হেপাটাইটিস বি (HBsAg) একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা যকৃত বা লিভার কে আক্রমণ করে । এটা কতটা মারাত্মক তা কি আপনারা জানেন ? হয়তো অনেকে একে সাধারণভাবে নিয়েছেন । কিন্তু এমনটি করবেন না । হেপাটাইটিস সংক্রান্ত একটি লেখা আমার এই ওয়েবসাইটে আছে । চাইলে সেটি দেখতে পারেন।
হেপাটাইটিস বি হলো একটি ভাইরাল ইনফেকশন রোগ যা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (Hepatitis B virus) দ্বারা সংক্রান্ত। এই রোগের মাধ্যমে লিভারে যন্ত্রণা হয় এবং এর পরিণামে অনেক সময় বাড়তি ক্ষতি হিসেবে দেখা যায় ।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, শোধ, শরীরের যেকোন দ্রবণ, সিমেন এবং ভিড়তে থাকা অন্যান্য শরীর তরল দ্রবণের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লিভারে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এর গঠন সম্পন্ন হয় এবং তা লিভার কোষে প্রবেশ করে লিভারে যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।
কি কি লক্ষণ থাকে ?
হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:
জ্বর (উচ্চ তাপমাত্রা)
শরীরে চামড়ার রঙ পীতল করে দেখা দেয়।
ব্যক্তির শরীরে ব্যথা বা স্বাদ অনুভবের হারানো মতো অবস্থা।
পেটের ব্যথা, বমি এবং পাতলা পায়খানা।
অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত অথবা ক্ষুধার্ত না হওয়া।
প্রস্রাবে রঙের পরিবর্তন বা সাদা পর্যন্ত করে যাওয়া।
সর্দি, ঘাম, কাশি, এবং সামান্য সময়ের জন্য শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া।
অবাস্তব শুষ্ক চাপ এবং চামড়ার রঙ গুঁড়িয়ে যেতে পারে।
অনিয়মিত পাতলা পায়খানা।
শরীরের অবস্থা সম্পর্কে স্নায়ুতাত্ত্বিক সমস্যা যেমন ক্ষুদামন্দা ।
হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হলে কী হয়
বি ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে লিভারকে সংক্রমণ করে। লিভার সংক্রমিত হলে এ ভাইরাসে লিভার প্রদাহ দুই ধরনের হয় । ১. স্বল্পমেয়াদি প্রদাহ (Acute Hepatitis) ২. দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ (Chronic Hepatitis).
এখন যদি নবজাতক ও শিশু এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয় তবে প্রায় ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ক্রনিক হেপাটাইটিস যাকে লিভারে স্থায়ী ইনফেকশন হিসেবে বলা হয় এটা দেখা যায় । অপরদিকে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা সংক্রমিত হলে শতকরা ১০ ভাগ ক্ষেত্রে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি দেখা যাবে ।
তবে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগীদের প্রায় ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। ফলে প্রতি ১০ জন আক্রান্ত ব্যক্তির ৯ জনই জানেন না যে তিনি HBsAg positive বা ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হয়েছন । অর্থাৎ এককথায় এটি নীরব ঘাতক । আর নীরবে লিভারের ক্ষতি করে।আবার যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে দুরারোগ্য লিভার সিরোসিস রোগ এবং অনেকের ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসারও হতে পারে। তাই সাবধান ।
কারণ: হেপাটাইটিস বি রোগের প্রধান কারণ হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের (Hepatitis B virus) সংক্রমণ। এই ভাইরাস ধীরগতিতে এক রোগীর শরীরে প্রবেশ করে এবং লিভারে যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, শরীরের যেকোন শল্য তরল (যেমন সিমেন, নিউক্লিয়াস, রক্তাল্পনের তরল ইত্যাদি), রক্ত শুন্য দ্রবণ এবং অন্যান্য তরল শরীর দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই ভাইরাস যখন একজন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে, তখন এটি তার লিভারে প্রবেশ করে এবং লিভার কোষে যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।
ছড়ায় কিভাবে ?
১. অনিরাপদ যৌনমিলন
২.আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, হাড়, কিংবা শারীরিক কোন কিছু সুস্থ ব্যক্তির শরীরে স্থানান্তর করলে ।
৩.ব্যবহৃত ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ, ব্লেড, রেজার, এমনকি টুথ ব্রাশও ব্যবহার ।
করণীয় : আপনি যে যে কারণ গুলো জেনে বুঝতে পারেন
হেপাটাইটিস বি রোগের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত করণীয় গুরুত্বপূর্ণ:
১.টিকা প্রদান: হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা প্রদান করা প্রধান উপায় যা সংক্রান্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষা করতে সহায়তা করে। আপনি হেপাটাইটিস বি টিকা প্রদানের জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরার্মশ করতে পারেন।
২.সঠিক হাত ধোয়া: হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সহজেই সংক্রমণ হতে পারে যদি আপনার রক্ত বা শরীরের অন্যান্য শরীর তরল দ্রবণ যেমন সিমেন, রক্তাল্পন ইত্যাদি অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ হয়। তাই সঠিকভাবে হাত ধুয়ে অথবা অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকা উচিত।
৩.সুরক্ষিত লিঙ্গসংক্রান্ত সম্পর্ক: হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে ।