পৃথিবীতে এমন অনেক লোক আছে যারা নিজেদের ওজন নিয়ে সচেতন থাকেন । ওজন বাড়ল না কমে গেল তাই নিয়ে তারা সচেতন থাকেন। নিজের মত ফিট থাকতে চান তারা । তবে প্রতিটি মানুষের আদর্শ ওজন থাকা জরুরি। অতিরিক্ত ওজন যেমন ভালো নয়, স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন থাকাও ঠিক নয়। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সব সময় অনেকেই বিভ্রান্ত এবং ব্যতিব্যস্ত থাকেন। ওজন কমিয়ে ঝরঝরে থাকতে চান বেশিরভাগই। ওজন কমানো যেমন কষ্টকর ঠিক তেমনি ভাবে ওজন বাড়ানো একটু কঠিন। ওজন বাড়াতে চাইলে হতাশায় না ভুগে সমাধান নিন ।
ওজন বাড়াতে কি করবেন:
১.শর্করাজাতীয় খাবার: অনেকেই শর্করা জাতীয় খাবার একেবারে গ্রহণ করেন না । এটা ঠিক না। যাঁদের ওজন কম, তাঁদের অবশ্যই মোট ক্যালরির শতকরা ৫০-৬০ ভাগ শর্করা গ্রহণ করতে হবে । এ ধরনের খাবারের মধ্যে আটা, চাল, পাস্তা অন্যতম।
২. উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ: ওজন বাড়াতে চাইলে অবশ্যই খাদ্যতালিকায় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখতে হবে। এ ধরনের কিছু খাবার হলো কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, পেস্তাবাদাম, চিনাবাদাম, খেজুর, কিসমিস, আলুবোখারা, ননিযুক্ত দুধ, ফুলক্রিম দই, পনির, ক্রিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, ছাগলের মাংস ও কলিজা, আলু, মিষ্টি আলু, চকলেট, কলা, আ্যভোকাডো, পিনাট, মাখন ইত্যাদি।
৩.আলু : আলুর খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। আলু কার্বোহাইড্রেটের খনি। এটি খুব দ্রুত ওজন বাড়াতে পারবেন ।
৪.কিশমিশ : কিশমিশ রাতে ভিজিয়ে সেটি সকালে খান। দু'তিন মাস পর্যন্ত খেতে থাকলে আপনি পার্থক্য দেখতে পাবেন।
৫.খেজুর: খেজুর দুধে ফেলে ফুটিয়ে রাতে শোয়ার আগে ভালো করে খান। খেজুর চাবিয়ে এবং দুধটুকু খেয়ে ফেলুন।
৬. আখরোট :আখরোট খুব ভাল দিক । কারণ এর মধ্যে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এটি অত্যন্ত ভাল ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
৭.পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
শরীর সুস্থ রাখতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
৮.ব্যায়াম: পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যায়াম ক্ষুধা বাড়াতে, খাবার ভালোমতো হজম করতেও সাহায্য করে।
৯.মেডিকেল চেকআপ করান:
যদি হঠাৎ ওজন কমে যায় এবং সেই সঙ্গে দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১০. জীবনযাপন: ওজন বাড়াতে চাইলে জীবনযাপন পদ্ধতিও পাল্টাতে হবে । গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা চলবে না। প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
কীভাবে বুঝবেন ওজন কমে যাওয়া বিপজ্জনক কিনা?
যদি আপনার ওজন এক মাসে ৫% বা তার বেশি হারে কমে যায় এবং সেই সঙ্গে দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, বা ঘন ঘন অসুস্থতা দেখা দেয়, তাহলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। এটি বড় কোনো অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে।
সবশেষে
ওজন কমে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এর পিছনে কোনো বড় শারীরিক কারণ আছে কিনা, তা আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, সঠিক পুষ্টি ও চিকিৎসকের পরামর্শের মাধ্যমে আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। যদি আপনি বা আপনার পরিবারের কারো ওজন হঠাৎ করে কমে যেতে থাকে, তাহলে বিষয়টি অবহেলা না করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া কি বিপদের ইঙ্গিত?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি আপনি খাদ্যাভ্যাস বা জীবনযাপনের পরিবর্তন না করে হঠাৎ ওজন কমে যেতে দেখেন, তাহলে এটি ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, বা ক্যানসারের মত রোগের লক্ষণ হতে পারে।
প্রশ্ন ২: ওজন কমে যাওয়া কি সবসময় খারাপ?
উত্তর: না, যদি এটি পরিকল্পিত ডায়েট বা ব্যায়ামের মাধ্যমে হয়, তাহলে এটি ভালোই। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে গেলে চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রশ্ন ৩: কোন বয়সে ওজন কমে যাওয়া বেশি দেখা যায়?
উত্তর: সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে বর্তমানে কম বয়সীদের মধ্যেও এই সমস্যা বাড়ছে।
প্রশ্ন ৪: ওজন বাড়ানোর জন্য কোনো ভিটামিন দরকার?
উত্তর: হ্যাঁ, ভিটামিন বি১২, ডি, এবং আয়রনের ঘাটতি থাকলে ওজন কমে যেতে পারে। তাই সঠিক পরিমাণে এই ভিটামিনসমূহ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রশ্ন ৫: ওজন কমে যাওয়ার সঙ্গে চুল পড়া বা ত্বকের সমস্যা সম্পর্কিত কি?
উত্তর: হ্যাঁ, অতিরিক্ত ওজন কমে গেলে শরীরে প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যার ফলে চুল পড়া, ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া এবং নখ ভঙ্গুর হওয়ার সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন ৬: ওজন কমে গেলে ক্লান্তি বা দুর্বলতা কেন হয়?
উত্তর: শরীর পর্যাপ্ত শক্তি না পেলে বা পুষ্টির ঘাটতি হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, ফলে ক্লান্তিভাব, মাথা ঘোরা ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
প্রশ্ন ৭: শরীরের কোন অংশ থেকে ওজন আগে কমে?
উত্তর: এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়, তবে সাধারণত পেট, মুখ ও বাহুর চর্বি আগে কমে। কারও কারও ক্ষেত্রে মুখে বা ঘাড়ে পরিবর্তন আগে ধরা পড়ে।
প্রশ্ন ৮: ওজন কমানো আর ওজন কমে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ওজন কমানো মানে ইচ্ছাকৃতভাবে ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন হ্রাস করা। আর ওজন কমে যাওয়া মানে অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন হ্রাস, যা কোনও স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
প্রশ্ন ৯: শুধু খাওয়া বাড়ালেই কি ওজন বাড়ে?
উত্তর: না, শুধু খাওয়া বাড়ানো যথেষ্ট নয়। সঠিক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া শুধুমাত্র অতিরিক্ত খাবার খেলে হজমে সমস্যা, গ্যাস বা পেটের সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন ১০: শিশুরা যদি ওজন হারায় তাহলে কি করতে হবে?
উত্তর: শিশুদের ওজন কমে গেলে তা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পুষ্টিকর খাদ্য পরিকল্পনা করতে হবে এবং সংক্রমণ বা পুষ্টিহীনতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রশ্ন ১১: কোভিড-পরবর্তী ওজন কমে যাওয়া কীভাবে সামলানো যায়?
উত্তর: অনেকের কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর ক্ষুধামান্দ্য ও ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা গেছে। এ অবস্থায় হালকা ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার এবং ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট কার্যকর হতে পারে।
প্রশ্ন ১২: ওজন কমে যাওয়া ঠেকাতে হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা কি সহায়ক?
উত্তর: কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি সহায়ক হতে পারে, তবে সেগুলি গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ১৩: ওজন কমে গেলে কি মানসিক সমস্যা দেখা দেয়?
উত্তর: হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ধরে ওজন কমে গেলে শরীরে হরমোন ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতে পারে, যা উদ্বেগ, মনমরা ভাব বা বিষণ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রশ্ন ১৪: কোন লক্ষণগুলো দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
উত্তর: নিচের যেকোনো লক্ষণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া
তীব্র ক্লান্তি
ক্ষুধা কমে যাওয়া
জ্বর বা ঘাম হওয়া
রক্তশূন্যতা বা দুর্বলতা