আমাশয় হলে কী করনীয় ?

আমাশয়(dysentery )বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে একটি পরিচিত এবং সাধারণ রোগ। এটি মূলত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলে হয়। অনেক সময় এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং চিকিৎসা না করালে গুরুতর জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।


Dysentery causes and treatment




আমাশয়(dysentery )কাকে বলে ? 




আমাশয় একটি পরিচিত রোগ । যে কারোই হতে পারে ‌ । তবে একে রোগকে অবহেলা নয় । কেননা আপনাকে দুর্বল করে ফেলবে ‌ । এটি মানুষের অন্ত্রে সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে । এককথায় বলতে রক্তের সাথে ঘন ঘন পায়খানা হওয়াকে আমাশয় বলা হয় ‌। মূলত পরজীবী এর জন্য দায়ী । পানিবাহিত এই রোগটির বিরাজ কাল ৩-৭ দিন পর্যন্ত। 




আমাশয় কত প্রকার ? 





আমাশয়ের ধরনের উপর নির্ভর করে ২ ভাগ করা হয়েছে । যেমন:





১. বেসিলারি আমাশয় : এটি সিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে । এর অন্য নাম শিগেলোসিস । 





২) অ্যামিবিক আমাশয়: অ্যামিবা নামটি শুনেছেন অনেকেই । এটা এই রোগের এর জন্য দায়ী। তুলনামূলক বেশি দিন স্থায়ী হয় । 




এছাড়াও আরও এক ধরনের আমাশয় রয়েছে আর তা হল দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় । এটি উপরে উল্লেখিত দুই ধরনের আমাশয় থেকে বেশি দিন স্থায়ী থাকে । এই আমাশয়ের ক্ষেত্রে মলদ্বার ফাঁক হয়ে থাকতে দেখা যায়। তাহলে 'আমাশয় হলে কী করনীয়' ? এ বিষয়ে যাওয়ার আগে আপনাকে বুঝতে হবে কি কি কারণেএই রোগ হয়ে থাকে ? তাহলে চলুন জেনে নিই কারণগুলো কি কি ? 




আমাশয়ের কারণ কি ? 




কারণ সমুহ : আমাশয় হওয়ার কারণগুলো নিম্নরূপ



সংক্রমণ: এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে । আর ব্যাকটেরিয়া কেন দেখা যায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।‌ যেমন: ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ (যেমন শিগেলা, সালমোনেলা)




প্রোটোজোয়া সংক্রমণ (যেমন আমিবা) ।




দূষিত খাবার: স্বাস্থ্যকর খাবার দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আর যদি সেটা দূষিত হয় তাহলে দেহে নানা ধরনের রোগ দেখা যায়। তারমধ্যে এই রোগ একটা । 





দূষিত পানি: পানি আমাদের দেহের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি । তবে যদি পানি দূষিত হয় তাহলে এই রোগ সহ অন্যান্য রোগ দেখা যায়





অর্থাৎ পানি বা খাবারের সংস্পর্শে আমাশয়ের জীবাণু আসলে তা দূষিত হয়ে যায়। আর এটা অন্য কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে ঐ ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারেন ।‌




আমাশয়ের কোন লক্ষণ আছে কি ? 





কিছু লক্ষণ তো আছে বৈকি। কারো ক্ষেত্রে ৫ দিন আবার কারো ক্ষেত্রে ৫ বা ততোধিক দিন ধরে থাকে । হালকা থেকে মাঝারি তারপর গুরুতর। এতে বিষয়গুলো পরিলক্ষিত হয়।




পেট ফোলা: সচরাচর অনেকেরই কোন‌ না কোন কারণে পেট ফুলে থাকে । সেটা হতে পারে বদহজম । তবে এটাকে আমাশয়ের একটা লক্ষণ বলে ধরা হয় । 




 পেট ব্যথা: সেটা ব্যথা একটি লক্ষণ আমাশয়ের । তবে পেট ব্যথা হলেই যে তখন আমাশয় হবে তা তো নয় । এটা সব লক্ষণগুলোর সাথে ঘটে । 




রক্ত সহ ডায়রিয়া: রক্ত সহ ডায়রিয়া একটা মারাত্মক লক্ষণ । আমাশয়ের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।





বমি বমি ভাব: আমাশয়ের অন্যতম একটি লক্ষণ বমি বমি ভাব । এমন অবস্থায় বমি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে ।




হজমে সমস্যা: বিশেষ করে দুগ্ধজাত দ্রব্য হজম না হওয়া। তবে সব খাদ্যের ক্ষেত্রে নয় । 




জ্বর : বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে । 





আমাশয় হলে কী করনীয় ? 




আমাশয় হলে আপনাকে যা করতে হবে




চিকিৎসকের শরণাপন্ন: নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন । চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা বিপজ্জনক হতে পারে।


 স্যালাইনের প্রয়োজন হতে পারে । আর প্রেস্ক্রাইব করা ঔষধ সেবন করুন।সেই সাথে বিশ্রাম নিতে হবে । 





খাবার: স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে । এক্ষেত্রে কি কি খাবেন তা নিম্নরূপ





থানকুনি পাতা: গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতা অহরহ দেখা যায়। আমাশয় ভালো হওয়ার জন্য থানকুনি পাতা কাজে দেয়।‌ সকালে খালি পেটে খাবেন । 




ডালিমের খোসা: ডালিমের খোসা আমরা অনেকে ফেলে দেই । কিন্তু এটা রোগটি দূর করতে কাজে লাগে । শুকনো বা কাঁচা যেভাবেই হউক খেতে পারে ,চুর্নও করে নিতে পারেন। সঙ্গে যদি মধু হয় আরো ভালো ।‌




 তরল খাবার: আমাশয়ের জন্য তরল খাবার অত্যন্ত কার্যকরী । শরবত তার একটি । সবথেকে উৎকৃষ্ট ডাবের পানি ।‌ ফলের রস অত্যন্ত কার্যকর একটি উপাদান। 




এই সময়ে ঝাল, ভাজা বা চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। পরিবর্তে খেতে পারেন:




খিচুড়ি




সাদা ভাত ও ডাল




সেদ্ধ আলু




কলা




টোস্ট বিস্কুট




বিশ্রাম নিন:দীর্ঘস্থায়ী পাতলা পায়খানা শরীর দুর্বল করে ফেলে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম আপনার শরীরকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।





প্রতিরোধ: চিকিৎসার পাশাপাশি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা থাকলে এই রোগ দূর করতে সহায়ক হবে । 





পানি পান : অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে । পর্যাপ্ত পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করুন


আমাশয়ে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। তাই প্রথম ও প্রধান কাজ হলো ডিহাইড্রেশন রোধ করা। প্রতি পাতলা পায়খানার পরে এক গ্লাস ওরস্যালাইন পান করুন। চাইলে ঘরে তৈরি লবণ-চিনির মিশ্রণও গ্রহণ করতে পারেন (১ লিটার পানিতে ১ চা চামচ লবণ ও ৬ চা চামচ চিনি)।





 শাকসবজি, ফলমূল ধৌত: রান্না করার আগে শাকসবজি ধৌত করতে হবে । আর ফলমূল খাওয়ার আগে অবশ্যই অবশ্যই ভাল করে ধৌত করে খাবেন ।





 হাত ধোয়া: মল ত্যাগ করার পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করে নিন । কেননা এক্ষেত্রে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আবার খাওয়ার আগেও ধৌত করে নিন । ব্যবহৃত থালা বাসন ভালোভাবে ধৌত করে নিন।





স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার: এই রোগ প্রতিরোধ স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারের কোন বিকল্প নাই । তাই স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করুন । 




কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি ?



নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন:




৩ দিনের বেশি সময় ধরে পাতলা পায়খানা




পায়খানায় অতিরিক্ত রক্ত




অতিরিক্ত দুর্বলতা বা জ্ঞান হারানো




শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে দ্রুত পানি শূন্যতা




আমাশয় একটি পরিচিত সমস্যা হলেও সঠিক পরিচর্যা ও সচেতনতায় এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শুরুতেই করণীয়গুলো অনুসরণ করলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তাই, এই রোগ হলে করণীয় বিষয়টি জানা থাকা অত্যন্ত রুরি। নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষা করুন সচেতন হয়ে।





আমাশয় আর ডায়রিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী ?


উত্তর: ডায়রিয়াতে সাধারণত পাতলা পায়খানা হয়, তবে আমাশয়ে পায়খানার সঙ্গে রক্ত বা মিউকাস থাকতে পারে এবং পেটব্যথা বেশি হয়। আমাশয় সাধারণত একটি ইনফেকশনজনিত রোগ।






আমাশয় হলে ওরস্যালাইন কতোবার খেতে হবে ?


উত্তর: প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে ১ গ্লাস ওরস্যালাইন খাওয়া উচিত। এতে শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় থাকে।






কোন খাবারগুলো আমাশয়ে খাওয়া উচিত নয় ?


উত্তর: দুধ, ঝাল, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত মসলা দেওয়া খাবার এবং রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।






ঘরোয়া উপায়ে আমাশয় ভালো করা যায় কি ?


উত্তর: হালকা আমশয় ঘরোয়া উপায়ে যেমন সেদ্ধ খাবার, ওরস্যালাইন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।






শিশুদের আমাশয় হলে কী করণীয় ?


উত্তর: শিশুদের ওরস্যালাইন ও জিঙ্ক ট্যাবলেট দেওয়া উচিত এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বুকের দুধ চললে তা চালিয়ে যেতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম