দাঁতের যত্ন কিভাবে নিতে হয় ?

 দাঁত মানুষের মুখের সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অংশ চাই সে ছেলে হউক বা মেয়ে । সুন্দরতম হাসির জন্য দাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । কোথাও বেড়াতে গেলে যদি আপনার দাঁতের অবস্থা খারাপ হয় তাহলে নিজের কাছে কতই বিরক্ত না লাগে ।‌মনখুলে হাসতে পারেন না ।এই ব্যাপারটিই ঘটে আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে। সঠিক সময়ে যত্নের অভাবে দাঁতে আক্রমণ করে রোগ-জীবাণু ও বিভিন্ন রকমের অসুখ। তখন অকালে দাঁত ও দাঁতের মাড়ি হয়ে ওঠে কালচে, ভঙ্গুর ও হলদে রংয়ের। যা খুবই বিশ্রী দেখায়। কি করবেন এই অবস্থায় ভেবে পাচ্ছেন না ?




Dental care tips teeth





দাঁতের যত্ন কেন গুরুত্বপূর্ণ?


প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার দাঁতের যত্ন কতটা জরুরি। মুখের স্বাস্থ্য অবহেলা করলে শুধু দাঁতেরই ক্ষতি হয় না, বরং পুরো শরীরেই প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, মুখের ইনফেকশন থেকে হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাই নিয়মিত ও সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া সুস্থ জীবনের অংশ।


  




দাঁতের যে সমস্যা আমাদের পোহাতে হয় :






১.অকালে দাঁত পড়া




২.দাঁতের ক্ষয় হওয়া




৩.মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া




৪.মুখে দূর্গন্ধ হওয়া




৫.ঠান্ডা পানি খেলে শিরশির করা




৬.মাড়ি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি ।








দাঁত এর জন্য বাসায় যা করবেন :






১. রাতে দাঁত ব্রাশ:প্রথমেই যেটা বলব সেটা হল প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন । এতে করে দাঁতে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারেনা। রাত ভর দাঁত সুরক্ষা থাকবে ।




২.নিয়মিত ফ্লস ব্যবহার করুন:


ব্রাশ দাঁতের ফাঁকে ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে না। তাই ফ্লস ব্যবহার করা জরুরি। এটি দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা ও জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে, যা দাঁতের যত্ন-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।




৩.কুলকুচি করা অভ্যাস করুন


খাওয়ার পরে বা দিনে অন্তত একবার মাউথওয়াশ বা লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং জীবাণু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।






৪. মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খান


চিনি দাঁতের প্রধান শত্রু। মিষ্টিজাতীয় খাবার দাঁতের ওপর ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে, যা অ্যাসিড তৈরি করে এবং দাঁত ক্ষয় করে। দাঁতের যত্ন বজায় রাখতে হলে চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় কম খাওয়া উচিত।






৫.ধূমপান ও তামাক পরিহার করুন


ধূমপান ও তামাক শুধু দাঁতের রঙই নষ্ট করে না, বরং এটি দাঁতের গোঁড়া দুর্বল করে দেয় এবং মুখগহ্বরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সুস্থ দাঁতের জন্য এগুলো বর্জন করতে হবে।




৬. আলপিন বা সেপটিন দিয়ে দাঁত খোচাবেন না






৭. তিন মাসের বেশি কোন টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই উত্তম






৮.মাড়ি অতিরিক্ত ব্যথা করলে লবণ কুসুম গরম পানি দ্বারা কুলি করুন বিশেষ করে ব্যথাযুক্ত স্থানে । এতে করে আরামবোধ করবেন ।






৯. নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার চেষ্টা করুন ।






১০. সর্বশেষ ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে যান


অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে আমাদের দাঁতে সমস্যা হচ্ছে। নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করালে ছোট সমস্যাগুলো আগে থেকেই ধরা পড়ে এবং বড় অসুবিধা এড়ানো যায়। এটি দাঁতের যত্ন-এর একটি অপরিহার্য অংশ।






দাঁতের যত্নে কিছু বাড়তি টিপস


সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই পানি পান করুন। এটি মুখের লালা নিঃসরণ বাড়িয়ে মুখের জীবাণু কমাতে সাহায্য করে।




দাঁত দিয়ে শক্ত কিছু কামড়াবেন না, যেমন বরফ বা বাদাম। এতে দাঁত ভেঙে যেতে পারে।






শিশুদের দাঁতের যত্ন


শিশুরা সাধারণত মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খায়, যা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। তাই ছোটবেলা থেকেই তাদের দাঁতের যত্ন নিতে শেখাতে হবে। দাঁত ওঠার পর থেকেই বাচ্চাদের নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়তে হবে।




বয়স্কদের দাঁতের যত্ন


বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যায়। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, দাঁতের ঝাঁকুনি এসব সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। তাই বয়সভেদে দাঁতের যত্নের পদ্ধতিও বদলাতে হয়। নরম ব্রাশ, অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ, ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এই বয়সে বেশি জরুরি।




FAQ (প্রশ্নোত্তর)




১. দিনে কয়বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত?


উত্তর: দিনে অন্তত দুবার—সকালে ও রাতে ব্রাশ করা উচিত।




২. দাঁতের যত্নে ফ্লসিং কতটা প্রয়োজনীয়?


উত্তর: ফ্লসিং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা দূর করে, যা ব্রাশ করতে গিয়ে বাদ পড়ে। তাই এটি খুবই জরুরি।




৩. দাঁতের হলদে ভাব কীভাবে দূর করা যায়?


উত্তর: নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস, ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে দাঁতের স্কেলিং করাতে পারেন।




৪. কোন বয়স থেকে দাঁতের যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত?


উত্তর: দাঁত ওঠার পর থেকেই দাঁতের যত্ন শুরু করা উচিত। শিশুদেরও দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।




৫. দাঁতের যত্নে ঘরোয়া প্রতিকার কী কী?


উত্তর: বেকিং সোডা ও লেবুর রস দিয়ে দাঁত মাজা, নারিকেল তেল দিয়ে অয়েল পুলিং ইত্যাদি ঘরোয়া উপায় হতে পারে। তবে নিয়মিত এসব ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।






দাঁতের যত্ন কিভাবে নিতে হয়—এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে প্রথমে নিজের খাদ্যাভ্যাস ও পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ছোট কিছু অভ্যাস গড়ে তুললেই দীর্ঘমেয়াদে আপনি পেতে পারেন সুস্থ, উজ্জ্বল ও মজবুত দাঁত। মনে রাখবেন, দাঁতের যত্ন শুধুমাত্র মুখের নয়, পুরো শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। তাই দাঁতের যত্নকে অবহেলা নয়, করুন নিয়মিত চর্চা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম