আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনি সুস্থ না অসুস্থ ? লক্ষণ দেখে জেনে নিন ।

 চিন্তা করে কখনো দেখেছেন কি আপনি সুস্থ কি না ? বাহ্যিকভাবে আপনাকে দেখে সুস্থ মনে হলেও আপনি কিন্তু অসুস্থ হতে পারেন ।এটা কিন্তু আপনি নিজেই ভালো করে জানেন ।মানবদেহ একটি জটিল কাঠামো। কখন আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং কখন আপনার শরীরে কোনো অসুস্থতা বাসা বেঁধেছে – তা সবসময় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। অনেক সময় অসুস্থতা নিঃশব্দে শরীরে প্রবেশ করে, ধীরে ধীরে লক্ষণ প্রকাশ করে। 



signs of illness in body.





সুস্থতা আমাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার এক নিয়ামত । যে লোক অসুস্থ সে কিন্তু তার কষ্টটা ঠিকই বুঝে। আমরা কেউ সুস্থ থাকি আবার কখনো অসুস্থ হয়ে যাই। তবে সেই অসুস্থতা ভালো হলে তো কথাই নেই । আর ভালো না হয় সেটা কিন্তু দীর্ঘ দিন পর্যন্ত কেটে যায়। আবার কখনো মারাত্মক কারণ হয়ে দাঁড়ায়।








এইজন্য আপনি অসুস্থ কিনা সেটা কি লক্ষণ দেখে বুঝবেন ?আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনি সুস্থ না অসুস্থ ? লক্ষণ দেখে জেনে নিন । কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন ? সময় থাকতে জেনে নিন ।








১. শ্বাসকষ্ট : এমন অনেক লোক আছেন ছেলে হউক বা মেয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগেন । আবার অনেকে আছে তারা শ্বাসকষ্টকে অবহেলা করেন । আমি বলব সাবধান ভুলেও এ কাজ করবেন না।‌




এতে হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার একটা লক্ষণ ধরে নিতে পারেন।








২.অতিমাত্রায় ধুমপান: অতিমাত্রায় কেন বললাম ? কম করলে কি কোন সমস্যা ? প্রশ্ন আসতেই পারে । এতে মনে করিয়েন না ধুমপান একটু আধটু করলে কোন সমস্যা নেই। যতটুকু করেন ক্ষতিটা আপনি সহ আপনার পাশে যারা আছে তাদের সকলেরই হবে । এটার ক্ষতি সম্পর্কে জানে না এমন কেউ নেই।








আবার কম থেকেইতো আস্তে আস্তে অতিমাত্রায় ধূমপান শুরু হয় । আর আপনি যদি ধুমপান করেন তাহলে আপনি ধরে নিন আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি আছে । তাই আগে ভাগেই সতর্ক হউন । ডাক্তারের কাছে যান ।








৩. হার্ট দুর্বল: বিশেষ করে তাদের হার্ট দুর্বল অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যান তাদের বলছি দেরী না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ এতে ভবিষ্যতে বিপদের শঙ্কা আছে । কিভাবে হার্টকে সবল করা যায় তার জন্য পরামর্শ নিন ।








৪.কোলেস্টেরল : কোলেস্টেরল এর কারণে কি হয় সেটাতো জানেনই ধমনী ও রক্তনালিকা গুলোতে মেদ জমে গিয়ে হৃদযন্ত্রে রক্তের গমন বন্ধ করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় । এতে কি আপনি


মনে করেছেন আপনার উপকার হচ্ছে ? বরঞ্চ কোলেস্টেরলের কারণে ক্ষতিটা আপনারই হচ্ছে ।‌তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।








৫. রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন: উচ্চ রক্তচাপ,বাড়তি ওজন,ডায়বেটিস এগুলো কিন্তু শরীরে জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। মারাত্মক কষ্টদায়ক এগুলো। শরীরে বাসা বাঁধতে দেবেন না যারা এখনও সুস্থ আছেন ।




আর যাদের হয়ে গেছে তারা বছরে একবার হলেও হদযন্ত্রের পরীক্ষা করেন । কি হালচান সেটা দেখেন । চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । কি করতে হবে ? জেনে নিন । 




৬.শরীরিক শক্তি ও ক্লান্তি


সুস্থ মানুষ সাধারণত দিনের কাজকর্ম করতে পারে স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু যদি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যান, ঘুমানোর পরও সজীব বোধ না করেন, তাহলে সেটি রক্তাল্পতা, থাইরয়েড সমস্যা বা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।




লক্ষণ:




অতিরিক্ত ঘুমালেও ক্লান্ত লাগা




শারীরিক শক্তি কমে যাওয়া






৭. ত্বক ও চোখের রঙ


ত্বক ও চোখের রঙ শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিচয় দেয়। চোখ হলুদ হয়ে গেলে তা লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে (যেমন- জন্ডিস)। ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যাওয়া বা র‍্যাশ হলে অ্যালার্জি, একজিমা বা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।




লক্ষণ:




চোখের সাদা অংশে হলুদভাব




অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক




ত্বকে লালচে দাগ বা চুলকানি




৮. ঘুমের ধরণ


ঘুম আমাদের শরীরের পুনরুদ্ধারের সময়। যদি ঘুমের সমস্যা থাকে – অতিরিক্ত ঘুমানো, না ঘুমাতে পারা বা মাঝরাতে জেগে যাওয়া – তা মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হরমোনের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।




লক্ষণ:




ঘুম না আসা




অল্পতেই জেগে যাওয়া




দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব




৯. খাদ্যাভ্যাস ও হজম


সুস্থ শরীর সাধারণত খিদে পায় নিয়মমাফিক এবং খাবার হজম ভালো হয়। হঠাৎ খিদে কমে যাওয়া, অরুচি বা পেটে গ্যাস হলে তা পরিপাকতন্ত্রে কোনো গোলমালের ইঙ্গিত হতে পারে।




লক্ষণ:




হঠাৎ খাওয়ার প্রতি অনীহা




হজমে সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, বমিভাব




ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া




১০. মানসিক অবস্থা


মানসিক সুস্থতা শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা অতিরিক্ত রাগ – এসব ইঙ্গিত দেয় মনের বা স্নায়বিক কোনো সমস্যার।




লক্ষণ:




মন খারাপ থাকা




কোনো কিছুতে আগ্রহ না থাকা




অল্পতেই রেগে যাওয়া বা কান্না পেয়ে যাওয়া




১১. নিয়মিত মাথাব্যথা বা শরীরব্যথা


প্রতিদিন মাথাব্যথা হওয়া স্বাভাবিক নয়। এটি হতে পারে চোখের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রেস বা ব্রেইনের অন্য কোনো সমস্যা। তেমনি শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে বা পেশীতে ব্যথা থাকলে সেটিও রোগের ইঙ্গিত।




লক্ষণ:




প্রতিদিন মাথাব্যথা




ঘাড়, পিঠ বা হাঁটুতে ব্যথা




ব্যথার সঙ্গে জ্বর বা ফুলে যাওয়া




১২. ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া


যদি আপনি বারবার ঠান্ডা-কাশি, জ্বর বা ইনফেকশনে ভোগেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে।




লক্ষণ:




মাসে ২-৩ বার সর্দি-কাশি হওয়া




ক্ষত সহজে না শুকানো




শরীর সহজেই ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া




কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?


যদি উপরোক্ত যেকোনো লক্ষণ কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে নিজে থেকে ওষুধ না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় একটি ছোট উপসর্গ বড় কোনো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।




এই হল মোটামোটি লক্ষণগুলো । চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন ।




FAQ: প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী




প্রশ্ন ১: প্রতিদিন ক্লান্ত বোধ করা কি অসুস্থতার লক্ষণ?


উত্তর: হ্যাঁ, যদি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও আপনি নিয়মিত ক্লান্ত বোধ করেন, তা রক্তস্বল্পতা, থাইরয়েড, বা মানসিক চাপের লক্ষণ হতে পারে।




প্রশ্ন ২: খিদে না লাগা কি কোনো সমস্যা নির্দেশ করে?


উত্তর: খিদে না লাগা বা অরুচি হজমের সমস্যা, লিভার জনিত সমস্যা বা মানসিক উদ্বেগের লক্ষণ হতে পারে।




প্রশ্ন ৩: চোখ হলুদ দেখালে কী করা উচিত?


উত্তর: চোখ বা ত্বক হলুদ হয়ে গেলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা এবং লিভার ফাংশন টেস্ট করানো উচিত। এটি জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।




প্রশ্ন ৪: ঘন ঘন সর্দি হওয়া কি বিপদের কারণ?


উত্তর: হ্যাঁ, এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।




প্রশ্ন ৫: প্রতিদিন মাথাব্যথা কেন হয়?


উত্তর: এটি চোখের সমস্যা, স্ট্রেস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। ধারাবাহিকভাবে মাথাব্যথা হলে পরীক্ষা করানো উচিত।




শেষ কথা


নিজের শরীরকে বোঝার 

সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তার প্রতিক্রিয়াগুলো মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করা। সামান্য পরিবর্তনকে অবহেলা না করে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া রোগ প্রতিরোধের


 অন্যতম চাবিকাঠি। তাই আপনি সুস্থ না অসুস্থ – সেটা বুঝতে শিখুন আপনার শরীরের ভাষা থেকেই।






চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন,ভালো থাকুন।‌ ধন্যবাদ ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম