হঠাৎ পা মচকে গেলে কী করবেন ?

পা মচকে যাওয়া নতুন কোন ঘটনা নয় । অনেকেই এই সমস্যায় পতিত হয়েছেন ‌ । প্রচন্ড ব্যথায় ছটফট করেছেন। হাঁটতেছেন,বা কোন কিছু বহণ করছেন এমন সময় পায়ে আঘাত পেলেন । আহ, কি ব্যথা! তবে শুধু পা নয়, মচকাতে পারে হাত থেকে শুরু করে শরীরের যেকোনো স্থানের জয়েন্টই। তো আজকে পা তথা গোড়ালি মচকানো নিয়ে আলোচনা করব।‌



Ankle sprain


                               


গোড়ালি মচকানো কি?


গোড়ালি মচকে যাওয়া টিস্যু(লিগামেন্ট)এর শক্ত ব্যান্ডের আঘাত যা পায়ের হাড়কে পায়ের সাথে ঘিরে রাখে এবং সংযুক্ত করে । যখন গোড়ালির চারপাশের লিগামেন্টগুলি এই সীমানার বাইরে চলে যায়,তখন এটি মচকে যায়।মচকে যাওয়া গোড়ালিতে সাধারণত গোড়ালির বাইরের লিগামেন্টে আঘাত লাগে।








গোড়ালি মচকে যাবার কারণ?


একটি গোড়ালি মচকানো প্রায়ই ঘটে যখন পা হঠাৎ মোচড় দেয় , গোড়ালি জয়েন্টটিকে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে জোর করে।শারীরিক কার্যকলাপের সময় হঠাৎ বা অপ্রত্যাশিত নড়াচড়ার ফলে গোড়ালি ভিতরের দিকে মোচড় দিতে পারে।এর ফলে গোড়ালির চারপাশে এক বা একাধিক লিগামেন্ট প্রসারিত বা ছিঁড়ে যায়।








কী করবেন ? বিশ্রাম নিতে হবে ?


পা ফুলে গেলে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশ্রাম। যন্ত্রণা কমে গেলেও বিশ্রাম না নিয়ে হাঁটাহাঁটি, খাটাখাটুনি করলে গোড়ালির ফোলা থেকেই যাবে। তাই এ সময় অন্তত দুই থেকে তিন দিন বিশ্রাম নিন। ইদানীং ৭ থেকে ১০ দিনের বেশি বিশ্রাম দেওয়া হয় না। বরং সাপোর্ট নিয়ে শিগগিরই হাঁটাচলা শুরু করতে বলা হয়।




বরফ কীভাবে দেবেন?


পায়ের ফোলা ভাব কমাতে সবচেয়ে উপকারী বরফ। সরাসরি বরফ দেবেন না, একটা পরিষ্কার কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে সেটা দিয়ে সেঁক দেওয়াটা সঠিক উপায়। চোট পাওয়ার প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা বা ফোলা না কমা পর্যন্ত প্রতি এক-দুই ঘণ্টা অন্তর ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে আইস প্যাক লাগান। এতে ফোলা ভাব অনেকাংশে কমে যাবে।




ক্রেপ বা ব্রেস


গোড়ালির ফোলা ভাব কমাতে যেমন সাহায্য করবে আইস প্যাক, তেমনই যন্ত্রণা উপশমে কাজে আসবে ক্রেপ বা ব্রেস। চোট পাওয়ার প্রথম ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অবশ্যই ব্রেস লাগিয়ে রাখুন। এতে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে অতিরিক্ত টাইট করে ব্রেস লাগাবেন না।




পা ওপরে তুলে রাখুন




পা যত নামিয়ে বা নিচে ঝুলিয়ে রাখবেন, তত ফোলা বাড়বে। তাই দিনে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পা ওপরে তুলে রাখুন। শোয়ার সময় হার্ট লেভেলের থেকে পা উঁচুতে রাখবেন। এতে খুব দ্রুত ফোলা ভাব কমে আসবে।




কখন চিকিৎসা জরুরি?




পা মচকানোর তিন ধরনের ঘটনা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতার ভিন্নতা রয়েছে। মৃদু পা মচকানো মানে হলো কেবল জয়েন্টের চারপাশের লিগামেন্ট স্ট্রেচ হওয়া বা টান লাগা; এ জন্য তেমন কোনো চিকিৎসারও দরকার নেই। মাঝারি তীব্রতার মানে হলো লিগামেন্ট খানিকটা ছিঁড়েও গেছে এবং গোড়ালির সন্ধিও গেছে মচকে। আর তীব্র মাত্রার মানে হলো লিগামেন্ট সম্পূর্ণই ছিঁড়ে যাওয়ার সঙ্গে গোড়ালির সন্ধি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। পরের দুটির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা জরুরি।








যে ঝুঁকি রয়েছে: 


আপনার গোড়ালি মচকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় এমন কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ




খেলাধুলায় অংশগ্রহণঃ খেলার কারনে পায়ের গোড়ালি মচকে যেতে পারে।বিশেষ করে খেলাধুলায় যার জন্য লাফ দেওয়া,কাটার অ্যাকশন বা পা ঘোরা বা মোচড়ানো যেমন,বাস্কেটবল,টেনিস,ফুটবল,সকার এবং ট্রেইল দৌড়ের প্রয়োজন হয়।




অসম পৃষ্ঠতলঃ অসম পৃষ্ঠে হাঁটা বা দৌড়ানো বা মাঠের খারাপ অবস্থা গোড়ালি মচকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।




গোড়ালিতে পূর্বে আঘাতঃ একবার আপনার গোড়ালি মচকে গেলে বা অন্য ধরনের গোড়ালিতে আঘাত পেলে,আপনার আবার মচকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।




শারীরিক অবস্থা খারাপ হলেঃ গোড়ালিতে দুর্বল শক্তি বা নমনীয়তা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার সময় মচকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারেঃ




অনুপযুক্ত জুতাঃ যে জুতোগুলি সঠিকভাবে ফিট নয় বা কোনও কাজের জন্য উপযুক্ত নয়,সেইসাথে সাধারণভাবে উচ্চ হিলের জুতাগুলি গোড়ালিগুলিকে আঘাতের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম