ব্যায়াম শরীর ও মনের জন্য যে কতটা উপকারী তা বলার মত নয় । আপনি যে ব্যায়ামই করেন না কেন তা আপনার শরীরের জন্য ভালো। তবে সবচাইতে ভালো ব্যায়াম হল সাঁতার। আপনি হাত পা নেড়ে ব্যায়াম করছেন তা থেকে এটা অনেক গুনে ভালো ।
হাত পা নাড়াতে যে অঙ্গ সমুহ নাড়াচাড়া করতে হয় , তা থেকে সাঁতারে শরীরের বেশীরভাগ অংশই নাড়াচাড়ার মধ্যে থাকে । তাহলে কোনটা ভাল ? আমি তো হাত পা নেড়ে ব্যায়াম করতে নিষেধ করছি না আপনি সবসময় সাঁতার কাটতে পারছেন না। ঐ মুহুর্তে আপনি হাত পা নেড়ে ব্যায়াম করতেই পারেন।
স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার জন্য একটি অপরিহার্য অভ্যাস এটা শুধু একটি খেলার মাধ্যম নয়, এটি শরীর ও মনের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য একটি কার্যকর ব্যায়াম হিসেবেও পরিচিত। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পানির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে শিখেছে, আর তারই একটি দারুণ অভ্যাস হলো এটি।
তবে আর একটা বিষয় না জানালেই নয় । একজন সাঁতারুর অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কর্মহীন ব্যক্তির অর্ধেক । সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদির ঝুঁকি কমে ।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: তবে দৈনিক ২০-৩০ মিনিট এতে আপনার ভবিষ্যৎ হূদেরাগের ঝুঁকি ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে দেবে। একই সঙ্গে কমাবে ক্ষতিকর চর্বি ও কোলেস্টেরল, কিন্তু বাড়াবে উপকারী চর্বি। তাই সাঁতারের উপকারিতা অনেক ।
ওজন কমায়:আপনার ওজন বেশি হয়ে থাকলে আপনি এই ব্যায়াম পারেন । সাঁতারে ওজন কমে। প্রতি ১০ মিনিট ব্রেস্ট স্ট্রোক-৬০ ক্যালরি, ব্যাক স্ট্রোক-৮০ ক্যালরি, ফ্রিস্টাইল ১০০ ক্যালরি ও বাটারফ্লাই স্ট্রোক খরচ করে ১৫০ ক্যালরি।
রোগের ক্ষেত্রে : আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কিংবা হাঁটু, পায়ের ব্যথা থাকলেও সাঁতার কাটলে দেখবেন ম্যাজিক । অনেক সময়ে এই ধরনের রোগে ব্যায়াম করতে সমস্যা হলেও সাঁতারে সাধারণত তা হয় না।
মানসিক চাপ কমায়: মানসিক চিন্তা দূর করতে এটা খুবই কার্যকর। ডিমেনশিয়া জাতীয় নানা মানসিক সমস্যায় মস্তিষ্ক ও মন ভালো রাখার অন্যতম উপায় হিসেবে সাঁতারকে বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থিতিশীলতা ও নমনীয়তা বৃদ্ধি:
শরীরকে নমনীয় করে তোলে এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন স্ট্রোক বা কৌশল যেমন: ফ্রিস্টাইল, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্টস্ট্রোক ইত্যাদি শরীরের বিভিন্ন অংশের সমন্বয় সাধন করে। ফলে স্নায়ু এবং পেশির মধ্যে সমন্বয় বাড়ে।
শিশুদের বিকাশে সহায়ক:
শিশুদের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত। এটি তাদের ফিটনেস, আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ায়। শিশুদের সাঁতার শেখালে তারা পানির ভয় কাটিয়ে উঠে এবং এটি তাদের জীবনের একটি নিরাপদ দক্ষতা হিসেবেও কাজ করে।
বয়স্কদের জন্যও নিরাপদ ব্যায়াম:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। হাঁটাচলা, দৌড় বা ভারী ব্যায়াম অনেক সময় সম্ভব হয় না। কিন্তু এটা এমন একটি ব্যায়াম যা বয়স্করাও সহজেই করতে পারেন। এটি হাড়ের ক্ষয়রোধ করে এবং ব্যথাহীনভাবে শরীরকে সচল রাখে।
ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায়:
যারা হাঁপানি বা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটা একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। পানির নিচে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাস ফুসফুসের শক্তি বাড়ায় এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
ইনজুরি থেকে পুনরুদ্ধারে সহায়ক:
এটা এমন একটি কম-ইম্প্যাক্ট এক্সারসাইজ যা ইনজুরি-পরবর্তী পুনর্বাসনে দারুণ কাজে দেয়। হাঁটু বা পিঠে ইনজুরি থাকলেও এতে শরীরকে সক্রিয় রাখা যায় এবং ব্যথা ছাড়াই ব্যায়াম করা যায়।
আত্মবিশ্বাস ও সামাজিকতা বৃদ্ধি:
যখন আপনি নতুন কিছু শিখতে পারেন,এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। তাছাড়া, সুইমিং ক্লাস বা পুলে নিয়মিত যাতায়াতের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ তৈরি হয়, যা মানসিকভাবে আপনাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।
সতর্কতা: সাঁতার এতটা উপকারী হওয়া সত্ত্বেও তার কিছু সতর্কতাও আছে । আর তা হল :
হাঁপানির কিংবা সাইনাসের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত ।
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও একই পরামর্শ থাকবে।
এতে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বক। তাই ত্বকের খেয়াল রাখুন ।
অত্যধিক ক্লান্ত থাকলে, ঠাণ্ডা লাগলে কিংবা প্রচণ্ড গরম থেকে এসেই সঙ্গে সঙ্গে পানিতে নামবেন না। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর নামুন।কেননা আপনি যদি প্রচন্ড গরম থেকে এসে পানিতে নামলে আপনার ঠান্ডা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যায়।
সাঁতার কাটার সময়ে লাইফগার্ডের নিয়মাবলি মেনে চলা শ্রেয়।
FAQ (সাঁতার কাটা সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর)
১. সাঁতার কাটা কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
হ্যাঁ, একটি উচ্চ ক্যালোরি বার্নিং ব্যায়াম। এটি নিয়মিত করলে ওজন কমানো সম্ভব।
২. প্রতিদিন কতক্ষণ সাঁতার কাটা উচিত?
শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী গড়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা বেশ উপকারী। তবে শুরুতে ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো উচিত।
৩. সাঁতার কাটা কি হাড়ের জন্য ভালো?
জয়েন্ট বা হাড়ে চাপ না পড়ে এমন ব্যায়াম হিসেবে অত্যন্ত উপকারী। এটি হাড়কে সক্রিয় ও স্বাস্থ্যবান রাখে।
৪. সাঁতার কাটা কি শিশুদের জন্য নিরাপদ?
অবশ্যই। প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী।
৫. সাঁতার কাটার জন্য কোন বয়স উপযুক্ত?
৪-৫ বছর বয়স থেকে শুরু করা যায়। তবে যে কোনো বয়সেই এটি শুরু করা যায়, যদি শারীরিকভাবে উপযুক্ত হন।
সাঁতার কাটা কেবল একটি ব্যায়াম নয়, এটি একটি জীবনধারা। স্বাস্থ্য, মন এবং সামাজিক জীবনের উন্নতির জন্য এটি একটি চমৎকার উপায়। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই সাঁতার কাটার উপকারিতা পেতে পারেন। তাই দেরি না করে আজই শুরু করুন সাঁতার কাটা – সুস্থ জীবনযাত্রার পথে এক শক্তিশালী পদক্ষেপ।