ক্যান্সার নামটি শুনলেই আমরা আতংকে উঠি । কতটা মারাত্মক রোগ হতে পারে এটি যার হয়েছে সেই বুঝে । গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যান্সারে আক্রান্ত কাউকে না কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে । আজকের এই লেখায় আমি আপনাদের জানাব ক্যান্সার এর কারণ কি ? এর আগের লেখায় আমি,"ক্যান্সার এর লক্ষণ কি কি ?" - শিরোনামে একটি লেখা লিখেছি । সেখানে আলোচনার এক পর্যায়ে বলেছিলাম যে ,আপনি নিজেই জানেনা আপনার শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধলো কি করে ? এরকম কিছু বলেছিলাম । তাই আজকে সেই কারণ উল্লেখ করব ।
ক্যান্সার একটি জটিল রোগ যা শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিভাজনের কারণে ঘটে। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যা সাধারণত জিনগত ও পরিবেশগত প্রভাবের মিশ্রণের ফলে সৃষ্টি হয়। ক্যান্সারের কারণগুলোকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়: জিনগত (Genetic) এবং পরিবেশগত (Environmental)।
১. জিনগত কারণ (Genetic Factors):
মানুষের দেহের কোষগুলোতে থাকা ডিএনএ (DNA) তে যদি পরিবর্তন (Mutation) ঘটে, তবে তা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনগত কারণ:
পরিবর্তিত জিন (Mutated Genes): কিছু জিন যা কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোতে মিউটেশন হলে ক্যান্সার হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে টিউমার সাপ্রেসর জিন এবং অনকোজিনগুলো উল্লেখ করা যেতে পারে।
বংশগত মিউটেশন: কিছু ক্যান্সার বংশগতভাবে প্রাপ্ত হতে পারে। অর্থাৎ, বাবা-মা থেকে সন্তানের মধ্যে এই জিনগত পরিবর্তনগুলো স্থানান্তরিত হতে পারে।
২. পরিবেশগত কারণ (Environmental Factors):
পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার কিছু উপাদানও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
ধূমপান: ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলো কোষের ডিএনএতে মিউটেশন ঘটাতে পারে।
অ্যালকোহল: দীর্ঘমেয়াদে বেশি অ্যালকোহল সেবনের ফলে লিভার, মুখ, গলা ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার হতে পারে।
রেডিয়েশন: অতিরিক্ত এক্স-রে বা আল্ট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মি শরীরে প্রবেশ করলে ত্বকের ক্যান্সার (যেমন মেলানোমা) হতে পারে।
সংক্রমণ: কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। যেমন:
হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV): এই ভাইরাসটি জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণ।
৩. হরমোনাল কারণ:
কিছু হরমোন পরিবর্তনও ক্যান্সারকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন, ইস্ট্রোজেনের উচ্চ মাত্রা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এ ছাড়াও আরও অন্যান্য কারণ থাকতে পারে ।
এই সবগুলো কারণ একত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সঠিক জীবনধারা অনুসরণ করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।