ভিটামিন দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ভিটামিন এই শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত। আর এই ভিটামিনের অভাবে দেহের ক্ষয়, বৃদ্ধি ব্যহত হয় । তাই ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ প্রতিটা জীবের জন্য আবশ্যকীয়। ভিটামিন এ, বি , সি , যাই বলি না কেন কোনটা থেকে কোনটার উপকারিতা কম নয় ।
ভিটামিন কত রকমের হয় তা কিন্তু আমরা জানি । আর এসব ভিটামিন আমরা খাদ্যের এক এক উপাদান থেকে পেয়ে থাকি । সে যাই হোক আজকে ভিটামিন সি সম্পর্কে আলোচনা করছি । শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি-এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন সি-এর চাহিদা মেটাতে দোকান থেকে কিনে আনবেন ,তা কিন্তু ঠিক নয় । প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি রাখলেই দৈনিক চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
ভিটামিন সি দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট । এখন বুঝতেই পারছেন কতটা উপকারী। ভিটামিন সি এর উপকারিতা অনেকগুলো রয়েছে। এটি স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে, সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং প্রাকৃতিক অক্সিডেন্ট প্রতিরোধ করে। আপনি তাজা ফল, সবজি, পানির ফসল ইত্যাদি খাবার খেতে ভিটামিন সি প্রাপ্ত করতে পারেন।
তবে আমরা ভিটামিন সি এর উৎস ও তার থেকে কি পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায় তা জানব । ভিটামিন সি অনেক প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া যায়। তাজা ফল, সবুজ গোলাপী ফল (এমবেলিকা), লেমন, কিওয়ি, গুলাব পানি, আমলকি , ক্যাবেজ, ব্রোকলি ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন সি প্রায় সমৃদ্ধ। এছাড়াও ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট ও উপাদান দ্বারা প্রাপ্ত করা যায়, যা প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে গ্রহণ করা যেতে পারে।
এখন পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নেই।
ফল: আমলকি (৪৬৩ মিলিগ্রাম), পেয়ারা (২২৮), করমচা (১৩৫), জাম্বুরা (১০৫), আমড়া (৯২), কাগজি লেবু (৬৩), পাকা পেঁপে (৬২), কালোজাম (৬০), মাল্টা (৫৪), বরই (৫১), লেবু (৪৭), পাকা আম (৪১), কমলা (৪০), জলপাই (৩৯), আতা (৩৮), পাকা তাল (৩৫), আনারস (৩৪), লিচু (৩১), বেদানা (২৬), বাঙ্গি (২৬), তরমুজ (২৪), জামরুল(২২) ইত্যাদি।
শাক: নটেশাক (১৭৯), ধনেপাতা (১৩৫), ডাটাশাক (৮৩), গাজরপাতা (৭৯), করলাশাক (৭৮), মুলাশাক (৬৯), পুঁইশাক (৬৪), কালো কচুশাক (৬৩), ছোলাশাক (৬১), বরবটিপাতা (৫৭), পাটশাক (৫৪), মেথিশাক (৫২), লাউশাক (৪৮), সবুজ কচুশাক (৪৮), হেচিশাক (৪৩), লালশাক (৪৩), বতুয়াশাক (৪১), মিষ্টিকুমড়াশাক (৩৭), কলমিশাক (৩০), পালংশাক (৩০) ইত্যাদি।
সবজি: কাঁচামরিচ (১২৫), উচ্ছে (৯৬), করলা (৯১), কাঁচা আম (৯০), ফুলকপি (৭৩), ওলকপি (৫৩), ডাঁটা (৩৬), মিষ্টি আলু (৩৫), মুলা (৩৪), কাঁচা টমেটো (৩১), চালকুমড়া (৩১), পাকা টমেটো (২৭), পেঁয়াজকলি (২৭), মিষ্টিকুমড়া (২৬), শালগম (২৫), কাঁচা কলা (২৩), কাঁচা পেঁপে (১৯), আলু (১৯), পটল (১৯), চিচিঙ্গা (১৯), ঢেঁড়স (১৮), মুলা (১৭), কলার মোচা (১৬), বাঁধাকপি (১৬), বিট (১৫), লাল শিম (১২), পুঁই ডাঁটা (১১) ইত্যাদি।
কেন দরকার ভিটামিন সি ?
ভিটামিন সি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন, যেটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যকরী ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নিম্নলিখিত কারণগুলি কারণে ভিটামিন সি প্রয়োজন:
প্রাকৃতিক অক্সিডেন্ট প্রতিরোধ: ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অক্সিডেন্ট প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে, যা মুক্ত রেডিক্যাল নামক অক্সিজেনের ক্ষতিকারক প্রভাব বাতিল করে এবং স্বাস্থ্যকর রক্ষা করে।
ইমিউনিটি উন্নতি: ভিটামিন সি ইমিউনিটি সিস্টেমকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং রেস্পিরেটরি ইনফেকশন, ঠাণ্ডা, ফ্লু ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়াইতে মদদ করে। দেহের জন্য প্রতিদিন ৯০ মি. গ্রা. ভিটামিন সি দরকার ।
প্রাকৃতিক কোলেস্টরল কমানো: ভিটামিন সি কোলেস্টরলের স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং হৃদয়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে। অর্থাৎ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
হেমোগ্লোবিন উন্নতি: ভিটামিন সি আয়রন এবং ফোলেট স্তর উন্নত করে, যা হেমোগ্লোবিনের উৎপাদন উন্নত করে এবং এনামিয়ার জন্য উপকারী। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে ।
স্কিন স্বাস্থ্য: ভিটামিন সি স্কিনের স্বাস্থ্য উন্নত করে, কলাজেন উৎপাদন সহায়ক হয়, ঝুরি ও ব্রণের সামান্য দুর্বলতা দূর করে।
এই কারণে ভিটামিন সি খুবই জরুরি এবং বিভিন্ন খাবার মাধ্যমে এটি প্রাপ্ত করা উচিত।
সতর্কতা:
শাকসবজি উচ্চতাপ প্রয়োগ করে দীর্ঘক্ষণ ধরে রান্না করা যাবে না। যথাসম্ভব অল্প পানি ব্যবহার করুন