দিনে কয়টা ডিম খাওয়া উচিত ?

পুষ্টিকর খাদ্যের মধ্যে ডিম একটি । ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই পছন্দ করে । চাই সেদ্ধ হউক বা ভাজা । সারাদিন যদি কাজ শেষে যদি শুধু ডিম দিয়ে খেতে দেয়া হয় তা হলে সবাই আনন্দে খেয়ে নেবে । স্বাস্থ্যগত দিক থেকে আলোচনা করলে এটা সর্বজনবিদিত । 



how many eggs are safe to eat per day



এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার একটি অতি সাধারণ ও পুষ্টিকর উপাদান। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং ভালো চর্বি, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন—"দিনে কয়টা ডিম খাওয়া উচিত ?" এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, শারীরিক অবস্থা, কার্যকলাপের ধরন ও স্বাস্থ্যের ওপর।






ছোটবেলায় শুনতাম এক থালা ভাত খেলে যতটুকু শক্তি পাওয়া যায় ঠিক একটি ডিমে একই পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় । এটা অবশ্য গবেষণার বিষয় । সে যাই হউক ' দিনে কয়টা ডিম খাওয়া উচিত? ' - প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে । আচ্ছা এখন সেই আলোচনা যাই । 





এই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা উচিত। অর্থাৎ একটি মাঝারি আকারের ডিমে সাধারণত থাকে: 






ফ্যাট (চর্বি): একটি মাঝারি আকারের সাইজের ডিমে প্রায় ৫ গ্রাম ফ্যাট থাকে ।






প্রোটিন: ডিম একটি ভালো উৎস প্রোটিনের জন্য তা আপনার শরীরের জন্য সহায়ক, এতে শরীরে শক্তি তৈরি করে এবং সেল মেইন্টেইন করে। থাকে প্রায় ৬ গ্রাম ।






ভিটামিন ও খনিজ: ডিমে ভিটামিন এ, ডি, বি-১২, জিংক, সেলেনিয়াম এবং আয়রন অনেক পাওয়া যায়, যা শারীরিক অবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।




কোলেস্টেরল: প্রায় ১৮৬ মি.গ্রা.




অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: লুটেইন ও জেক্সানথিন (চোখের জন্য উপকারী)





কোলিন: ডিমে কোলিন থাকায় মেমোরি ফাংশন উন্নত হতে সাহায্য করতে পারে এবং স্বাস্থ্যকর মানসিক দক্ষতা বাড়াতে পারে।




এই পুষ্টিগুণগুলো শরীরের গঠন, রোগ প্রতিরোধ, এবং শক্তির জন্য অপরিহার্য।




এখন আসি সেই কথায় । 



দিনে কয়টা ডিম খাওয়া উচিত ? 




প্রোটিনের উৎস হিসেবে আমরা ডিমকে পাই । আপনি পছন্দ করেন বলে একই সাথে কয়েকটা খেয়ে ফেলেন । আপনি কি মনে করেন না যে, দিনে কয়টা ডিম খাওয়া নিরাপদ ? অন্তত এই হিসাবটা জানা উচিত । 




ডিম খাওয়ার পরিমাণটি আপনার শারীরিক অবস্থা, কাজের ধরন, এবং আপনার পৌষ্টিক প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে হতে পারে। তবে, সাধারণভাবে বলতে গেলে, একজন স্বাস্থ্যকর ব্যক্তির জন্য দিনে প্রায় ২-৩টি খাওয়া উচিত হতে পারে। এতে সমৃদ্ধ প্রোটিন, ভিটামিন, ও খনিজে ভরপুর এক খাদ্য হিসেবে পরিচিত যার পুর্বেই বলে এসেছি। 


 বিস্তারিত বলি ।‌



সাধারণ সুস্থ মানুষদের জন্য:


স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যবান একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন ১ থেকে ২টি খেতে পারেন কোনও ঝুঁকি ছাড়াই যা আগেই বলেছি। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে একটি ডিম খাওয়া হৃদরোগ বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায় না।





যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম করেন বা ব্যায়াম করেন:


জিমে যান বা কষ্টসাধ্য শারীরিক পরিশ্রম করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য দিনে ২-৩টি সম্পূর্ণ ডিম এবং বাড়তি কিছু ডিমের সাদা অংশ খাওয়া উপকারী হতে পারে। এতে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়। তবে পুষ্টিবিদ গণ বলছেন, প্রতিনিয়ত কায়িক পরিশ্রম করেন না এমন লোকদের দিনে ২ টির বেশি খাওয়া উচিত না । আবার যদি ঋতুর দিক থেকে বললে গরমের দিনে ১টি খাওয়া ভালো । 




যাঁদের হৃদরোগ বা কোলেস্টেরল সমস্যা আছে:


যদি কারও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে বা হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ডিমের কুসুম খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখা ভালো। দিনে ৩-৪টি ডিমের সাদা অংশ এবং সপ্তাহে ২-৩ দিন কুসুমসহ খাওয়া নিরাপদ বলে ধরা হয়।




ডিম ও কোলেস্টেরল: ভ্রান্ত ধারণা


অনেকেই মনে করেন, ডিম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। সত্যি বলতে, ডিমে থাকা কোলেস্টেরল শরীরের উপর অতটা প্রভাব ফেলে না যতটা ভাবা হয়। আমাদের লিভার প্রতিদিনই স্বাভাবিকভাবে কোলেস্টেরল তৈরি করে। আমরা যদি খাবার থেকে কোলেস্টেরল কম নিই, লিভার বেশি কোলেস্টেরল উৎপন্ন করে। আবার খাবার থেকে বেশি নিলে লিভার কম তৈরি করে। তাই, স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরা প্রতিদিন একটি করে খেতে পারেন চিন্তা ছাড়াই।




শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ডিম


শিশুদের জন্য ডিম অত্যন্ত উপকারী। তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন ও পুষ্টি দরকার হয়। ১-২ বছর বয়স থেকে শুরু করে প্রতিদিন আধা বা একটি করে খাওয়ানো নিরাপদ।




বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ডিম গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পেশিশক্তি রক্ষা ও দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।




ডিম খাওয়ার সঠিক সময়


ডিম খাওয়া যায় যেকোনো সময়ে, তবে সকালের নাস্তা হিসেবে খেলে সর্বোত্তম। এটি দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য।





এখন যদি বলেন কিভাবে খাওয়া ভালো ? ভাজা না সিদ্ধ ? দেখেন ডিমে চর্বি থাকে না । যদি ভাজেন তাহলে ডিমের সাথে তেলের বিষয়টাতো আছে । তাছাড়া চর্বি দেহের জন্য কতটা ক্ষতি




কর সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । তাই ভাজা থেকে সেদ্ধ করে খাওয়া অনেক উত্তম অথবা স্বাস্থ্যকর যেটাই বলেন একই । 




পরিশেষে একটি কথাই বলব ডিম একটি সস্তা, সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য। এটি নিয়মিত খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হলেও মাত্রার বাইরে গেলেই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সাধারণত সুস্থ মানুষ দিনে ১-২টি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। তবে যাদের কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়া উচিত। সবশেষে বলা যায়—"ডিম খাও, তবে বুঝে শুনে খাও।"




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম