জনপ্রিয় ফলের মধ্যে আম একটি । কে না পছন্দ করে আমকে।চাই কাঁচা হউক বা পাকা । কাঁচা হলে তো আমাদের পাড়ার ছোট ছেলের বা ভাবিরা মিলে কুঁচি কুঁচি করে কেটে মরিচ দিয়ে মিশ্রিত করে খুব স্বাদ করে খেয়ে থাকেন । গ্রাম্য ভাষায় এটাকে "আম ভর্তা" বলে । আমারও ভালো লাগে খেতে ।
আর পাকা হয় তাহলে দুধ আর আম একসাথে খেতে কে না পছন্দ করে। আমিও পছন্দ করি । আমার কাছে এক ধরনের স্বাদ কাজ করে । ছোট্ট সোনামণিরা পাকা আম কতই না পছন্দ করে । আর দুধ মাখা ভাত তাদের তো আরও পছন্দ।
তো যাইহোক কাঁচা আম নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হল পাকা আম নিয়ে । নিজেদের গাছের হলে তো আপনার কপাল ভালো ।কিন্তু বাজার থেকে যে আম কিনে আনছেন তাকি যাচাই করে দেখেছেন ? সেই আমে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে কি না ?
এ কথা শুনে অনেকে হয়তো বলে উঠবেন যে, আমে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করলে এমন কি হবে ? আরে ভাই দাঁড়ান । যে আমটা আপনি কিনে আনলেন তা কি গাছ পাকা ? নাকি অন্য কিছু ? মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবুন তো ? আর ক্যামিক্যাল কি শরীরের জন্য ভালো ?
জুন-জুলাই মাসে সারাদেশেই কম-বেশি আম পাওয়া যায়। তবে জুন-জুলাই মাস এলে সারাদেশ যেন আম-কাঁঠালের উৎসবে ভরে ওঠে। আমে ক্ষতিকর বিষের উপস্থিতি আছে কি-না এবং কী মাত্রায় আছে তা কি আমাদের জন্য ক্ষতিকর কি না , সে বিষয়ে আমরা জানব ।
ইথাফন বিশ্বের বহুল পরিচিত ফল পাকানাের রেজিস্ট্রার্ড কেমিক্যাল। নির্দিষ্ট মাত্রায় ফল পাকানোর কেমিকেল হিসেবেই তা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যদিও আমাদের দেশে যেভাবে ইথাফন ব্যবহার করার কথা, তা কিন্তু হচ্ছে না । এখানে আর একটা বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে কার্বাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে কেননা , এরমধ্যে বিভিন্ন অপদ্রব্যের উপস্থিতি দেখা গেছে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ কার্বাইড ফলের মধ্যে প্রবেশ করে না ঠিক কিন্তু, হিট উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা আম অথবা অন্য ফলকে পাকাতে সাহায্য করে। আর অন্যদিকে ইথাফন প্রয়ােগ করা হলেও সেটা কম সময়ের মধ্যেই অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় নির্ধারিত মাত্রার নিচে চলে আসে।
আর ফরমালিনে বিষয়টি হচ্ছে আম পাকানাের জন্য এটি কােনভাবেই দায়ী নয়। প্রাকৃতিকভাবেই আমের মধ্যে ফরমালডিহাইড থাকায় তা আমকে পাকাতে সাহায্য করে। এছাড়া বাহির থেকে ফরমালিন প্রয়ােগ করা হলেও তা আমের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। তবে ফরমালিন শোধনে চমৎকার ভূমিকা পালন করায় আমের মধ্যে পচনক্রিয়ায় সাহায্যকারী অনুজীবগুলোর উপস্থিতি কমে যাওয়ায় আমের পচনকাল দীর্ঘ হয় বলে অনেক গবেষক মত দিয়েছেন। এ নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা করে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। ফরমালিন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আর তাই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বাগানি ও ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ না দিতে পারলে অযাচিত বিভিন্ন কেমিক্যালসের ব্যবহার রয়েই যাবে।
আবার আমে পোকা ধরবে এই ভয়ে অনেকেই বালাইনাশক ব্যবহার করেন। আর এটা কতটা ক্ষতিকর ? গবেষণায় মাত্র ৮-১০% আমের মধ্যে বালাইনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার আবার শুধু ৩-৪% Maximum Residue Limit অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ সামগ্রিক হিসেবে হয়তো ১-২% আমের মধ্যে বালাইনাশকের উপস্থিতি আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
তবে এই নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। আমার মত হচ্ছে ক্যামিক্যাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা । আর এ জাতীয় ফল না খেয়ে নিজেদের গাছের আম খাওয়া অনেক ভালো ।