গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করণীয় ?

আলসার শব্দটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত । কিন্তু এর অর্থ কি আমরা জানি ? যদিও এটা একটা গ্রিক শব্দ । মুখ মুখে শুনা যায় আলসার কথাটি । আসলে আলসার অর্থ হলো 'ক্ষত' ।‌ এখন বলতে পারেন সেটা আবার কোন ক্ষত ? পুরো লেখাটি পড়ুন বুঝে যাবেন ।


Gastric ulcer




আলসার হল যেকোনো এপিথেলিয়াম বা আবরণী টিস্যুর এক ধরনের ক্ষত । আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো গ্যাস্টিক আলসার । তাহলে গ্যাস্ট্রিক আলসার কি ? গ্যাস্ট্রিক আলসার হল এই যে আবরণী টিস্যুর যে ক্ষত সেটা যদি পাকস্থলীতে হয় তবে সেটা হবে গ্যাস্ট্রিক আলসার। 






অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারনে এমন সমস্যা হয় । তাছাড়াও অন্যান্য বিষয়াদিতো আছেই । তবে কারণ সমুহ নিয়ে পরে আলোচনা করছি ‌ । তার আগে জেনে নেই গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ গুলো কি কি ।





গ্যাস্ট্রিক আলসার এর কি কি লক্ষণ রয়েছে ? 




লক্ষণ: যে বিষয়গুলো ফুটে উঠলে বুঝবেন এটা গ্যাস্ট্রিক আলসার।‌





১. পেট ব্যথা: এই আলসারের অন্যতম লক্ষণ হল পেট ব্যথা। সাধারণত এই ব্যথা সারাক্ষণ হতে থাকে । অথবা পেটের মধ্যস্থলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সবার ক্ষেত্রে ব্যথা নাও থাকতে পারে । 




২. বুক জ্বালাপোড়া করা: পেটের মধ্যস্থলে জ্বালাপোড়ার কথাতো বললাম। এছাড়াও হতে পারে বুক জ্বালাপোড়া।‌




৩. বদহজম: গ্যাস্ট্রিক আলসারের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো বদহজম।‌ আবার শুধু বদহজম হলেই যে এটা গ্যাস্ট্রিক আলসার তা নয় । 




৪. বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব হতে পারে ।‌ কিছু খান বা না খান এটা হবেই । এমনকি বমিও হতে পারে । 




৫. অতিরিক্ত অ্যাসিড প্রসার: অতিরিক্ত অ্যাসিড প্রসারের ফলে হার্টবার্ন অথবা রিগার্জিটের লক্ষণ হতে পারে।




৬. প্রচুর হাঁচি বা কাশি: অ্যাসিডের কারণে হাঁচি বা কাশি হতে পারে।




৭. পায়খানার রং পরিবর্তন: কালো রঙের পায়খানা (যদি অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ঘটে)




গ্যাস্ট্রিক আলসার এর কারণ সমুহ কি রকম ? 




গ্যাস্ট্রিক আলসারের কিছু মৌলিক কারণ রয়েছে:





হেলিকোব্যাক্টেরিয়া ইনফেকশন: হেলিকোব্যাক্টেরিয়া যা Helicobacter pylori নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। পেটের লাইনিং আক্রান্ত করতে পারে এবং এটি গ্যাস্ট্রিক আলসারের একটি মুখ্য কারণ হতে পারে।






অতিরিক্ত অ্যাসিড প্রসার: পেটের আমাশয়ে অতিরিক্ত অ্যাসিড প্রসারের ফলে লাইনিং এর ক্ষতি হতে পারে, যা আলসারে পরিণত হতে পারে।





নিজস্ব ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা: মানব ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা একটি গ্যাস্ট্রিক আলসার উৎপন্ন করতে সহায় করতে পারে।





অসুস্থ খাদ্য পদার্থের সেবন: অসুস্থ খাদ্য পদার্থের জন্য অনুকূল হতে পারে এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার উৎপন্ন হতে পারে।




তো এখন গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করণীয় ?



গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে কিছু করণীয় হতে পারে:




চিকিৎসকের পরামর্শ ‌নেয়া : প্রথমেই, এই লক্ষণগুলি অনুভব করলে সাথে সাথে চিকিৎসকে দেখান।অনেকেই সাধারণ গ্যাস্ট্রিক ভেবে অ্যান্টাসিড খেয়ে থাকেন, কিন্তু আলসার হলে বিশেষ ওষুধ এবং পরীক্ষা দরকার পড়ে। প্রয়োজন হলে গ্যাস্ট্রোস্কপি বা রক্ত পরীক্ষা করানো হতে পারে।





খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: প্রচুর পানি পান অতিরিক্ত অ্যাসিড নিষ্কাশনে সাহায্য করতে পারে।




খালি পেটে থাকা যাবে না, নিয়মিত অল্প অল্প করে খাবার খেতে হবে।




অতিরিক্ত মসলাযুক্ত, ঝাল, ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা।




চা, কফি, কোলা বা কার্বনেটেড পানীয় বর্জন করা।




খুব গরম বা খুব ঠান্ডা খাবার না খাওয়া।




রাতে ঘুমানোর আগে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়া যাবে না—খাওয়ার পর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।





প্রয়োজনে ওটিস প্রেসক্রিপশন ওষুধ নিন: আপনার ডাক্তার যদি প্রেসক্রিপশন ওষুধ পরামর্শ দেন, তাদের অনুসরণ করুন।





ধুমপান এড়িয়ে চলা: ধুমপানের কারণে শরীরের যে ক্ষতি হয় তা সকলেরই জানা । গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে ধুমপান এড়িয়ে চলা অবশ্য কর্তব্য। 




সেই সাথে অ্যালকোহল সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।




মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম সহায়ক হতে পারে।




নিয়মিত ঘুম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা জরুরি।






প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া প্রতিকার


চিকিৎসকের ওষুধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সাহায্য করতে পারে:




আলুর রস: খালি পেটে অল্প পরিমাণে কাঁচা আলুর রস উপকারী হতে পারে।




কলা: পাকা কলা পাকস্থলীর আস্তরণ রক্ষা করে ও ব্যথা কমায়।




মধু: প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ায় মধু পাকস্থলীতে উপকার করতে পারে।




নারকেলের পানি: হালকা ও সহজপাচ্য হওয়ায় এটি আরাম দেয়।




তবে মনে রাখতে হবে, ঘরোয়া প্রতিকার কখনও চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।






পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত ফলোআপ:


গ্যাস্ট্রিক আলসার সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য ওষুধ চলাকালীন ও পরে ফলোআপ করা জরুরি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলসার না সারলে বা জটিলতা তৈরি হলে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে।




কখন জরুরি চিকিৎসা নিতে হবে?


নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে:




প্রচণ্ড পেট ব্যথা




রক্ত বমি




কালো রঙের পায়খানা




দুর্বলতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া





গ্যাস্ট্রিক আলসার একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ, তবে অবহেলা করলে এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। সঠিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এটি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে গ্যাস্ট্রিক আলসার আর কোনও ভয়ের কারণ নয়।






গ্যাস্ট্রিক আলসার কি ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে?


উত্তর: বেশিরভাগ গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরীহ হলেও, দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করালে বা H. pylori সংক্রমণ থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি।





গ্যাস্ট্রিক আলসার কতদিনে ভালো হয়?


উত্তর: সাধারণত সঠিক ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক আলসার সেরে যায়।





গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য কোন পরীক্ষা করাতে হয়?


উত্তর: গ্যাস্ট্রিক আলসার নির্ণয়ের জন্য গ্যাস্ট্রোস্কপি, Urea breath test, H. pylori রক্ত পরীক্ষা বা স্টুল টেস্ট করানো যেতে পারে।






গ্যাস্ট্রিক আলসার কি পুরুষদের বেশি হয়?


উত্তর: হ্যাঁ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী পুরুষদের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঝুঁকি কিছুটা বেশি, তবে নারীরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।






 শিশুদের গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে কি?


উত্তর: হ্যাঁ, যদিও তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু শিশুদেরও গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে, বিশেষ করে যদি H. pylori সংক্রমণ থাকে।




 গ্যাস্ট্রিক আলসারের ব্যথা কখন বেশি হয়?


উত্তর: সাধারণত খালি পেটে ব্যথা বাড়ে, বিশেষ করে রাতের দিকে বা দীর্ঘ সময় কিছু না খেলে জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তি দেখা যায়।





 গ্যাস্ট্রিক আলসারে কি দুধ খাওয়া ভালো?


উত্তর: দুধ সাময়িক আরাম দিলেও অনেক ক্ষেত্রে দুধ পাকস্থলীতে এসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, তাই নিয়ন্ত্রিতভাবে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।





গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য হোমিওপ্যাথি বা ইউনানি চিকিৎসা কি কার্যকর?


উত্তর: কিছু মানুষ হোমিও বা ইউনানি চিকিৎসা গ্রহণ করেন, তবে এসব গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ ভুল চিকিৎসায় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।





 গ্যাস্ট্রিক আলসার অপারেশন কবে প্রয়োজন হয়?


উত্তর: যদি আলসার থেকে রক্তপাত, ছিদ্র বা বাধা সৃষ্টি হয় এবং ওষুধে কাজ না হয়, তখন অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম