ওটসমীল এ ব্রান ও অন্যান্য পোষক উপাদান থাকে, যা মাইন্ড এবং মেমোরি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
লুকি: লুকি ফোলেট এবং ভিটামিন C এর একটি ভাল উৎস, যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
বেটা-কারটিন: গাজরে বেটা-কারটিন থাকে, যা মাইন্ড স্বাস্থ্যে সাহায্য করতে পারে।
পোমেগ্রেনেট: এটি অনেক অ্যান্টিওক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন C ধারণ করে, যা মাইন্ড এবং ব্রেইন হেলথ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
কুমড়ার বীজ: কুমড়ার বীজ থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় । আপনি কিছু কুমড়ার বীজ খাওয়ার জন্য নিন । এতে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করবে ।
ডিম: ডিমের আছে নানা উপকার ।ডিমের কুসুমে কোলিন নামক পুষ্টি উপাদান থাকে । আর স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
পালংশাক: শাকের মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু একটি হল এই পালং শাক । আছে নানান উপকার । এতে রয়েছে ভিটামিন-ই । স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এটি ।
টমেটো : টমেটোতে থাকে লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । কোষে যে রেডিকল ক্ষয় হয় তার বিরুদ্ধে কাজ করে এই সবজিটি । আর এর ফলেই স্মৃতিভ্রংশ কমে । তাই খাদ্য তালিকায় রাখুন।
বাদাম: স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বাদাম খেতে পারেন । বাদামে থাকে ভিটামিন ই । তাই দিনের যে কোন এক বেলায় বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন ।
এই খাদ্যগুলো একটি ব্যালান্সড এবং পুর্ণসংক্রান্ত খাদ্যপ্রণালীর অংশ হিসেবে উপভোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল এবং ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের উপর মনোনিবেশ করতে ভুলবেন না।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা কোনো ম্যাজিক নয়, এটি ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত চর্চা—সবকিছু মিলিয়েই একজন ব্যক্তি দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করতে পারেন। সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে রাখতে পারেন সুস্থ, সতেজ ও প্রখর।