আমাদের দেশে শিশু ও নারীদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা একটি সাধারণ রোগ । হয়তো খুঁজে দু একটি পাওয়া গেলেও যেতে পারে । তাছাড়া এই রোগটি এতটা ছোঁয়াচে নয় যে বিস্তার লাভ করবে । তবে যার আছে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করেন । এমনকি হঠাৎ করেই কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন । সে যাই হউক রক্তস্বল্পতা কি তা এবার জেনে নেই ।
রক্তস্বল্পতা কি ?
রক্তস্বল্পতা হলো দেহের একটি অবস্থা যখন রক্তে হেমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রা থেকে কম হয়ে যায়। এই রোগে শরীরে রক্ত সরবরাহ এবং অক্সিজেন পৌঁছানোর ক্ষমতা কম হয়ে যায়, যা অসুস্থতার কারণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর কারণে শারীরিক দুর্বলতা এবং অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।লৌহ,ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি -১২ ইত্যাদির অভাব হলে এ রোগ দেখা যায় ।
রক্তস্বল্পতার কোন লক্ষণ আছে কি ?
রক্তস্বল্পতা হলে কিছু সাধারণত লক্ষণ হতে পারে, যেমন:
অবসাদ এবং দুর্বলতা: এই রোগ হলে মানুষ সামান্য অবসাদ এবং দুর্বল অনুভব করতে পারে।
বুকে ব্যথা: অক্সিজেন পর্যাপ্তভাবে শরীরে পৌঁছানোর অভাবে হৃদপিন্ডে এবং অন্যান্য অংশে ব্যথা হতে পারে।
মুখে লাল-নীল হওয়া: কিছু সময় মুখে লাল-নীল হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যা হেমোগ্লোবিনের কম হওয়ার ফলাফল।
চোখে অন্ধকার দেখা: রক্তস্বল্পতা হলে রোগী যে কোন সময় চোখে দেখতে অসুবিধা হতে পারে । শুধু তাই নয় অন্ধকার দেখতে পারে ।
মাথা ব্যথা: রক্তস্বল্পতার আরও একটি লক্ষণ হল মাথা ব্যথা। মে কোন সময় হঠাৎ মাথা ব্যথা করলে সেটা রক্তস্বল্পতাজনিত নাও হতে পারে ।
মনমরা ভাব: অনেকেরই মনমরা ভাব থাকে । কিন্তু সেটা রক্তস্বল্পতাজনিত নাও হতে পারে । তবে রক্তস্বল্পতা হলে মনমরা ভাব বিষয়টি ফুটে উঠে ।
অনিদ্রা: এই রোগ হলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে । অর্থাৎ রোগী অনিদ্রায় ভোগেন।
খাওয়ার অরুচি: রক্তস্বল্পতা হলে খাওয়ায় রুচি থাকে না । কোন কিছুই তার খেতে ভালো লাগে না।
বুক ধড়ফড় করা: রক্তস্বল্পতা হলে বুক ধড়ফড় করবে ।
এই লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি বা একধরণের লক্ষণ অনুভব করলে ব্যক্তির সাথেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত এবং আবশ্যক পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
রক্তস্বল্পতার কারণ কি ?
রক্তস্বল্পতা হতে পারে অনেক কারণের জন্য, যেমন:
অল্পদোষ রক্ত: মৌলিকভাবে হেমোগ্লোবিন, লবণ, এবং অন্যান্য পুঁজিতে কম থাকলে রক্তস্বল্পতা হয়ে যায়।
রক্তপাত (Hemorrhage): অধিক রক্তপাত হলে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে এবং রক্তস্বল্পতা উৎপন্ন হতে পারে।মহিলাদের অতিরিক্ত মাসিক রক্তক্ষরণ, গ্যাস্ট্রিকের কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তক্ষরণ।
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: যেমন কিডনি রোগ, থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসার ইত্যাদি।পচনশীল খাদ্যাভ্যাস ও অপুষ্টি।
অবস্থান যোগ্যতা: কিছু রক্ত রক্তদাতাদের অবস্থান যোগ্যতা থাকতে পারে, যা রক্তস্বল্পতা উৎপন্ন করতে সহায় করতে পারে।
লৌহের পরিমান কম থাকলে : লৌহ জাতীয় খাদ্য যদি শরীরে শোষিত না হয় তবে রক্তস্বল্পতা দেখা যেতে পারে । শুধু তাই নয় বাড়ন্ত শিশু অথবা গর্ভবতী নারী যদি লৌহ জাতীয় খাবার কম খায় তাহলেও এই রোগ দেখা যেতে পারে ।
অন্ত্রে সংক্রমণ: আপনার শরীরের অন্ত্রএ জীবাণুর সংক্রমণ হলে এই রোগ দেখা যাবে । অন্ত্রে কৃমির সংক্রমণ হলেও দেখা যায়
ভিটামিন B12 ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব: এই দুইটি উপাদানও রক্ত তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তস্বল্পতা নির্ণয়:
রক্তস্বল্পতা নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়। সাধারণত CBC (Complete Blood Count) টেস্টের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা জানা যায়। যদি হিমোগ্লোবিন পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২ গ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে হয়, তবে একে রক্তস্বল্পতা বলা হয়।
রক্তস্বল্পতা দূর করবেন যেভাবে: রক্তস্বল্পতা দূর করতে হলে কতিপয় নিয়ম অনুসরণ করা দরকার । যেমন প্রথমে বলি কি কি খাবার খেতে পারেন:
লেবু: লেবু একটি ভালো উপাদান । এই রোগ দূর করতে লেবুর অনন্য । এটা শরীরে লৌহের ঘাটতি মেটায় ।
বেদানা : বেদানায় থাকা লৌহ,আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে । তাই বেদানা খাওয়ার পরামর্শ রইল ।
টমেটো: টমেটো খুব সুস্বাদু একটি সবজি । ভিটামিন সি রয়েছে এতে রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে
মধু : মধু একটি মিষ্টি জাতীয় তরল পদার্থ । রক্তস্বল্পতা দূর করতে আপনি মধুকে বেছে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ ।
কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়া: অন্ত্রে কৃমির সংক্রমণ হলে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়া ।
এছাড়াও যা করতে পারেন
রক্তস্বল্পতা দূর করতে নিচের খাবারগুলি কাছাকাছি রাখা হয়:
লোহিত খাদ্য: লোহিত খাদ্য যেমন পালংশাক, কিশমিশ, শাকসবজি ,বরবটি, মসুর ডাল, খেজুরের গুড় ইত্যাদি এই রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন সি ধারণকারী খাদ্য: লেবু তার কথা আগেই বলেছি, কমলা, আম, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি ইত্যাদি ভিটামিন সি ধারণকারী খাদ্য এই রোগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হেম ইনটেক্স খাদ্য: গোল ডাল, যকৃত, মাংস, মাছ, ডিম ইত্যাদি হেম ইনটেক্স খাদ্য রক্তস্বল্পতা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
ফোলেটিক এসিড ধারণকারী খাদ্য: ফোলেটিক এসিড ধারণকারী খাদ্য যেমন পালংশাক, স্পিনাচ, শুলক, ডিম, লিভার ইত্যাদি রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
এছাড়াও, প্রতিদিন যত্ন নেয়া গুরুত্বপূর্ণ, যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং সজীব ওয়াক্যুমেন কনটেন্ট এটি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
আর কি কি উপায় অবলম্বন করা উচিত ?
কোনও চিকিৎসার সময়ে এবং তারপরে একই সাথে কিছু উপায় অবলম্বন করা হতে পারে:
নিয়মিত যোগাযোগ ডাক্তারের সাথে: চিকিৎসা নিরীক্ষণ এবং পরামর্শের জন্য নিয়মিতভাবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা গুরুত্বপূর্ণ।
ঔষধ সঠিকভাবে অনুসরণ করা: ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতে কোনও প্রদত্ত ওষুধ সঠিকভাবে অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আয়রন সাপ্লিমেন্ট (পরামর্শক্রমে):
কখনো কখনো খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত লৌহ না এলে ডাক্তার সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। তবে এটি নিজে থেকে না খেয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত।
পূর্ণভাবে পোষণশীল আহার: প্রতিদিনে ভিন্নধরণের পোষণশীল খাদ্য যেমন ফল, সবজি, মাংস, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ: ব্যায়াম করা, প্রতি দিন নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ সব সময়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা: যদি কোনও অসুস্থতা অনুভব করেন, তাদের তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম: প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রাপ্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক স্বাস্থ্য কার্যক্রম: মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া এবং নিজেকে সুস্থ মানতে উৎসাহিত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তস্বল্পতা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্ব সহকারে বিবেচ্য স্বাস্থ্যসমস্যা। এটি যদি সময়মতো সনাক্ত করে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই সচেতনতা, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।