চলছে শীতের মৌসুম । এই শীতে সর্দি, কাশি হওয়াটাই স্বাভাবিক । শুধু যে শীত মৌসুমেই তা তো নয় । ঋতু পরিবর্তনেও দেখা যায় সর্দি কাশির অহড়হ মেলা । গরম থেকে শীত ,বা শীত থেকে গরম । সে যেটাই হউক না কেন । সেই সাথে গলা ব্যথা ফ্রি । আবার কারও কারও ক্ষেত্রে জ্বর পর্যন্ত হয়ে থাকে । অনেক উপায় খুঁজে পান না "সর্দি, কাশি হলে কি করতে হবে ? " তার মনে করেন যে এসব উপায় তো সাধারণ। এজন্য উপায় খোঁজেন । আরে ভাই সামান্য তাতে কি হয়েছে ? কাজ তো হয় ।
সর্দি-কাশি খুব সাধারণ একটি সমস্যা হলেও এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিরক্তি ও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধুলোবালির সংস্পর্শে, ঠান্ডা পানীয় গ্রহণ, কিংবা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সর্দি-কাশি হতে পারে। যদিও এটি সাধারণত গুরুতর নয়, তবে সঠিক যত্ন না নিলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সর্দি-কাশি হলে কী করা উচিত এবং কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে—তা জানা জরুরি।
সর্দি -কাশি হলে অনুভূতি কেমন হয় ?
সর্দি , কাশি হলে শরীরের অবস্থা হয় একেবারে বিরক্তিকর যা আগেই বলেছি। মাংসপেশীতে ব্যথা, মাথা ব্যথা ,চোখ জ্বালাপোড়া করা, গলা ব্যথা যার কথা আগে বলেছি , হাঁচি, কাশি,সর্দি, নাক বন্ধ হওয়া, এমনকি স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে যাওয়া ।
সর্দি কাশির লক্ষণসমূহ কি কি ?
সাধারণ সর্দি-কাশির কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
হালকা থেকে মাঝারি কাশি
গলা খুসখুস করা বা জ্বালা
নাক দিয়ে পানি পড়া বা বন্ধ থাকা
হালকা জ্বর
মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা
দুর্বলতা বা অলসতা
সর্দি কেন হয় ?
ঋতু পরিবর্তন:ঋতু পরিবর্তনে সর্দি হয় সেটা তো বুঝলাম । কিন্তু মূলত সেটা কারণ নয় । আর সেটা হল ভাইরাস। এই ভাইরাসের আক্রমণে সর্দি হয়ে থাকে । আর এই শীতের মৌসুমই হচ্ছে এই ভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার উৎকৃষ্ট সময় । এই জন্যই শীতে সর্দি, কাশিতে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
ধুলোবালি ও দূষণ: বায়ু দূষণ, ধোঁয়া ও ধুলোবালিতে এলার্জি হলে সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ে।
ঠান্ডা খাবার ও পানীয়: ঠান্ডা বা বরফমিশ্রিত খাবার গ্রহণেও অনেকের ঠান্ডা লেগে যায়। এটা সর্দির জন্য দায়ী।
সর্দি ,কাশি হলে কি করতে হবে ?
বিশ্রাম নিন: পুরো দিনে প্রয়াস করুন ভাল ঘুম পাবার জন্য। সর্দি কাশি কমানোর এই এক দারুণ উপায় ।
অ্যালার্জি বা ধুলাবালি থেকে দূরে থাকুন:যদি কারো এলার্জি থাকে তাহলে ধুলোবালি, ধোঁয়া বা ফুলের রেণু এড়িয়ে চলা উচিত। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সর্দিকাশি এড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
পর্যাপ্ত পানি পান: পর্যাপ্ত পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ যাতে শরীর সতেজ থাকে । কিন্তু ঠান্ডা পানি নয় ।
শীতকালীন ফল ও সবজি খান: শীতকালে ফল ও সবজি খেতে সাহায্য করতে পারে সর্দি এবং কাশি থেকে মুক্তি পানে।
হট শাওয়ার করুন: গরম পানির শাওয়ার সর্দি এবং কাশির লক্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হট প্যাক ব্যবহার করুন: স্থানীয়ভাবে সর্দি এবং কাশির জন্য হট প্যাক ব্যবহার করা হতে পারে।
গরম পানির উষ্ণতা নিন : গরম পানির উষ্ণতা নিন । একটি পাত্রে গরম পানি নিন এবং এই পাত্রটি ও মাথা সহ কাঁথার ভিতর মুড়িয়ে যে গরম হাওয়া বের হয় তার উষ্ণতা নিন । এটি সর্দি এবং কাশির লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
নিয়মিত নাক শোধন: নিয়মিতভাবে নাক শোধন করার মাধ্যমে নাকের সমস্যা দূর করতে পারেন। আর এতে করে নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা কমে যেতে পারে।
ডোজ সঠিকভাবে পরীক্ষা করুন: যদি কোনও ঔষধ নেয়া হয়, তা সঠিক ডোজে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ঔষধ ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা করুন।
শয্যাসুইট ব্যবহার করুন: শীতকালে শয্যাসুইট ব্যবহার করুন । রাতে করে আপনার শরীর সুবিধাজনক এবং উচ্চ তাপমাত্রায় থাকে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান: স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান । আপনার শরীরের প্রতিরোধশক্তি বাড়াতে এবং লক্ষণগুলি কমিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে ।
ধূমপান এড়িয়ে চলুন: সর্দি এবং কাশির সময়ে ধূমপান এড়িয়ে চলুন, এটি লক্ষণগুলি বাড়াতে পারে।
গরম পানি ব্যবহার করুন: গরম পানি পান করুন । এতে আপনার সাহায্য হতে পারে শক্তিশালী কাশি এবং নাক ব্যথা সহজে সামলাতে।
যত্ন নিন যাতে অন্যান্যদের সঙ্গে সংক্রমণ না হয় : হাত ধোয়া এবং বাড়তি সতর্কতা নিন যাতে সংক্রমণ হতে না পারে।
স্যানিটাইজার বা হ্যান্ড স্যানিটাইজিং জেল ব্যবহার করুন: স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন যাতে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে এবং কাশি-শ্বাসকষ্ট থেকে দূরে থাকা সহজ হয়।
পর্যাপ্ত প্রতিরোধশক্তি উন্নত করুন: সুস্থ খাবার খাওয়া এবং নিয়মিতভাবে ব্যায়াম হতে পারে আপনার প্রতিরোধশক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে।
মাস্ক পরানোর দিকে মনোনিবেশ করুন: ভাইরাস যেন না ছড়ায় সেটা নিশ্চিত করার জন্য মাস্ক পরিধান বৃদ্ধি আবশ্যক।
এরপর এগুলো অবশ্যই অর্থাৎ সর্দি কাশি কমানোর ঘরোয়া উপায়:
আদা : সর্দি, কাশির সময় আপনি যদি লবণ মিশ্রিত আদা খেতে পারে তাহলে দেখবেন আপনি আরাম পাচ্ছেন । কারণ এটা সর্দি,কাশিক কমিয়ে আনে । আপনি ইচ্ছে করলে আদার চাও খেতে পারেন । আদার চা সচরাচর চায়ের দোকানেই পাওয়া যায় । তাছাড়া আপনি বাসায় বানাতেও পারেন ।
পেঁয়াজ: পেঁয়াজের রস সেই সাথে লেবুর রস ও মধু পানির সাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ গরম করে নিন । তারপর সেবন করুন । আর দ্রুত ফলাফল নিন ।
মধু : সর্দি, কাশির একমাত্র ঔষধ বলা চলে মধুকে । আপনার বাসায় কি মধু আছে ? না থাকলে এখনি নিয়ে নিন । সকাল ,বিকাল একটু, একটু করে পান করুন।
লেবু : ঠান্ডা লাগছে ? লেবুর চা খান । সর্দি কাশি কমে যাবে । কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খান । দ্রুত ফল পাবেন।
লবঙ্গ : লবঙ্গ নাম শুনে অনেকে পিছিয়ে যাবেন । এটা কি মুখে নেয়া যায়। আরে ভাই মুখে না নেয়া গেলে কি রান্নায় ব্যবহার করা হয় ? আর এই লবঙ্গই ঠান্ডা উপশম কাজে দেয়। কিছু পানি গরম করুন আর তাতে কিছু লবঙ্গ ছেড়ে দিন। সামান্য লবণ নিয়ে গরম গরম খেয়ে নিন । উপকার পাবেন।
তুলসী পাতা: তুলসী পাতার রস ও মধু খেলে কাশি কমে। এছাড়াও তুলসী পাতা দিয়ে চা তৈরি করেও পান করা যায়।
কালোজিরা ও মধু: কালোজিরা গুঁড়া ও মধুর মিশ্রণ কাশি কমাতে সাহায্য করে। সর্দি,কাশির অনন্য এক দৃষ্টান্ত।
রসুন ও মধু: রসুন জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি ফুটিয়ে তার রস ও মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সর্দি- কাশি উপশমে দারুন কাজ করে ।
সতর্কতা:
সব সময় ঘরোয়া উপায়েই সর্দি-কাশি কমানো সম্ভব নয়। কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:
৩ দিন বা তার বেশি জ্বর থাকলে
শ্বাস নিতে কষ্ট হলে
ঘন ঘন কাশি ও বুকে ব্যথা হলে
কাশির সঙ্গে রক্ত এলে
শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে যদি দ্রুত অবনতি হয়
শেষ কথা:
সর্দি-কাশি একটি অতি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক যত্ন না নিলে এটি মারাত্মক হতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ে এবং বিশ্রাম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। তবে পরিস্থিতি গুরুতর হলে বিলম্ব না করে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।