আপনি কি নিয়মিত বাদাম খান ? বাদাম কার না পছন্দ ? আমরা সকলেই বাদাম পছন্দ করি । যেখানেই গল্প করতে বসি সেখানে বাদাম হলেতো কথাই নেই । আবার সময় কাটাতে হলেও আমরা অনেকেই বাদাম নিয়ে বসি । আপনি কি জানেন বাদামের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা কি ? এর কি গুন রয়েছে ? অথবা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কি না ? এ জাতীয় প্রশ্নের জবাব দেয়া হবে ।
আমাদের শরীরের জন্য বাদাম খুবি কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। এর পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে যেটা শরীরের জন্য উপকারী। তাহলে এতে এমন কি রয়েছে যে এটা এতই উপকারী ? জানতে ইচ্ছে করে না । ছোট একটা জিনিস এমন কি থাকতে পারে । এতে রয়েছে খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই,অ্যামাইনো এসিড সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন , ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। শুধু তাই নয় রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে।
এবার আসুন কিছু উপকারিতা জেনে নেই ।
নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। বাদাম পুষ্টিকর খাবার । নিয়মিত বাদাম খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিম্নরূপ:
১. ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমায়: আপনি যদি নিয়মিত বাদাম খান তাহলে ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম । এতে করে রক্তে শর্করার মাত্রা কম - বেশি হয় না ।
২. ওজন সম্পর্কিত তথ্য : আপনার ওজন কি বেড়ে যায় ? কিছু দিন অবসরে থাকতেই ওজন বেড়ে যাচ্ছে ? চিন্তা নেই প্রতিদিন বাদাম খাওয়া শুরু করুন আর ফলাফল দেখুন। বাদামে থাকা প্রোটিন ও ফাইবার দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরাট রাখতে সাহায্য করে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
৩. ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ: অবাক হলেও সত্যি যে বাদাম ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক । বাদামে থাকা ফলিক অ্যাসিড আর ফাইটিক অ্যাসিড এই ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বড় সড় ভূমিকা পালন করে । এছাড়াও বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালসের প্রভাব কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
৪.হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: বাদামে মোনো-আনস্যাচুরেটেড এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হার্টের জন্য ভালো। এগুলো খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন ই, হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।
৫.রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: বাদামে থাকা ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৬.মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
৭.হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: বাদামে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফসফরাস থাকে যা হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৮.ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী: বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে সজীব ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের স্বাস্থ্যও উন্নত করে।
৯.হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে: বাদামে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক।
১০.বাত ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক: বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে বাত রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
১১.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: বাদামে থাকা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
১২.হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা: বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ম্যাগনেসিয়াম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক, বিশেষত মহিলাদের মেনোপজের সময়ে এটি খুবই উপকারী।
১৩.চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং জিঙ্ক চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমায় এবং দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
১৪.পেটের চর্বি কমাতে সহায়ক: বাদামে থাকা ফ্যাট এবং প্রোটিন মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যা বিশেষভাবে পেটের চর্বি কমাতে কার্যকর হতে পারে।
১৫.ঘুমের মান উন্নত করে: বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ট্রিপটোফ্যান ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ঘুমের সমস্যা কমাতে এবং আরামের ঘুম নিশ্চিত করতে সহায়ক।
তবে, বাদামে প্রচুর ক্যালোরি থাকে, তাই অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়।
সঠিক পরিমাণে এবং নিয়মিত বাদাম খাওয়ার মাধ্যমে এই সব উপকারিতা অর্জন করা সম্ভব। তবে যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে, তাদের বাদাম খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং সম্ভব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।