আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই ।এই যেমন ধরুন সর্দি, ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বাড়লে,পীতজ্বর , ইনফ্লুয়েঞ্জা, বসন্ত এরকম আরোও কত কি । কারো কাছে কি মনে হয় না যে এই রোগ গুলো কোন কারণে হয় ? আসলে এ সব রোগই ভাইরাস ঘটিত । এককথায় বলতে গেলে ঐ সব রোগ ভাইরাস এর জন্যই হয়ে থাকে ।
শুধু কি মানুষ ? পাখি, পশুর রোগও হয় এই ভাইরাস দ্বারা । গাছের রোগও ভাইরাস দ্বারা । কি চমকে উঠলেন ? খোঁজ করে দেখেন । এখন কথা হল এসব রোগ যেহেতু ভাইরাস ঘটিত তাহলে ভাইরাস কি ? তারপর না হয় দেখব ভাইরাস কে কেন বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।
ভাইরাস কি ?
ভাইরাস হল এক ধরনের অতিক্ষুদ্র সংক্রামক অণুজীব, যা জীবিত কোষে প্রবেশ করে সেখানকার জৈব প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে।
ভাইরাস কে বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় কেন ?
ভাইরাসকে বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় কারণ এর কিছু বৈশিষ্ট্য জীবিত এবং নির্জীব বস্তু উভয়ের সঙ্গেই মিলে যায়। ভাইরাস এক ধরনের সংক্রমণশীল এজেন্ট, যার নিজস্ব কোষ নেই, তবে এটি যখন একটি প্রাণী বা উদ্ভিদের কোষে প্রবেশ করে, তখন নিজস্ব পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে। এর কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলো:
১. নির্জীব অবস্থায়:
ভাইরাস একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে যেমন: কোষের বাইরে, কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া বা বিপাক প্রক্রিয়া চালায় না, এ অবস্থায় এটি শুধুমাত্র প্রোটিন ও জেনেটিক উপাদানে গঠিত থাকে। এ কারণে একে নির্জীব বস্তু হিসেবে ধরা যায়।
২. জীবিত অবস্থায়:
ভাইরাস যখন জীবিত কোষে প্রবেশ করে, তখন এটি সক্রিয় হয়ে সেই কোষের অংশ ব্যবহার করে নিজেকে পুনরুৎপাদন করে। অর্থাৎ, কোষের ভিতরে প্রবেশ করে ভাইরাস জীবের মতো আচরণ করে, কারণ এটি বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
৩. বস্তু হিসেবে ধরার কারণ:
ভাইরাস নিজে থেকে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে পারে না এবং এটি নিজের কোষে বেঁচে থাকতে পারে না। এজন্য একে কোষবিহীন সংক্রমণকারী এজেন্ট হিসেবে ধরা হয়। ভাইরাসের গঠন কেবলমাত্র প্রোটিন এবং ডিএনএ বা আরএনএ নিয়ে তৈরি, যা একটি বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৪. উপযুক্ত পরিবেশে সক্রিয়তা:
ভাইরাস একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে (যেমন প্রাণীর কোষে) সক্রিয় হয়। যখন এটি কোনো উপযুক্ত হোস্টের কোষে প্রবেশ করে, তখন এটি হোস্ট কোষের মেশিনারিকে ব্যবহার করে নিজস্ব প্রোটিন এবং জেনেটিক উপাদান তৈরি করে। এর ফলে ভাইরাসের বিস্তার ঘটে। তবে হোস্ট ছাড়া এটি দীর্ঘ সময় নির্জীব থাকে, তাই বিজ্ঞানীরা একে কখনো জীবন্ত এবং কখনো নির্জীব বস্তু হিসেবে গণ্য করেন।
৫. আণবিক গঠন:
ভাইরাসের আণবিক গঠন খুব সরল। এটি কেবলমাত্র জেনেটিক উপাদান (ডিএনএ বা আরএনএ) এবং প্রোটিন দ্বারা তৈরি। যেহেতু এটি সেলুলার কাঠামো (কোষের অন্যান্য অংশ যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি) ধারণ করে না, বিজ্ঞানীরা একে "নন-সেলুলার জীব" বা বস্তু হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে থাকেন।
৬. প্রজনন প্রক্রিয়া:
ভাইরাস নিজে থেকে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। এটি অন্য জীবের কোষ ব্যবহার করে নিজস্ব জিনগত তথ্যের অনুলিপি তৈরি করে। এই নির্ভরশীলতা জীবন্ত প্রাণীর মতো নয়। জীবন্ত প্রাণীরা নিজেদের কোষ থেকে নিজস্ব বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম, কিন্তু ভাইরাস কেবল হোস্ট কোষের মাধ্যমে এটি করতে পারে।
৭. অনুকূলিত আচরণ:
ভাইরাসের প্রজনন প্রক্রিয়া এবং আচরণ বিভিন্ন হোস্টের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এ কারণে, বিজ্ঞানীরা ভাইরাসকে কেবল একটি বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করেন, কারণ এটি হোস্টের কোষে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত সক্রিয় জীবনচক্রে প্রবেশ করে না।
এ কারণে ভাইরাসকে জীবিত ও নির্জীবের সংমিশ্রণ হিসেবে দেখা হয়, এবং একে বস্তু হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।