আপনার জরায়ু থেকে কি রক্ত পড়ছে ? হ্যা, আপু আপনাকেই বলছি । আজকের এই লেখাটি আপনাদের তথা মেয়েদের জন্যে । যদি এমনটি হয়েই থাকে তবে জেনে নিন ,কি করবেন ।প্রতি মাসে তিন থেকে সাত দিন জরায়ু থেকে মোটামুটি পরিমাণে রক্তনিঃসরণ হয়, যাকে বলা হয় ঋতুস্রাব বা মেনস্ট্রয়েশন। একজন মেয়ে যখন সুস্থ থাকে, তখন দেখা যায়, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। জরায়ু থেকে পাঁচ-সাত দিন পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হবে। ৫০ থেকে ৮০ মিলিলিটার হয়। অল্প ব্যথা হতে পারে। একে বলে স্বাভাবিক রক্তপাত ।
এই স্বাভাবিক রক্তপাতে যদি অস্বাভাবিক কিছু দেখা যায়, তাকে সাধারণত আমরা অ্যাবনরমাল ইউটেরাইন ব্লিডিং বলি। যেমন কারো ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রে যদি অনেক রক্ত যায়, ৫০ থেকে ৮০ মিলিলিটারের বেশি যদি যায়, তাহলে সেটি অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
জরায়ুতে রক্তক্ষরণ দুই ধরনের।
১.স্বাভাবিক ও
২.অস্বাভাবিক
জরায়ু থেকে রক্ত পড়ার লক্ষণ গুলো কি কি ?
লক্ষণ:যোনিপথে রক্তপাত ঘটতে পারে এমন কিছু সাধারণ লক্ষণ নীচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
1. জ্বর, তীব্র পিঠের নীচের দিকে ব্যথা, এবং বমি বমি ভাব যোনি থেকে রক্তপাতের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণ এবং এটি একটি প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে।
2. কিছু ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় জটিলতাও লক্ষ্য লক্ষ্য করা যায়।
3. যৌন মিলনের সময় ব্যথা হওয়াও একটি উপসর্গ হতে পারে।
4. শ্রোণিদেশে খিঁচুনি ব্যাথা, বিরক্তি ভাব, এবং মাসিকের সময় শরীরে জলের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া ।
5. মাসিক চক্র ছাড়াও রক্তের দাগ লাগা, অস্বাভাবিক যোনি স্রাব, এবং প্রস্রাব করার সময় ব্যথা।
জরায়ু থেকে রক্ত পড়ার সাধারণ কারণগুলো কি কি ?
অস্বাভাবিক জরায়ু থেকে রক্তপাতের কারণসমূহ
১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: মেয়েদের দেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে জরায়ু থেকে রক্তপাত দেখা দিতে পারে।
২. পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): এই অবস্থা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অনিয়মিত রক্তপাত ঘটায়।
৩. ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার: জরায়ুর ভিতরে থাকা অ-ঘাতক টিউমারও রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
৪. ইনফেকশন বা প্রদাহ: জরায়ুর সংক্রমণ বা ইনফ্লামেশনও জরায়ু থেকে রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে।
৫. গর্ভধারণজনিত জটিলতা: গর্ভপাত, অ্যাক্টোপিক প্রেগনেন্সি ইত্যাদি থেকেও রক্তপাত হতে পারে।
৬. ক্যান্সার বা প্রিক্যান্সারাস অবস্থা: জরায়ু বা সার্ভিক্স ক্যান্সার রক্তপাতের অন্যতম গুরুতর কারণ হতে পারে।
হরমোন এবং জননতন্ত্রের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের অসুবিধা ছাড়া শরীরের আরো বিভিন্ন অঙ্গ এ ধরনের অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণে ভূমিকা রাখে, যেমন : থাইরয়েড অথবা পিটুইটারি গস্ন্যান্ডের বিভিন্ন রোগ, হার্ট ফেইলিওর, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি
জরায়ু থেকে রক্ত পড়লে তার চিকিৎসা কি হবে ?
যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় শারীরবৃত্তিক কারণেই অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তবে চিকিৎসাও সেভাবেই করা উচিত। পলিপ, ফাইব্রয়েড, রিটেইনড পস্ন্যাসেন্টা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মেনোপজের সময় বা পরে যদি এমন অবস্থা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেয়াই উত্তম। সে ক্ষেত্রে কোনোরকম দ্বিধা করা উচিত নয়। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অপারেশন সম্ভব না। তখন রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব।
এইজন্যই বলি অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণকে অবহেলা নয় । যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হউন ।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
যদি জরায়ু থেকে রক্তপাত অতিরিক্ত হয়, অনিয়মিত হয় বা রক্তপাতের সঙ্গে ব্যথা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ইত্যাদি উপসর্গ থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি আপনি মেনোপজের পরে রক্তপাত অনুভব করেন, তা হলে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
মাসিক চক্র নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
বার্ষিক গাইনোকোলজিক চেকআপ করান
প্রতিকার বা প্রতিরোধের চেয়ে আগেভাগে সমস্যা শনাক্ত করে চিকিৎসা গ্রহণই অধিক কার্যকর।
জরায়ু থেকে রক্তপাত – FAQ
১. প্রশ্ন: জরায়ু থেকে রক্তপাত কি সব সময় মারাত্মক কিছু নির্দেশ করে?
উত্তর: না, সব সময় নয়। অনেক সময় এটি হরমোনাল পরিবর্তন বা মানসিক চাপের কারণে হতে পারে। তবে যদি এটি নিয়মিত হয় বা অতিরিক্ত হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা প্রয়োজন।
২. প্রশ্ন: মাসিকের ১৫ দিন আগে রক্তপাত হলে কী করবেন?
উত্তর: এটি অভ্যন্তরীণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে। গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. প্রশ্ন: জরায়ু থেকে রক্তপাত হলে কী পরীক্ষা করতে হয়?
উত্তর: আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা, হরমোন টেস্ট এবং প্রয়োজনে বায়োপসি করা হতে পারে।
৪. প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় জরায়ু থেকে রক্তপাত হলে কী করবেন?
উত্তর: গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে কারণ এটি গর্ভপাত বা অ্যাক্টোপিক প্রেগনেন্সির লক্ষণ হতে পারে।
৫. প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদে এর চিকিৎসা সম্ভব কি?
উত্তর: কিছু ক্ষেত্রে হালকা উপসর্গের জন্য বিকল্প চিকিৎসা উপকারি হতে পারে, তবে আগে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা অনুযায়ী সঠিক নির্ণয় জরুরি।
জরায়ু থেকে রক্তপাত একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে গুরুতর স্বাস্থ্যগত কারণ। তাই এটি উপেক্ষা না করে সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং নারী স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার প্রসার ঘটলে অনেক জটিলতা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।